Sylhet View 24 PRINT

দুর্গাপূজার মণ্ডপে আজান নিয়ে বিতর্ক কলকাতায়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-০৮ ২০:৩৭:২৯

সিলেটভিউ ডেস্ক :: কলকাতার একটি দুর্গাপূজা মণ্ডপে আজানের আওয়াজ কেন ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। পূজার উদ্যোক্তারা বলছেন, সব ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিতেই তারা এবারের পূজার ‘থিম’ করেছেন। যার নাম দেয়া হয়েছে, ‘আমরা এক, একা নই’।

সেই সূত্রেই মণ্ডপ সজ্জায় তারা যেমন হিন্দু-ইসলাম-খৃষ্টান সব ধর্মের নানা মোটিফ তুলে ধরেছেন, তেমনই থিম সঙ্গীত হিসাবে যা মণ্ডপে বাজানো হচ্ছে, সেখানেও চন্ডীপাঠের সঙ্গে আজান এবং বাইবেল পাঠ আর চার্চের ঘন্টাধ্বনি ব্যবহার করেছেন।

পূজা কমিটির সম্পাদক সুশান্ত সাহা বলেন, ‘আমাদের মণ্ডপ সজ্জার অঙ্গ হিসাবে যে থিম মিউজিকটা চালাচ্ছি, সেখানে কিন্তু আজান নেই শুধু, চন্ডীপাঠও যেমন আছে, তেমনই বাইবেল থেকে পাঠও রয়েছে আজানের সঙ্গে। আমরা একটা স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছি - সেটা হল সম্প্রীতির বার্তা।’


কিন্তু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একাংশ মনে করছেন দেবী দুর্গার পূজা হচ্ছে যেখানে, সেখানে আজান কেন বাজানো হবে! ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার অভিযোগে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের এক আইনজীবী, যিনি একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

আইনজীবী তরুণ জ্যোতি তিওয়ারী বলেন, ‘আমি যখন বেলেঘাটার ওই মণ্ডপে যাই, তখন শুনতে পাই আল্লাহু-আকবর ধ্বনি বাজছে। কোনো চার্চে ক্রিসমাস ক্যারলের সময়ে নিশ্চই গায়ত্রী মন্ত্র বাজানো হবে না অথবা ঈদের দিন কোনো মসজিদে নিশ্চয়ই হনুমান চালিসা পাঠ হয় না!

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্গাপূজার প্রথমেই প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় অর্থাৎ পূজার চারদিন সেটা হিন্দুদের কাছে মন্দিরের সমতূল্য। সেখানে আজান বা অন্য যে কোনো ধর্মের ধ্বনি কেন বাজানো হবে? থিমের নামে যা খুশি তা তো করা যায় না!’

তবে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয় কলকাতার মুসলিমদেরও একাংশও মনে করছেন, এভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতির সেতু বানানো যায় না। তারাও যেমন মসজিদে দুর্গামন্ত্র বললে মেনে নেবেন না সেরকমই হিন্দু পূজায় আজান ব্যবহার করাও অনুচিত হয়েছে।


কলকাতার সাংবাদিক মোক্তার হোসেইন বলেন, ‘হিন্দু ভাইদের অনুভূতিতে আঘাত লাগাটা যথার্থ। মসজিদে যদি দুর্গার প্রশংসাসূচক গান পরিবেশিত হয় তাহলে সেটা যেমন আপত্তিকর, তেমনি দুর্গাপূজার মণ্ডপে অন্য ধর্মের কিছু বাজানো হলেও তাদের আপত্তি থাকতেই পারে!’

তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে সম্প্রীতি রক্ষা হয় না, উল্টো ধর্ম নিয়ে আরও অশান্তি পাকিয়ে ওঠে।’ তবে ওই এলাকার বাসিন্দা একজন হিন্দু আর ঠাকুর দেখতে আসা একজন মুসলমান বিবিসিকে বলেছেন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার মতো কিছু তারা তো অন্তত দেখতে পাচ্ছেন না!

স্থানীয় বাসিন্দা অঙ্কন অধিকারী বলেন, ‘প্রথমত এটা একটা শিল্প ভাবনা - এমন তো নয় যে দুর্গাপূজায় শুধুই আজান বাজানো হচ্ছে! বাইবেল থেকে পাঠও হচ্ছে, আবার চন্ডীপাঠও আছে। এতে আমার তো অন্তত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগেনি। লাগবেই বা কেন?’

তার মতে, ‘দুর্গাপূজাটা তো এখন সকলের উৎসব। গঙ্গাসাগর মেলা বা কুম্ভ মেলায় যেমন বহু মুসলমান যান তেমনই অন্য ধর্মের মানুষও তো দুর্গাপূজার উৎসবে সামিল হন। একে অপরকে যদি মানুষ হিসেবে ভালো না বাসতে পারি, তাহলে আর কীসের ধর্ম!’

মুহম্মদ রিয়াজ আহমেদ বেলেঘাটা থেকে বেশ কিছুটা দূরের এলাকা রাজাবাজারের বাসিন্দা। মঙ্গলবার তিনি ওই মণ্ডপের ঠাকুর দেখে বেরচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এটা দেখেই ভাল লাগলো যে হিন্দু-মুসলমান-খ্রিষ্টান সব ধর্মই এই পূজাতে মিশে গেছে।

তার মতে, ‘মণ্ডপে আজানও হচ্ছে, মন্ত্রও তো পড়া হচ্ছে, আবার বাইবেলও পাঠ হচ্ছে- শুনে তো খুবই ভাল লাগল আমার। এতে খারাপটা কোথায়? কোনো ভুল তো দেখছি না আমি।’

তবে তরুণ সাংবাদিক মন্ডলের পরামর্শ, ‘এভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তৈরি হয় না। এই কলকাতা শহরেই দুই ধর্মের মানুষ পাশাপাশি রয়েছেন অনেক শতাব্দী ধরে কিন্তু একে অপরের ধর্মীয় রীতিনীতি সম্বন্ধে কতটুকু জানি আমরা?’

তার মতে, ‘উদ্যোক্তারা সত্যিই যদি দুই ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরি করতে চান তাহলে উচিত হবে দুর্গাপূজায় মুসলমানদের ডেকে নিয়ে এসে দুর্গাপূজাটা কী, কীভাবে হয়, কালীপূজায় কী কী হয়, সেসব বোঝাতে পারতেন।’

তিনি বলেন, ‘ঠিক তেমনি করে একই ভাবে মুসলমান সমাজের নেতাদেরও উচিত হিন্দু ভাইদের আহ্বান করে এনে রোজা, ঈদ, আজান এসবের ব্যাপারে অবগত করানো। একে অপরকে জানলে বুঝলে তবেই তৈরি হবে সম্প্রীতির সেতু।’

পূজা কমিটির সম্পাদক সুশান্ত সাহা অবশ্য মনে করেন, যারা ওই পূজার থিমের বিরোধিতা করছেন, তারা সম্প্রীতির পরিবেশটা নষ্ট করতে চাইছে। তারাই যেন হয়ে উঠছে দুর্গাপূজার আসল অসুর। আইনজীবী তরুণ জ্যোতির মতে, পশ্চিমবঙ্গে যে তোষণের সংস্কৃতি চলছে, এ তারই আরেকটা উদাহরণ।


সৌজন্যে : বিবিসি বাংলা
সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৮ অক্টোবর ২০১৯/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.