আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

সফল নেতৃত্বের কিছু কৌশল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৪-২৩ ০০:৪৫:৫৪

মুশফিকুল হক মুকিত :: একজন তরুণ পেশাদার বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরির সংক্ষিপ্ত মেয়াদের কারণে অনেক সময় নেতৃত্ব প্রদানে ইতস্ততবোধ করেন। নিজের ভিতরের আত্মবিশ্বাসকে যথাসময়ে জাগাতে পারেন না। অগ্রসর হতে পারেন না প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের ক্ষেত্রে। কিন্তু ভেবে দেখুন, আপনার চাকরির বয়সের মেয়াদ কম হতে পারে। তবে, আপনি হতে পারেন আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য দারুণ সম্পদ। যদি নিজের কল্যাণ চান সে জন্য আপনাকে নিরলসভাবে কোম্পানির সব বিষয়ের ওপর সূক্ষ্ম নজর রাখতে হবে। আপনার ভিতর থেকে উৎসাহ বাড়াতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করতে হবে। নতুন প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিয়ে কোম্পানির সুপারভাইজারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। অন্যদের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার সাফল্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে কেউ আপনাকে টেনে উপরে তুলবে না। আপনার ছোট ছোট সুসংগঠিত বিশেষ কৌশলের কারণেই সবাই আপনার প্রশংসা করতে বাধ্য হবে। আপনার অবস্থানকে মজবুত করতে হলে যেসব কৌশল অনুসরণ করতে পারেন—

১. কাজের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা : কাজের প্রতি নিজের আগ্রহ তৈরি করতে হবে। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে। যারা কাজটা সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করে, সেসব কর্মীর সহায়তা নিতে হবে। নিজের সেরা কাজ দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।  আপনার আজকের সাফল্যমণ্ডিত কাজই আগামীতে আপনার অগ্রসরতার ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে।

২. সৎ পরামর্শদাতা তৈরি করা  : একজন সুস্পষ্ট অভিজ্ঞ পরামর্শদাতা তার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে পেশাদারিত্বের পরামর্শ প্রদান করে থাকে। একদিকে তিনি যেমন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অংশ নেন। অন্যদিকে আপনার ব্যক্তিগত উন্নতির স্বার্থে কাজের মধ্য দিয়ে আপনাকেই এগিয়ে নিচ্ছেন। তাই যে কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সৎ পরামর্শদাতা হিসেবে সঠিক ব্যক্তিকে আপনার বাছাই

করে নিতে হবে। সৎ পরামর্শদাতারা সব সময় নিজের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে থাকে। যা এক সময় সেসব পরামর্শদাতা ঠেকে শিখেছেন। এদের যথাযথ সম্মান করুন।

৩.  পেশাদার সংগঠনগুলোতে অংশ নিন : অনেক প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা উন্নয়ন কিংবা কমিটিতে নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ থাকে। তেমনি এমন একটি গ্রুপের সঙ্গে আপনি অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। কেবল আপনার কাজের অগ্রগতির মধ্য দিয়ে সবার সামনে দ্রুত চলে আসবেন। পেশাদার সংগঠনগুলোর মধ্য দিয়ে নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি, নেতৃত্বদানের মানসিকতা তৈরি ও নিজেকে অন্য সবার কাছে মেলে ধরার সুযোগটা নিজেই তৈরি করে নিন। উল্লেখযোগ্যে সফল কর্মকাণ্ডগুলো পেশাদার সংগঠনগুলোর সদস্যদের কাছে কৌশলে তুলে ধরুন। যাতে তারা আপনাকে মূল্যায়ন করে। আপনিও ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কোনো আইডিয়া হয়তো তাদের কাছ থেকে পেতে পারেন!          

৪. আপনার উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরুন : আপনি যতই জানেন না কেন আপনার অর্জিত জ্ঞান যদি অন্যকে জানার সুযোগ না করে দেন কেউ আপনাকে দক্ষ বলে বিবেচিত করবে না। তাই অন্যকে তার কাজে সাহায্যে করুন। অন্যকে সাহায্য করলে তারাই আপনার সুনাম আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে। প্ল্যাটফর্ম খুঁজুন যেখানে আপনি আপনার কথা বলতে পারবেন। যা হতে পারে সভা, সেমিনার, মেলা কিংবা কোনো পেশাদার সংগঠনের মিলন মেলা। এমন বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপনার সহকর্মী কিংবা পেশাদার সংগঠনের মাঝে আলোচনা করুন যাতে অবাক হয়ে তারা আপনার কথা শুনতে আগ্রহী হবে। সহকর্মীরা পেশায় কীভাবে সফলতা অর্জন করতে পারে তার একটা ছক এঁকে দেখান। এমন কিছু করে দেখান যাতে তারা আপনার কাজের প্রতি মুগ্ধ থাকে।   

৫. নিজেকে প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে রাখা : নিজেকে প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে রাখা একটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। নিজেকে যখন আরেকজনের প্রতিযোগী মনে হবে তখন আপনি আপনার সেরা কাজটা অনেক সময় নাও করতে পারেন। কিন্তু সে চ্যালেঞ্জটা অন্তরে ধারণ করবেন। মনে রাখতে হবে, সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে হলে সৎ নেতৃত্ব প্রদানের মানসিকতা থাকতে হবে। অনেক অপ্রিয় মুহূর্তে ইমোশনাল না হয়ে মাথা গরম না করে পেশাদার মনোভাব দেখান। আপনার কর্ম পদ্ধতির কৌশলে আনুন ভিন্নতা।      

৬. আপনি কেন এগিয়ে যেতে চান প্রশ্ন করুন : প্রশ্নটি খুবই সাধারণ! তবে আমরা প্রায়ই এই সরল প্রশ্নটি এড়িয়ে যাই। কখনো ভেবেছেন কি আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্ম পরিধিতে আপনি কি কি নতুনত্ব যোগ করতে চান? তবে, তার যৌক্তিক কারণ বের করুন। আপনার সুপারভাইজারের সঙ্গে আলোচনা করুন। সুপারভাইজার যদি আপনার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন আপনি দ্রুত এগিয়ে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। যদি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে নিজেকে গড়ে তুলুন। মনের রাখবেন, পেশাদার ব্যক্তিরা পেশা পরিবর্তন করে না। বস বা সুপারভাইজার পরিবর্তন করে। যেখানে কাজের স্বাধীনতা আছে। ইতিবাচক মনোভাবের সহকর্মীরা আছে। যখন বুঝবেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুবই ধীরগতির হবে, কেবল তখনই আপনি আপনার অবস্থান পরিবর্তনের চিন্তা করবেন।

আপনি যদি এই কৌশলগুলো অবলম্বন করতে পারেন, তবে দ্রুত আপনি আপনার সাফল্যমণ্ডিত নেতৃত্বের পথে এগিয়ে যেতে পারবেন। আপনার নেতৃত্বের অগ্রসর হওয়ার কথা কখনো কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। সাফল্যমণ্ডিত পেশাদাররা কিন্তু তার কাছের মানুষের কাছে সাফল্য লাভের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে। সে অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করতে হবে। সুতরাং তৈরি করুন নিজেকে। দেখবেন সফলতা ঠিকই ধরা দিবে। আর ঝেড়ে ফেলুন যে কোনো মানসিক হতাশা। তাহলেই ত্বরান্বিত হবে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন