Sylhet View 24 PRINT

পরকীয়া প্রেম কি অপরাধ, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৮-১১ ০০:৪৮:৫১

বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক তথা পরকীয়া ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী একটি অপরাধ। কোনো পুরুষের ক্ষেত্রে এ সম্পর্কে যুক্ত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের ব্যবস্থা আছে। প্রায় দেড়শ’ বছর আগে দণ্ডবিধিতে যুক্ত হওয়া ওই ধারার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির সর্বোচ্চ আদালত প্রশ্ন তুলেছেন পরকীয়া প্রেম কি আদৌ অপরাধ, নাকি একটি সামাজিক সমস্যা? খবর -বিবিসি বাংলার।
 
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চ্যাটার্জি বলেন, দেড়শ’ বছর আগে যেভাবে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে দেখা হতো, সেটা এখন হয় না।

তিনি আরও বলেন, নারী-পুরুষ উভয়েই একসঙ্গে কাজ করেন, হয়তো অফিসের প্রয়োজনে বাইরেও যান একসাথে। তাই মেলামেশার ধরন যেমন পাল্টেছে, তেমনই বদল এসেছে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও। তার মতে, পরকীয়া শব্দটাকে আগে যেভাবে দেখা হতো, এখন আমরা নিশ্চয়ই সেভাবে দেখি না।

অন্যদিকে পরিবার, সমাজ এগুলোকেও রক্ষা করা দরকার। তাই দেড়শ’ বছরের পুরানো আইনের ধারাটার বদল প্রয়োজন, তবে সবদিকে সামঞ্জস্য রেখে। তবে বিধানটি একেবারে তুলে দিলে সমাজে ব্যভিচারের আগলটা খুলে দেবে। সেটাও অনুচিত।
 
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের এক বেঞ্চ বুধবার পরকীয়া প্রেম নিয়ে কোনো চূড়ান্ত নির্দেশ না দিলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কেরালার এক বাসিন্দা কোর্টের কাছে আবেদন করেছিলেন যে ৪৯৭ নম্বর ধারাটি দণ্ডবিধি থেকে বাতিল করা হোক। সেই মামলার শুনানিতেই আদালত প্রশ্ন তোলে যে একটি সম্পর্কে দু’জন জড়িত হলেও তাদের মধ্যে পুরুষ মানুষটির সাজা হবে, আর নারীর সাজা হবে না, এটা অনুচিত।
 
নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী ও অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষের মতে, এটা ঠিকই, যদি কোনো বিবাহিতা নারী নতুন করে কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তার দায়-দায়িত্ব পুরুষের যেমন, তেমনি ওই নারীরও। সেই দায়িত্ব তো নারীটিকে নিতেই হবে। সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম, তার ফল ভোগ করলাম, কিন্তু দোষী হলো শুধু পুরুষ, সেটা তো ঠিক নয়। ‘যদি সে নারীর স্বামীর সম্মতি থাকে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কটিতে, তাহলে কি তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না?’-প্রশ্ন বিচারপতিদের।

তারা বলেছেন, এই ধারাটিতে শুধু বিবাহিত নারীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গ থাকবে কেন? পুরুষ তো অবিবাহিত নারী বা বিধবা নারীর সঙ্গেও সম্পর্ক গড়তে পারেন, সেক্ষেত্রে আইনে কেন কিছু বলা থাকবে না?
 
এই প্রসঙ্গে নারী আন্দোলনের কর্মী ভারতী মুত্সুদ্দি বলেন, যদি নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হন, সে স্বামীর অনুমতি নিয়েই হোক বা বিনা অনুমতিতে, সাজা তারও হওয়া উচিত। আইনটি না হলে পারিবারিক-সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা করা কঠিন হবে। এটাও ঠিক যে, আইন করলেই যে সবসময় তা কার্যকর হয় তা না। আইনের বিধান থাকলে মানুষ অন্তত ভয় পাবে।

এই মামলাটির শুনানি চলাকালীন ভারত সরকার জানিয়েছিল, ৪৯৭ ধারাটি তুলে দেওয়া হলে বিবাহ এবং পরিবার নামের যে ব্যবস্থা সমাজকে ধরে রেখেছে, তা ধ্বংস হয়ে যাবে।

শাশ্বতী ঘোষ বলেন, পরকীয়া প্রেম কি আদৌ অপরাধ হতে পারে বলে মনে হয় না। মন দেওয়া-নেওয়াকে ক্রিমিনালাইজ করা উচিত নয়।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.