Sylhet View 24 PRINT

ভারতের যে বিতর্কিত মুসলিম প্রত্নতত্ত্ববিদের রিপোর্টের ভিত্তিতে বাবরি মসজিদ রায়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-১১ ১৯:৩৬:১৪

সিলেটভিউ ডেস্ক :: অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের নিচে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় হাজারবার খুঁড়েও কোনো মন্দিরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ওই এলাকায় বেশ কয়েকবার খোঁড়াখুঁড়ি চালানো হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রত্নতাত্ত্বিকই মন্দির পাননি।

এমনকি সর্বশেষ ভারতের প্রত্নতত্ব বিভাগ ‘দ্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র (এআইএ) প্রত্নতাত্ত্বিক খননেও কোনো মন্দির মেলেনি।

অথচ কেবল বিশ্বাসের ওপর ভর করে বির্তকিত সেই স্থানে মন্দির নির্মাণের নির্দেশনা দিয়ে রায় দিল ভারতের সুপ্রিমকোর্ট।

এদিকে এ রায় ঘোষণার পর যে নামটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন তিনি হলে কারিঙ্গামান্নু কুঝিয়ুল মুহাম্মদ। বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতজনরা তাকে ‘কেকে’ নামে ডাকেন। তিনি একজন ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক।

বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানে মন্দির বানানোর পক্ষে সুপ্রিমকোর্ট শনিবার যে রায় দিয়েছেন, তার পেছনে এই প্রত্নতাত্ত্বিকের দেয়া রিপোর্টটির বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল।

বিবিসি জানিয়েছে, কে কে মুহাম্মদের অধীনে করা ওই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা মেনে নেন যে, বাবরি মসজিদের স্থাপনার নিচে বহু পুরনো আরো একটি কাঠামোর ছিল। যে কাঠামো ‘ইসলামিক কাঠামো’ নয়।

এ বিষয়ে কে কে মুহাম্মদের দাবি, বাবরি মসজিদের নিচে একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ত্ব ছিল।

বস্তুত ওই রিপোর্টেই প্রথম স্পষ্টভাবে দাবি করা হয়েছিল, বাবরি মসজিদ চত্ত্বরে মসজিদ প্রতিষ্ঠার অনেক আগে থেকেই একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ত্ব ছিল।

এদিকে কে কে মুহাম্মদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তাকে তিরস্কৃত করছেন ভারতের মুসলিমরা। একজন মুসলমান হয়ে কী করে বাবরি মসজিদের নিচে মন্দির ছিল বলে যুক্তি দিয়ে গেছেন কে কে মুহাম্মদ, তা ভাবতেই পারছেন না ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

যদিও সেদিকে মোটেই পাত্তা দিচ্ছেন না কেকে মুহাম্মদ। বরং এই রায়ে তার রিপোর্টটিকে চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেয়ায় নিজেকে ধন্য মনে করছেন কে কে। একে জীবনের ‘শ্রেষ্ঠ সম্মান’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় কে কে মুহাম্মদ বলেছেন, ‘এটা একেবারে সঠিক বিচার। আমি মনে করি, এর চেয়ে ভালো রায় আর কিছুই হতে পারে না। এ রায়ের মধ্যে দিয়ে আমার দীর্ঘদিনের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ও পরিশ্রমই স্বীকৃতি পেল।’

বাবরি মসজিদের নিজে মন্দির ছিল এমন বক্তব্যের পেছনে বেশ কয়েকটি যুক্তি দেখিয়েছিলেন কে কে মুহাম্মদ।

ভারতের একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বাবরি মসজিদ চত্বরে খোঁড়াখুঁড়িতে ‘মন্দির প্রণালী’, ‘অভিষেক পানি' বা ‘কুমির প্রণালী’র মতো বিভিন্ন চিহ্ন বা স্মারক দেখা যায়। আর এগুলো তো হিন্দুদের ধর্মীয় উপাসনালয়েই থাকে। কুমির প্যাটার্নের ওই ধরনের স্থাপনা কখনও মসজিদে থাকে না। তাছাড়া মানুষ ও পশুপাখির বহু টেরাকোটা মোটিফও আমরা সেখানে পেয়েছিলাম, যেগুলো মুঘল আমলের কোনো মসজিদে কখনওই দেখা যায় না।’

তবে কে কে মুহাম্মদের ওই প্রতিবেদনকে ভুল বলে দাবি করেছেন ভারতের অনেক বিশেষজ্ঞ। তাদের মধ্যে অন্যতম ইতিহাসবিদ আরফান হবিব। সেসব দাবি অনুযায়ী এটাই প্রমাণিত যে, বাবরি মসজিদের নিচে প্রাচীন কাঠামো থাকলেও তা হিন্দু ধর্মীয় কোনো মন্দির ছিল না।

এমন রায়ের পর কে এই কারিঙ্গামান্নু কুঝিয়ুল মুহাম্মদ, সে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। বিবিসি জানিয়েছে, ভারতের কেরালা রাজ্যের কালিকটের বাসিন্দা তিনি। আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স করা প্রত্নতত্ত্ববিদ।

১৯৭৬ সালে বাবরি মসজিদকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হলে তখন র্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। সেই প্রত্নতাত্ত্বিক দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভারতের বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক ড. বি বি লাল। তার অধীনেই একজন তরুণ গবেষক হিসেবে যোগ দেন এই কে কে মুহাম্মদ।

৪৩ বছর ধরে এই বিষয়ে গবেষণা করার পর উত্তর ভারতে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার আঞ্চলিক অধিকর্তা হিসেবে অবসর নেন কে কে মুহাম্মদ।

এই সময়ের মধ্যে বাবরি মসজিদ নিয়ে যে রিপোর্টটি তৈরি হয় তার মূল প্রণেতা হলেন কে কে মুহাম্মদ। প্রত্নতত্ত্বে অবদানের জন্য চলতি বছর ভারত সরকার তাকে বেসামরিক খেতাব পদ্মশ্রীতে ভূষিত করেছে।

জানা গেছে, পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ ভারত সফরে গেলে তাকে আগ্রাসহ তাজমহল ঘুরিয়ে দেখানোর দায়িত্ব পড়েছিল কে কে মুহাম্মদের ওপর।

এর পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারত সফলে এলে তারও ‘ট্যুর গাইড’ ছিলেন তিনি।

সৌজন্যে :: বিবিসি বাংলা
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১১ নভেম্বর ২০১৯/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.