Sylhet View 24 PRINT

সারি সারি লাশ মুম্বাইয়ের হাসপাতালে, আতঙ্কে নিচ্ছে না স্বজনরা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৬-০১ ২০:০৩:২২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: খুব দ্রুততার সঙ্গে বিশ্বের পরবর্তী করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিপর্যয়ের স্থানে পরিণত হতে চলেছে ভারতের সবচেয়ে ধনী শহর মুম্বাই। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত মুম্বাইয়ে করোনার ভয়াবহ প্রকোপ চলছে। দেশটির মোট করোনা রোগীর এক চতুর্থাংশই মুম্বাইয়ের, বর্তমানে ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। রোগীতে উপচে পড়ছে শহরের হাসপাতালগুলো। মর্গে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই মৃতদেহ ওয়ার্ডেই বেডের ওপর রেখে দেয়া হয়েছে। তার পাশেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে আক্রান্ত রোগীদের।

স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে সারি সারি লাশ পড়ে আছে। শয্যা সঙ্কটে রোগীদের মেঝেতে ঘুমানোর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিনা সেব্যাপারে প্রমাণ দেখাতে না পারায় বিনা-চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন রোগীরা। প্রত্যেকদিন নতুন নতুন ওয়ার্ড করা হচ্ছে। কিন্তু সন্ধ্যা হতে না হতেই সেসব ওয়ার্ড করোনা রোগীতে ভরে যাচ্ছে।

মুম্বাইয়ের হাসপাতালের কর্মীরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ায় জনবলের অভাবে অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসাসেবাও বন্ধ হয়ে গেছে।

সেন্ট্রাল মুম্বাইয়ের সরকারি কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সাদ আহমেদ বলেন, 'আমরা প্রত্যেকদিন নতুন নতুন ওয়ার্ড চালু করছি। কিন্তু দিনের শেষে কভিড-১৯ রোগী দিয়ে সেগুলো পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এখানে অত্যন্ত খারাপ অবস্থা। হাসপাতালের সব ওয়ার্ডই কভিড-১৯ ওয়ার্ড এবং ধারণক্ষমতার পুরোটাই রোগী দিয়ে পরিপূর্ণ।

করোনাভাইরাস মহামারির প্রাথমিক এপিসেন্টার নিউইয়র্ক এবং ইউরোপে থাকলেও বর্তমানে তা ঘুরছে ব্রাজিল এবং ভারতের দিকে। দুবর্ল স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো এবং নিম্নমানের জীবনযাত্রার কারণে করোনাভাইরাসের উর্বর ভূমি হয়ে উঠছে ভারত। এরই মধ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত।

গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মুম্বাইয়ের সরকারি লোকমান্য তিলক হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে করোনাভাইরাসে মৃতদের দেহ পড়ে আছে। পাশের শয্যায় করোনা রোগীরা। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ডিনকে সরিয়ে দেয়। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের ওয়ার্ডে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের নার্স মাধুরী রামদাস গৈকার বলেন, 'গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে লাশের স্তুপ হয়েছে। কারণ অনেক পরিবার সংক্রমণের ভয়ে মরদেহ নিতে অস্বীকার করেছে। আমরা লাশের সব কাগজপত্র প্রস্তুত করে রেখেছি। কিন্তু সেগুলো কেউই নিয়ে যাচ্ছে না। ভাইরাসটির কারণে চারপাশে তীব্র ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে, যা ভারতে নতুন একটি অস্পৃশ্য শ্রেণি তৈরি করেছে।'

মুম্বাই শহরে কমপক্ষে ৪৭ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১ হাজার ২০০ জন। ভারতে যে পরিমাণ মানুষ মারা গেছেন তার মধ্যে এক চতুর্থাংশ এই মুম্বাইয়ে। প্রতিদিন হাজার হাজার না হলেও শত শত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু ভিডিও প্রকাশ হয়। তাতে দেখা যায়, করোনা রোগীরা ভর্তি আছেন, চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন ওয়ার্ডে বিছানার ওপর পড়ে আছে সারিবদ্ধ মৃতদেহ। এসব মৃতদেহ কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে হাসপাতালগুলোই শুধু হিমশিম খাচ্ছে এমন নয়। একই অবস্থা দাহ করার স্থানগুলো এবং মর্গেও। এতে স্বাস্থ্যখাতের কি অবস্থা তা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। চিকিৎসক ও নার্সদেরও নাভিশ্বাস উঠেছে এ অবস্থায়।

মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালের আইসিইউয়ের প্রধান শ্রুতি ট্যান্ডন বলেছেন, 'আমি যে হাসপাতালে কাজ করি, তাতে কোনো মর্চুয়ারি নেই। দু’জন মানুষ মারা গেছেন। কিন্তু পরের দিন সকাল না হওয়া পর্যন্ত সেই মৃতদেহ বেডের ওপরই পড়ে ছিল। কারণ, ওই মৃতদেহ দাহ করতে না নেয়া পর্যন্ত তা সরানো যাচ্ছিল না। সব দিক দিয়েই আমরা চাপে রয়েছি। এ এক ভয়াবহ অবস্থা।'

সৌজন্যে :হিন্দুস্তান টাইমস,এবিসি
সিলেটভিউ২৪ডটকম/০১ জুন ২০২০/ডেস্ক/ জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.