Sylhet View 24 PRINT

লিবিয়ার গাদ্দাফিকে ভুলতে পারেনি আফ্রিকার মানুষ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-২৬ ০১:৩৪:৩৬

শিমুল মাহমুদ :: লিবিয়ার এক সময়ের জনপ্রিয় নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ভুলতে পারেনি আফ্রিকার মানুষ। গাদ্দাফির জন্য আজও নীরবে অশ্রু ঝরান তারা। তারা মনে করেন, গাদ্দাফি ছিলেন আফ্রিকার হতদরিদ্র মানুষদের অন্যতম আশ্রয়স্থল। আরব বসন্তের নামে গাদ্দাফিকে হত্যার পর ফ্রান্সসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো আবার আফ্রিকার দেশে দেশে তাদের পুরনো কলোনিগুলোতে প্রভাববলয় বাড়াতে শুরু করে।

আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিতে তাদের তৎপরতা লক্ষণীয় হারে বেড়ে গেছে।  কর্নেল গাদ্দাফির মায়ের বাড়ি ছিল মালিতে। মালির কিদাল শহরে ছিল গাদ্দাফির মামার বাড়ি। এ জন্য তিনি মালির প্রতি আলাদা টান অনুভব করতেন। তিনি মালির উন্নয়নে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেন। মালির রাজধানী বামাকা শহরে গাদ্দাফির অনেক স্মৃতি রয়েছে। নাইজার নদীর দুই তীরে গড়ে উঠেছে বামাকা নগরী। বামাকার দুই অংশ দুটি সেতু দ্বারা সংযুক্ত। সেতু সংলগ্ন পাঁচতারকা হোটেলটির নামই লিবিয়া হোটেল। লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কর্নেল গাদ্দাফির পতন ও মৃত্যুর পর এটি বন্ধ হয়ে যায়।

 গাদ্দাফি বেঁচে থাকতে লিবিয়ার সঙ্গে মালির খুব সুন্দর সম্পর্ক ছিল। অনেক ব্রিজ, রাস্তাঘাট লিবিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট করে দিয়েছিলেন। মালি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ ফর্মড পুলিশ ইউনিট-২ এর কমান্ডিং অফিসার ও পুলিশ সুপার আনছার উদ্দিন খান পাঠানের মূল্যায়ন হচ্ছে, মালির শত বছরের শান্ত জনপদের পুরো পরিস্থিতি পাল্টে দেয় আরব বসন্তের ঢেউ। ২০১১ সালে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর তার বিপুল সংখ্যক ভাড়াটিয়া সৈনিক অস্ত্রের সম্ভার চুরি করে ফিরে আসে উত্তর মালির পূর্বপুরুষের ভিটায়।

এই কপর্দকশূন্য, অবহেলিত বেকার কিন্তু প্রশিক্ষিত সশস্ত্র লোকজনের ওপরই চোখ পড়ে উত্তর আফ্রিকার ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আলকায়েদা ইন দি ইসলামিক মাগরেব (একিউআইএম)-এর। সংগঠনটি মালির সীমান্তবর্তী দেশ আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, নাইজার আর বুরকিনা ফাসো থেকে তাদের কর্মতৎপরতাকে প্রসারিত করে এ অঞ্চলে। অত্যন্ত দুর্বল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, দারিদ্র্য, পশ্চাৎপদতা ও অনিশ্চয়তায় জর্জরিত জনপদটি জেহাদিদের সর্বগ্রাসী থাবা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। শুরু হয় পরস্পরবিরোধী গ্রুপগুলোর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত ও নৈরাজ্য। এই অবস্থায় পুরনো ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স হস্তক্ষেপ করে। ১৯৬০ সালে তাদের ছেড়ে যাওয়া উপনিবেশে আবার ফিরে আসে তারা।

বিবদমান পক্ষদ্বয় যখন পারস্পরিক হানাহানিতে লিপ্ত তখনই সরকারি বাহিনী ফরাসি সৈন্যদের সহায়তায় বিদ্রোহীদের হটিয়ে পুনর্দখল করে নেয় উত্তর মালি। কিন্তু এলাকার দখল হারালেও ঘরে ঘরে বিস্মৃত হয় অস্ত্রের দাপট। লোকবল, অর্থবল আর সামর্থ্যের অভাবে অধিকাংশ এলাকাতে সরকার প্রকৃত অর্থে আর পুনঃস্থাপিত হয়নি। বিচ্ছিন্ন অস্ত্রধারীরা সে সুযোগই এখন নিচ্ছে।

 ভোটের হাওয়া বইছে না : মালি সরকার, ফ্রান্সের দুর্ধর্ষ বারখান, পার্শ্ববর্তী দেশ নিয়ে গঠিত জি-৫ এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর ক্রমাগত তৎপরতা সত্ত্বেও মালিতে সংঘাত বেড়েই চলেছে। শান্তিরক্ষীরা তাদের অন্যতম টার্গেট হলেও বাদ যাচ্ছে না সাধারণ মানুষসহ কোনো পক্ষই। আক্রান্ত না হলে শান্তিরক্ষীরা অস্ত্র ব্যবহার করে না এই বিশ্বাসে তারা এখন সহজ টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। এমন কোনো সপ্তাহ নেই যে, এভাবে লোকজন নিহত হচ্ছে না।

এদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আগামী ২৯ জুলাই মালিতে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু এ নির্বাচন নিয়ে উত্তরের মানুষের তেমন আগ্রহ নেই। তারা নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা এবং খাদ্যের সংস্থান নিয়েই চিন্তিত। খোদ রাজধানীতেও ভোটের হাওয়া বইছে না। আর মাত্র দুই মাস আছে সামনে। সরকারের ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো কোনো চাঞ্চল্য নেই।
-বাংলাদেশ প্রতিদিনের সৌজন্যে

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.