আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ভাত-রুটি কে কতটুকু খাব?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-০২ ০০:৪০:৫১

মানব শরীরের যে কোনো অঙ্গ তার প্রয়োজনমাফিক রক্ত থেকে গ্লুকোজ সংগ্রহ করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। মানুষ প্রতিনিয়ত যেসব কাজকর্ম করে থাকে তার জন্য শক্তির প্রয়োজন  হয়। শরীরের প্রতিটি কোষ জ্বালানি খরচ করে শক্তি উৎপন্ন করে থাকে। প্রতিটি ব্যক্তির কাজকর্মের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের জ্বালানির প্রয়োজন হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে যত বেশি কাজকর্ম করবে তার তত বেশি জ্বালানির প্রয়োজন হবে। মানব শরীর আরও এক ধরনের বস্তুকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে যা ফ্যাটি এসিড ও ট্রাইগ্লিসারাইড। এসব ফ্যাটি এসিড ও ট্রাইগ্লিসারাইড তেল ও চর্বি জাতীয় বস্তু হজমের ফলে উৎপন্ন হয় এবং গ্লুকোজের মতো রক্তে শোষিত হয়ে সারা শরীরে চালিত হয়ে থাকে এবং শরীরের প্রতিটি কোষ প্রয়োজন মোতাবেক রক্ত থেকে এসব বস্তু সংগ্রহ করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে শক্তি উৎপন্ন করে।

আমাদের জনগোষ্ঠীর প্রধান খাদ্য ভাত, তাই অন্যভাবে বলতে হবে ভাত আমাদের শক্তির প্রধান উৎস। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ ও ভাত একত্রে খেলে মানব শরীরের প্রধান চাহিদা জ্বালানি ও শরীর গঠন এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষ পাওয়া যায়। শর্করা, তেল-চর্বি ও আমিষ মানব শরীরের ৯০ শতাংশ প্রয়োজন মেটায় যা মাছ ও ভাতে পাওয়া যায়। ভাতে শর্করা এবং মাছে তেল-চর্বি ও আমিষ পাওয়া যায়। বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে মানুষের অনেক কাজকর্মই যন্ত্রের মাধ্যমে করা হয় বলে, প্রতিটি মানুষের কাজ কর্মের পরিমাণ আগের সময়ের চেয়ে অনেক কমে গেছে। যার ফলে কাজকর্ম সম্পাদন করার জন্য জ্বালানি প্রয়োজনও অনেকাংশে কমে গেছে। জ্বালানির প্রয়োজন কম হওয়া সত্ত্বেও আমাদের অনেক জনগণ আগে যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করত এখনো সেই একই পরিমাণ খাদ্য খেয়ে যাচ্ছে, যার দরুন রক্তে অধিক পরিমাণে জ্বালানি (গ্লুকোজ, ফ্যাটি এসিড ও ট্রাইগ্লিসারাইড) অব্যবহূত অবস্থায় থেকে যাচ্ছে। রক্তে প্রয়োজনের অপেক্ষা অধিক জ্বালানি বস্তু বেশি থাকতে থাকলে এসব বস্তু শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হতে থাকে এবং ব্যক্তি মোটাসোটা হয়ে যায়। ওজন বৃদ্ধি ঘটে। প্রয়োজনের অধিক খাদ্য গ্রহণের ফলে রক্তে অধিক গ্লুকোজ বিদ্যমান থাকে। গ্লুুকোজ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি থাকলে ইনসুলিন নামক হরমোনের দ্বারা অতিরিক্ত গ্লুুকোজ শরীরে চর্বিতে রূপান্তর  হয়ে জমা হতে থাকে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাদ্য গ্রহণ অব্যাহত রাখেন তাদের শরীরে দিনে দিনে ইনসুলিনের স্বল্পতাই ডায়াবেটিস সৃষ্টি হয়। প্রতিনিয়ত প্রয়োজনের অধিক খাদ্য গ্রহণের ফলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস সৃষ্টি হয়। তবে ডায়াবেটিস সৃষ্টিতে বংশগত প্রবণতা ও অলস জীবনধারা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রয়োজনের অধিক চর্বি জাতীয় খাদ্যবস্তু এবং শর্করা গ্রহণের ফলে রক্তে ফ্যাটি এসিড ও ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ অধিক থাকে। রক্তে অতিরিক্ত মাত্রার ফ্যাটি এসিড ও ট্রাইগ্লিসারাইড কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। আমরা সবাই জানি রক্তে দীর্ঘ সময় ধরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে, ধীরে ধীরে হার্ট ব্লকের সৃষ্টি হয়। যা বর্তমান সময়ে প্রধান হৃদরোগ হিসেবে বিবেচিত। শরীর সুস্থ রাখার জন্য, হৃদরোগ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য শারীরিক প্রয়োজন মোতাবেক খাদ্যবস্তু গ্রহণ করতে হবে। কোনোভাবেই প্রয়োজনের অধিক মাত্রায় খাদ্যবস্তু গ্রহণ করা যাবে না। আপনি প্রয়োজনের অধিক খাদ্য গ্রহণ করেছেন কিনা তা আপনার শারীরিক ওজনই বলে দেবে। যেসব ব্যক্তি খুবই অল্প পরিমাণে কায়িকশ্রম সম্পাদন করেন তারা ভাত, রুটি, চিনি, আলু ও তেল-চর্বি, এসব জ্বালানি বস্তু অবশ্যই অল্প পরিমাণে গ্রহণ করবেন এবং উদর পূর্তির জন্য কম চর্বিযুক্ত মাছ- মাংস, ফলমূল এবং শাকসবজি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে পারবেন। আর যারা কায়িকশ্রম সম্পাদন করেন তারা এসব খাদ্য বেশি পরিমাণে খেতে পারবেন।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট), সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ।


শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন