Sylhet View 24 PRINT

সৌদি আরবে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৮-১৯ ১২:৪০:০২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: সারাবিশ্ব থেকে সৌদি আরবে সমবেত ২০ লাখের বেশি মুসলমানের মিনায় অবস্থান নেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হজ পালনের আনুষ্ঠানিকতা।

সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজিরা দিতে আসা এই মুসলমানরা সোমবার জড়ো হবেন আরাফাতের ময়দানে, যাকে হজের মূল অনুষ্ঠান বলা হয়।

মঙ্গলবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহার দিন পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

সৌদি আরবের সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিশ্বের ১৬৪টি দেশের ২০ লাখের বেশি মুসলমান এবার হজ করছেন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা সোয়া এক লাখের মত।

সৌদি গেজেটের খবরে বলা হয়, হজ পালনে সৌদি আরবে হাজির হওয়া মুসলমানরা শনিবার বিকাল থেকে জড়ো হতে শুরু করেন ১০ কিলোমিটার দূরে তাবুনগরী মিনায়।

সাদা কাপড়ে আচ্ছাদিত বিভিন্ন বর্ণ, ভাষা, জাতীয়তার লাখো মুসলমান কেউ বাসে, কেউ গাড়িতে, কেউবা হেঁটে মিনার পথে রওনা হন।

তাদের সবার মুখে ছিল ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি'মাতা লাকা ওয়ালমুলক’ ধ্বনি।

এর অর্থ হল, “আমি হাজির। হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই; সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।”

আরব নিউজ লিখেছে, যারা হজে এসেছেন, বিশ্বের নানা প্রান্তের বাসিন্দা তারা। তবে সবার কাছেই এ অভিজ্ঞতা জীবনের অনন্য সাধারণ এক ঘটনা।  

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার  আলেপ্পো থেকে পাঁচ বছর আগে পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৫০ বছর বয়সী অ্যাকাউন্টেন্ট হিশমা মোস্তফা। এবার তিনি সৌদি আরবে এসেছেন হজ করতে।

মোস্তফা বলেন, “এই প্রথম নিজের চোখে কাবা দেখার সুযোগ হল আমার। এটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা “

ইয়েমেনের নাগরিক নায়েফ আহমেদ (৩৭) হজে এসেছেন জমি বিক্রির টাকায়।

তিনি বলেন, “যুদ্ধের কারণে আসার খবরচ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু এখানে এসে আমি শান্তি পাচ্ছি। আল্লাহর কাছে আমি দোয়া করব, যুদ্ধ যেন বন্ধ হয়।”

তিউনিসিয়া থেকে আসা ৫৯ বছর বয়সী নাজওয়া বলেন, ২০০৭ সালে সৌদি আরবে ওমরাহ করে গেছেন তিনি। এরপর হজ করার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলেও সুযোগ পেতে তার পেরিয়ে গেল দশটি বছর।

“এই অনুভূতি আমি বোঝাতে পারব না, আমার চোখ প্রতিদিন ভিজে আসে।”

রোববার সারাদিন এবং রাত তারা মিনায় কাটাবেন ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে দিয়ে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় তারা জিকির করবেন, নামাজ পড়বেন জামাতের সঙ্গে।

হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার জন্য সোমবার সকালে তারা সমবেত হবেন প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে বিদায় হজের স্মৃতি জড়িত আরাফাতের ময়দানে। সেলাইবিহীন শুভ্র এক কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা সেখানে থাকবেন।

চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল সমতল মাঠের দক্ষিণ দিকে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড, উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে আরও প্রায় পৌনে ১ মাইল বিস্তৃত।

মুসলমানদের কাছে পবিত্র এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে তারা ইবাদত করবেন; হজের খুতবা শুনবেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ পড়বেন।

সৌদি দৈনিক আলআরাবিয়ার খবরে বলা হয়, বাদশাহ সালমান এবার হজের খুতবা পড়ার দায়িত্ব দিয়েছেন মসজিদে নববীর ইমাম শেখ হুসেইন বিন আব্দুলআজিজকে। এ খুতবা রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে বিশ্বময়।

মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়া পৃথিবীতে পুনর্মিলনের পর এই আরাফাতের ময়দানে এসে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। ১৪ শ’ বছরের বেশি সময় আগে এখানেই ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) দিয়েছিলেন তার বিদায় হজের ভাষণ।

এই আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই হজে এসে যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হয় স্বল্প সময়ের জন্য।

ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ।

আরাফাত থেকে মিনায় ফেরার পথে সোমবার সন্ধ্যায় মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়বেন সমবেত মুসলমানরা। মুজদালিফায় রাতে থাকার সময় তারা পাথর সংগ্রহ করবেন, যা মিনার জামারায় শয়তানকে উদ্দেশ্য করে ছোড়া হবে।

মঙ্গলবার সকালে মিনায় ফিরে সেই পাথর তারা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছুড়বেন। এরপর কোরবানি দিয়ে ইহরাম ত্যাগ করবেন এবং সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল মনসুর আল-তুর্কি শনিবার মিনায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এবার হজে আসা মানুষের সংখ্যা সব মিলিয়ে ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তারা যাতে নির্বিঘ্নে সুষ্ঠুভাবে হজ সম্পন্ন করতে পারেন, সেজন্য সব প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছে।

আরব নিউজ জানিয়েছে, হজে আসা মুসলমানদের নিরাপত্তার জন্য মক্কার চারপাশে ছয়টি চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে। সেখানে অনুমতিপত্র পরীক্ষা করে তারপর সবাইকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ২১ হাজার বাস।

এই পুরো প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সৌদি সরকারের ১৪০০ কর্মকর্তা কর্মচারীর পাশাপাশি নারী-পুরুষ মিলিয়ে ১৪৮৫ জন স্বেচ্ছাসেবী।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১৯ আগস্ট ২০১৮/ডেস্ক/আআ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.