Sylhet View 24 PRINT

উগ্রপন্থীদের হামলায় ভিটেমাটি ছাড়ছেন দিল্লির মুসলমানরা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৭ ২০:৩৯:৪০

সিলেটভিউ ডেস্ক :: উত্তর-পূর্ব দিল্লির একটি শহর খাজুরি খাস। এর চার নম্বর গলির মুখটায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন ৬৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ তাহির। কাঁদছিলেন পাশে দাঁড়ানো তার দুই পুত্রবধূও। গলির মুখ থেকে তাদের বাড়িটা ছিল খান চার-পাঁচেক বাড়ির পরেই। সেই সুন্দর বাড়িটার এখন আর কোনো চিহ্ন নেই। এখন গোটা বাড়িটাই উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দেয়া আগুনে ছাই হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার গভীর রাতে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিতে দিতে প্রায় এক হাজার যুবক ঢুকেছিল তাহিরদের গলিতে। তাদের হাতে ছিল বন্দুক, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। গলিতে ঢুকেই তারা মারধর শুরু করে সেখানকার বাসিন্দাদের। ঘরে ঘরে ঢুকে শুরু করে লুটপাত। তারপর একটা একটা করে বাড়িতে আগুন লাগাতে থাকে। লোকজন যে বাড়িগুলোর ভেতরে রয়েছেন, তার পরোয়াই করেনি তারা।

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ভুক্তভোগী মুসলিম তাহির। বাড়ি দাউদাউ করে জ্বলছে দেখে প্রাণে বাঁচতে আর কয়েক জন প্রতিবেশীর মতো তিনিও তার পরিবারের লোকজনকে নিয়ে উঠে যান ছাদে। তারপর এক এক করে সেই ছাদ থেকে পাশের বাড়ির ছাদে ঝাঁপ দেন। সেই বাড়ির ছাদ থেকে তার পরের বাড়ির ছাদে। এভাবে ছাদ টপকে টপকে তাহিররা পৌঁছে যান গলির শেষ প্রান্তে। ততক্ষণে সেখানে পৌঁছাতে পারেনি উগ্রপন্থীরা। ওইদিন এভাবে তাহিরের মতো অন্যরাও পালিয়ে প্রাণে বাঁচে।

অনেক কষ্টে বাড়িটা বানিয়েছিলেন তাহির। বুধবার বিকেলে দুই পুত্রবধূকে নিয়ে বাড়িটা দেখতে এসেছিলেন তিনি। গিয়ে দেখেন, গোটা বাড়িটাই ছাই হয়ে রয়েছে। পাশের বাড়িটারও একই দশা। তার পরেরটাও...। নিজের বাড়ির ভস্মরূপ দেখে ডুকরে কাঁদতে থাকেন তিনি। গলির মুখে এসে কাঁদতে কাঁদতে বারবার পেছনে ফিরে ছাই হয়ে যাওয়া বাড়িটার দিকে তাকাচ্ছিলেন। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি। দুই পুত্রবধূকে নিয়ে চার নম্বর গলির মুখেই বসে পড়েছিলেন তাহির।

খাজুরি খাসের মুসলিমদের ঘরবাড়িগুলোর যে হাল করেছে উগ্রবাদীরা

ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তাহির বলতে থাকেন, ‘ওরা বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিল। আমরা পড়িমড়ি করে বাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করলাম। কোমর থেকে পঙ্গু আমার বউ। ও পারল না। আমার দুই ছেলেও গুরুতর জখম হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা মুখে কিছুই দিতে পারিনি। আমার সদ্যোজাত নাতি-নাতনিরা শুধু পানি খেয়ে রয়েছে।’

খাজুরি খাসের চার নম্বর গলিতে যত মুসলিম পরিবার থাকতেন, মঙ্গলবার গভীর রাতের ভয়াবহ ঘটনার পর তারা সকলেই সেখান থেকে অন্যত্র পালিয়ে গিয়েছেন। একই চেহারা মৌজপুর বাবরপুর ও ভাগীরথী বিহারের গলিগুলোর। কোনো মুসলিম পরিবার আর সেখানে নেই।

ভিটেবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বাসিন্দারা

শুধু খাজুরি খাস নয়; মৌজপুর বাবরপুর, ভাগীরথী বিহার-সর্বত্রই একই দৃশ্য। গাড়ি নিয়ে সবজি বিক্রি করেন মোহাম্মদ এফাজ (২০)। খাজুরি খাসের চার নম্বর গলির মুখে দাঁড়িয়ে বলেন, “এমন ভয়াবহ ঘটনা এর আগে দেখিনি। ওদের সকলের হাতে ছিল বন্দুক, লাঠি, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। ওরা ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিচ্ছিল। ওই ধ্বনি দিতে দিতেই গলির একের পর এক ঘরবাড়িতে ওরা আগুন লাগাতে শুরু করল। গুলি চালাচ্ছিল এলোপাথাড়ি।”

তবে খাজুরি খাসের চার নম্বর গলির হিন্দু বাসিন্দারা ওই সময় তাদের মুসলিম প্রতিবেশীদের বাঁচাতে এগিয়ে আসে। মুসলিমদের ঘরবাড়িগুলো যখন পুড়ছে, তখন তারা নিজেদের বাড়ি থেকে বালতির পর বালতি পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে ইচ্ছা থাকলেও দুর্বৃত্তদের হামলার ভয়ে অনেক হিন্দু পরিবার মুসলমানদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারেনি।

গত রোববার থেকে টানা সহিংস ঘটনার পর খাজুরি খাস, মৌজপুর বাবরপুর, ভাগীরথী বিহারের মুসলিম এলাকাগুলো এখন খাঁ খাঁ করছে।

সৌজন্যে : আনন্দবাজার
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.