Sylhet View 24 PRINT

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পর ছেলেকে কিডনি দান বাংলাদেশি মায়ের

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-১৪ ১০:১৯:৫৪

সিলেটভিউ ডেস্ক :: মায়ের দেওয়া কিডনি থেকেই আপাতত নতুন জীবন পেলেন বাংলাদেশি নাগরিক উত্তম কুমার ঘোষ। কিন্তু মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরার এই গল্প শুধুমাত্র যে মা-ছেলের মধ্যে অঙ্গ দানেই সীমাবদ্ধ-তা নয়। কারণ কিডনি প্রতিস্থাপনের আগেই মা ও ছেলে উভয়েই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই যুদ্ধেও তারা উভয়েই উত্তীর্ণ হয়েছেন। এরপর কিডনির সফল প্রতিস্থাপনও হয়। সেক্ষেত্রে ভারতের মাটিতে এই প্রথম করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা কোন রোগীর শরীরে সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপন হল।

দীর্ঘদিন ধরেই মুত্রাশয়ের সমস্যায় জর্জরিত ৩৮ বছর বয়সি উত্তম ঘোষ চিকিৎসা করাতে গত জানুয়ারি মাসের শেষে বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ থেকে কলকাতায় আসেন। ছেলের সাথেই কলকাতায় আসেন উত্তমের বাবা-মা-স্ত্রী এবং কন্যা সহ পরিবারের সদস্যরা।

এরপর দক্ষিণ কলকাতার মুকুন্দপুরে অবস্থিত ‘রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস’ (আরটিআইআইসিএস বা দেবী শেঠি হাসপাতাল নামেও পরিচিত) হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেখান ওই বাংলাদেশি রোগী। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে কিডনি অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে সবুজ সঙ্কেত আসার পর গত মার্চ মাসে উত্তমের কিডনি প্রতিস্থাপনের দিন নির্ধারিত হয়। কিন্তু এরই মধ্যে মার্চ মাসের শেষে করোনা ভাইরাসের প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে লকডাউন পর্ব চালু হয়ে যাওয়ার কারণে সেই অস্ত্রোপচার থমকে যায়। 
কিন্তু এরই মধ্যে উত্তমের জীবনে স্বস্তির নি:শ্বাস নিয়ে আসে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এক নির্দেশিকা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় লকডাউনের মধ্যেও যেকোন জরুরী অস্ত্রোপচার, অঙ্গ প্রতিস্থাপনে কোন বাধা নেই। কিন্তু এই স্বস্তির খবর আসতে না আসতেই দেখা দেয় নতুন বিপত্তি। উত্তম ও তার মা কল্পনা ঘোষ-উভয়ের শরীরেই ধরা পড়ে করোনা পজিটিভ। শুরু হয় নতুন লড়াই।

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাদের দুইজনকেই চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় এম.আর.বাঙ্গুর সরকারি হাসপাতালে। এরপর করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়। এর পর আরও কয়েকটা দিন নিজেদেরকে আলাদা করে রাখা। অবশেষে কিডনির সফল অস্ত্রোপচার। জীবন যুদ্ধে রীতিমতো ক্লান্ত ওই বাংলাদেশি পরিবার। যদিও মা ও ছেলে-উভয়েই সুস্থ আছেন। ইতিমধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে তাদেরকে।

আরটিআইআইসিএস হাসপাতালের নেফ্রলজি বিভাগের প্রধান ডা: দীপক শঙ্কর রায় জানান, ‘স্বাস্থবিধি অনুযায়ী কিডনির দাতা ও গ্রাহকের শরীরে কোভিড রয়েছে কি না তার পরীক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যায় তাদের দুইজনই কোভিড পজিটিভ। কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই ওই দুই বাংলাদেশি নাগরিককে করোনার চিকিৎসার জন্য সরকার পরিচালিত বাঙ্গুর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই হাসপাতালে ডায়ালিসিসের ভাল ব্যবস্থা থাকায় ওই রোগীরও অনেকটা উপকারে আসে।’

করোনা নেগেটিভ আসার পর গত ১২ জুন বাঙ্গুর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান উত্তম ও তার মা কল্পনা দেবী। কিন্তু তারপরও ১৪ দিনের সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক থাকায় ওই রোগীর অস্ত্রোপচারের জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় নেওয়া হয়। অবশেষে সমস্ত বাধা বিপত্তি সরিয়ে রেখে গত ৩ জুলাই মা-ছেলের সফল অস্ত্রোপচার হয়।

উত্তমের কিডনি অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসক ডা: রায় জানান ‘আমরা যখন নিশ্চিত হই যে তারা উভয়েই করোনা মুক্ত, তার পরই কল্পনা দেবীর কিডনি তার ছেলে উত্তম ঘোষের শরীরে প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিই।’

ডা: রায় আরও জানান ‘কিডনির দাতা ও গ্রাহক-উভয়েই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে কল্পনা দেবীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে, তবে উত্তম ঘোষ’এর পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে আরও কয়েকটা হাসপাতালে রাখা হবে।’ 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ জুলাই ২০২০/বিডিপ্রতিদিন/মিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.