আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

অ্যালার্জিজনিত নাকের সমস্যা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-০৬ ০০:৪৯:০২

অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু :: বাতাসে ভেসে বেড়ায় এমন অতি ক্ষুদ্র কণা যা নাকের সংস্পর্শে এলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তাদেরকে অ্যালার্জেন বলে। এ ধরনের কণাগুলো বছরের বিশেষ সময় (ফুলের রেনু) অথবা সারা বছর (ডাস্ট মাইট) থাকতে পারে। American Academy of Allergy, Asthma & Immunology (AAAAI) এর তথ্য মতে আমেরিকার ৮% এবংবিশ্বে ১০%-৩০% মানুষ অ্যালার্জিজনিত নাকের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এই সমস্যাকে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস (Allergic Rhinitis) বলা হয়।

লক্ষণসমূহ : বার বার হাঁচি হওয়া, নাক থেকে পানি পড়া, নাক বন্ধ হওয়া, নাক ও গলায় চুলকানি, কাশি, চোখ চুলকানো এবং পানি পড়া।

প্রকারভেদ : সিসনালঃ বছরের বিশেষ সময় বিশেষত শরতকাল ও বসন্তকাল (ফুলের রেণু)

পেরেন্নিয়াল : সারা বছর (ডাস্ট মাইট, পোষা প্রাণীর লোম)

ঝুঁকি বৃদ্ধিকারী উপাদানসমূহ : তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ধূমপান, রাসায়নিক পদার্থ, বায়ুদূষণ, প্রসাধন সামগ্রী, ধোঁয়া, দীর্ঘদিনের জমে থাকা কাপড়।

রোগ নির্ণয় : সাধারণ সমস্যায় পরীক্ষা লাগে না। তবে আলার্জির উপাদান ও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে skin prick test, RAST ইত্যাদি টেস্ট করতে হয়। রক্ত পরীক্ষা বিশেষত, ইয়োসিনোফিলের মাত্রা বেশি আছে কিনা।

সিরাম আইজিই’র মাত্রা : অ্যালার্জি রোগীদের ক্ষেত্রে আইজিই’র মাত্রা সাধারণত অ্যালার্জি রোগীদের ক্ষেত্রে আইজিই’র মাত্রা বেশি থাকে।

স্কিন প্রিক টেস্ট : এই পরীক্ষায় রোগীর চামড়ার ওপর বিভিন্ন অ্যালার্জেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং এই পরীক্ষাতে কোন কোন জিনিসে রোগীর অ্যালার্জি আছে তা ধরা পড়ে।

চিকিৎসা পদ্ধতি : অ্যালার্জেন পরিহার: যেসব বস্তুর/খাবার এর প্রতি আপনি সংবেদনশীল সেগুলো এড়িয়ে চলুন।

ওষুধ প্রয়োগ : প্রয়োগ করা যেতে পারে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধঃ হিস্টাসিন, সেট্রিযিন, লরাটাডিন, ফেক্সোফেনাডিন, রুপাটাডিন।

নাকের ড্রপ : অক্সিমেটাজোলিন, জাইলোমেটাজোলিন। এ ধরনের ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে ‘রিবাউন্ড ফেনমেনন’ হয় অর্থাৎ ঔষধ বন্ধ করলে নাক অতিরিক্ত বন্ধ অনুভূত।

নাকের স্টেরয়েড : দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে হয়। ‘রিবাউন্ড ফেনমেনন’ হয় না।

অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি : অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুথেরাপির মূল উদ্দেশ্য হলো যে ‘মাইট’ থেকে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস সমস্যা হচ্ছে সেই ‘মাইট’ অ্যালার্জেন স্বল্প মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়। ক্রমান্বয়ে সহনীয় বেশি মাত্রায় দেওয়া হয় যাতে শরীরের অ্যালার্জির কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়। তবে শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়ার পরিবর্তন ঘটায় বা শরীরের অ্যালার্জির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে।

করণীয় : ঘর পরিচ্ছন্ন রাখুন, ঘরে কাগজ জমতে দেবেন না, বিশেষ মৌসুমে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না, নাকে মাস্ক ব্যবহার করুন, কার্পেট নিয়মিত পরিষ্কার করুন, পুরাতন কার্পেট সরিয়ে ফেলুন, পোষা প্রাণীকে নিয়মিত গোসল করান।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন