সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৬-১৮ ২০:৩৯:০৩
এক.
লন্ডন টাওয়ার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শতাধিক মানুষের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। স্বজন আর শুভাকাঙ্খীদের আহাজারিতে গত কয়দিন লন্ডনের বাতাস ভারাক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রী থেরেছা মে , বিরোধীদল নেতা জেরেমি করবিন , লন্ডন মেয়র সাদিক খাঁন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং যথারীতি স্বজনহারাদের রুশে পড়েছেন। দুর্ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবনে মহামান্য রানীও দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। যেহেতু রাষ্ট্র পরিচালনায় রানীর ব্যাক্তিগত দায় নেই ( তিনি প্রধান মন্ত্রীর মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করেন) এবং রানীকে সবাই শ্রদ্ধা করে – ভালোবাসে, তাই রানীর আগমনে আক্রান্তু মানুষ ঋণাত্মক প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে তাঁর সাথে তাঁদের বেদনা শেয়ার করেছে। মহামান্য রানীও অসহায় মানুষের হাতে হাত রেখে বোঝাতে চেয়েছেন তিনিও একই দহনে দগ্ধ। জেরেমি করবিন এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত দাবি করেছেন এতো কিছুর পর-ও মানুষের ক্ষোভ কমেনি, স্থানীয় কাউন্সিল অফিস তাঁদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। পুলিশ যথারীতি দৈর্য ধারণ করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। সব কিছু এখনই শেষ হয়ে যায়নি, বিস্তারিত তদন্ত হবে, ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যার্থতার প্রমান পাওয়াগেলে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে পুলিশ , ফায়ারসার্ভিস, মেয়র , সরকার কেউ - ই দায় মুক্ত নয়। এখানে উল্লেখ্য, মেয়র লেবার দলীয় এবং সরকার কনজারভেটিভ দলীয় হলেও একের দায় অন্যের উপর চাপিয়ে দেবার কোনো প্রচেষ্টা একেবারেই নেই।
দুই.
একই সময়ে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে প্রায় দুইশতাধিক নারী-পুরুষ -শিশুর করুন মৃত্যু হয়। উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ৬ জন সেনা অফিসার ও জোয়ান প্রাণ হারায়। ঘটনার ভয়াবহতায় সাধারণ মানুষ হতভম্ব হলেও শাসক গুষ্টির অনুভূতিতে এতটুকু নাড়া লাগেনি। প্রধানমন্ত্রী (ভোট ছাড়া) যথারীতি তাঁর পূর্বনির্ধারিত ইউরোপ সফরে গেছেন। লন্ডনে আত্মীয়পরিবেষ্টিত হাস্যজ্বল প্রধানমন্ত্রীর চেহারা দেখে বোঝার উপায় ছিলোনা দেশে এতবড়ো একটি ঘটনা ঘটে গেছে। দেশে একজন রসিক রাষ্ট্রপতি রয়েছেন যিনি আবার হেলিকাপ্টার ছাড়া দুর্গত এলাকায় যেতে পারেননা। তিনি পাহাড় ধসে মৃত্যুর ভয়াবহতা না বোঝা অথবা হেলিকাপ্টার জোগাড় না হবার কারণে দুর্গত এলাকায় যেতে এখনো যেতে পারেননি। তবে এই ভয়াবহ মৃত্যুর জন্য যে বিরোধীদল দায়ী সেটি জানাতে ভোল করেনি সরকারের মুখপাত্র ওবায়দুল কাদের। কাগজে- কলমে একজন বিরোধীদল নেত্রী আছেন `রৌশন এরশাদ` যেহেতু তিনি নিজেই জানেন তিনি প্রকৃত পক্ষে বিরোধীদলের নেত্রী নন তাই পারতপক্ষে ঘটনা-দুর্ঘটনা কোথাও তাকে পাওয়াযায়না। মাঠের বিরোধীদল নেত্রী খালেদাজিয়াও দুর্গত মানুষদের একনজর দেখতে যাননি পাহাড়ে। তবে তিনি তার প্রতিনিধি হিসাবে পার্টির মহাসচিবকে দুর্গত এলাকায় পাঠান, যাকে ইতি পূর্বেও হওয়ার অঞ্চলে বানভাসি মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পাঠিয়েছিলেন।
তিন.
সজ্জন, সদালাপী নিরেট ভদ্রলোক মির্জা ফকরুল ইসলাম বেগম জিয়ার প্রতিনিধি হয়ে আজ গিয়েছিলেন চিটাগংয়ে। পথে তার বহর আক্রান্ত হয়েছে , সফর সঙ্গী সহ তাকেও লাঞ্চিত করা হয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। অবস্থা দৃষ্টে মনেহয় দুর্গত মানুষের দুর্গতি লাগভে দল -মত সকলে কাজ করুক সরকার নিজেই এটি চায়না।
চার.
রাজনীতির কর্দমাক্ত মাঠে কিছু মানুষ থাকে যারা কিছুটা হলেও ক্লিন রাজনীতির পরিচায়ক হয়েউঠেন। এসব মানুষ ঝিলের নোংরা পানিতে পদ্য ফুলের মতো, এদের দিকে তাকিয়ে নোংরা পরিবেশটাকেও কিছুটা সময় নির্মল মনেহয়। এরা আছে এরা থাকবে আমাদের আশার বাতিঘর হয়ে। এদের বিরোধিতা করাযায় কিন্তু বিনাশ কাম্য নয় নিজ অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই। মির্জা ফকরুল ইসলাম এমন-ই একজন অজাতশশ্রু। আজ তাঁর গায়ে হাত তোলাহলো - কাজটি কি ভালো হলো?
পাঁচ.
রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল , ভাঙচুর তো দূরেথাক আর্তের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে সজ্জন নিগৃহিত হলেন দুর্বৃত্তের হাতে। সময় পাল্টালে আজকের দুর্বৃত্ত সমাজচ্যুত হয়ে ঠিকই জন্মনিবে নূতুন দুর্বৃত্ত শ্রেণীর। তাঁদের হাতে সেদিনের সজ্জন রাজনীতিক আবার - ও অপদস্ত হবেন এটি অনুমান করতে কষ্ট হবার কথা নয়। আজকের অতিউৎসাহীরা সেদিনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন কি?