Sylhet View 24 PRINT

মেদ ঝরলে কি পাকস্থলীর আকারও কমে! পেটের ভেতর কিন্তু ঘটে নানা কাণ্ড

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৯-২৭ ২১:৩৩:৩৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: থলথলে পেট কমাতে হবে। মেদ ঝরিয়ে ছিমছাম হতে গেলে খাওয়া কমাতে হবে। আর খাবার কোথায় যায়-পাকস্থলী। তাই পাকস্থলীকেই ধরেবেঁধে ছোট করে দিলে বেশি খাবার আর আঁটবে না। হুড়হুড়িয়ে মেদ কমে টানটান শরীর হয়ে যাবে। এমন সব ধারণা আছে অনেকেরই।

ইংরাজিতে একটা কথা আছে ‘Shrink your stomach’, তার মানে হল পাকস্থলীর আকারই কমিয়ে দাও। এবার আসল প্রশ্নটা হল, কম খাবার খেলে পাকস্থলী কি সত্যিই আকার-আয়তনে কমে যায়। মানে বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে সঙ্কুচিত হয়?


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না, এটা কখনওই সম্ভব নয়। পাকস্থলী এমন একটা অঙ্গ যার সঙ্কোচন আর প্রসারণ চলতেই থাকে। ভরপুর খাবার তার থলিতে ঢুকলে সে আকারে বেড়ে যায়, তারপর ক্রমাগত নিজেকে বাড়িয়ে আর কমিয়ে সে খাবার হজম করে। পুষ্টি রস নিংড়ে অবশিষ্টাংশ ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদন্ত্র হয়ে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। পাকস্থলী থেকে খাবার বেরিয়ে গেলেই সে তার স্বাভাবিক আকারে ফিরে আসে। তাই, যদি ধারণা থাকে যে মেদ কমলে পাকস্থলীও আকারে ছোট হয়ে যায় বা কম খেলে তার আয়তন কমে যায়, তাহলে সেটা ভুল।

কখনও বাড়ে, কখনও কমে, নিজেকে বদলাতেই থাকে পাকস্থলী

দৈর্ঘ্যে মোটামুটি ২৫ সেন্টিমিটার। আমাদের খাদ্যনালী আর ডুওডেনাম (ক্ষুদ্রান্তের গোড়ার অংশ)-এর মাঝে থলির মতো অংশ। পাকস্থলীর পিছনের দিকে থাকে অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস। পাকস্থলীর দুটো স্ফিংটার থাকে। ১.খাদ্যনালী, যেখান থেকে খাবার এসে পৌঁছায় থলিতে। ২. পাইলরিক স্ফিংটার (Pyloric sphincter), যা অপাচ্য খাবারকে ডুওডেনাম হয়ে ক্ষুদ্রান্তে পাঠিয়ে দেয়। এখানে পেরিস্টলসিস কাজ করে, যা খাবারকে চাপ দিয়ে অন্ত্রে পাঠায়।এটা হল মোটামুটি পাকস্থলীর গঠন।

এবার আসা যাক তার আকারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের যখন পেট খালি থাকে অর্থাৎ পাকস্থলীতে কোনও খাবার পৌঁছায় না, তখন তার আয়তন থাকে লম্বায় ১২ ইঞ্চির মতো আর চওড়ায় প্রায় ৬ ইঞ্চি। এক লিটারের মতো খাবার নিজের মধ্যে ভরে রাখতে পারে পাকস্থলী। এই অঙ্গ স্থিতিস্থাপক। নিজেকে প্রয়োজন মতো বাড়িয়ে ও কমিয়ে নিতে পারে। বেশি খাবার ঢুকলে পাকস্থলী তার আয়তন বাড়িয়ে নেয়। এরপরে নিজের দেহ প্রাচীরে যতগুলো গ্রন্থি আছে তার থেকে পাচক রস বের করে খাবার পরিপাক করতে শুরু করে। এই গ্রন্থিগুলোকে বলে গ্যাস্ট্রিক গ্ল্যান্ড (Gastric Glands) । এর থেকে যে গ্যাস্ট্রিক রস বের হয় তাতে থাকে হাইড্রক্লোরিক অ্যাসিড ও পেপসিন এনজাইম। অ্যাসিডের কাজ হল খাবারের সঙ্গে মিশে থাকা ব্যাকটেরিয়া বা প্যাথোজেনকে নষ্ট করা ও পেপসিন এনজাইমের কাজ করার পরিবেশ তৈরি করা। পেপসিন এনজাইমের কাজ হল খাবারের মধ্যে প্রোটিন উপাদানকে ভেঙে, পিষে পেপটাইড তৈরি করা। এইসব কাজের জন্য পাকস্থলীকে অনবরত সংকুচিত ও প্রসারিত হতে হয়। এভাবেই খাবার পাচিত হতে শুরু করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকস্থলী তার মর্জি মতোই নিজেকে বাড়াতে ও কমাতে পারে। তার মানে এই নয় যে কম খেলে পাকস্থলীর আকার কমে যাবে। বরং পাকস্থলী সঙ্কেত দেবে এবার খাওয়া কমানো উচিত। না হলে পেট ফুলেফেঁপে উঠবে। সেটা কীভাবে?

পাকস্থলীর সঙ্গে ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব আছে মস্তিষ্কের, কথা চালাচালি হয়

পাকস্থলীর আকারের সঙ্গে ক্ষুধা হওয়া বা না হওয়ার একটা যোগসূত্র আছে। পাকস্থলীই বলে দেয় কখন কতটা খেতে হবে আর কখন থামতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মস্তিষ্কের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে রেখেছে পাকস্থলী। তাদের মধ্যে খবর আদান-প্রদান করে ভেগাস নার্ভ। আর পাঁচটা স্নায়ুর মতো ভেগাসেরও কাজ বার্তা পৌঁছে দেওয়া, তবে পাকস্থলীর ক্ষেত্রে সে একটু অন্যভাবে কাজ করে। যখন থলির ভেতরে খাবার ভর্তি থাকে এবং পাকস্থলীর আকারও বেড়ে যায়, তখন ভেগাস স্নায়ু মারফৎ সেই খবর পৌঁছে যায় মস্তিষ্কে। খবর পেয়ে মস্তিষ্ক তখন বার্তা পাঠায় যে আর খাওয়ার দরকার নেই। এবার থামতে হবে না হলে পেট ফুলে উঠবে। এই অনুভূতি থেকেই আমরা বলি যে পেট ভরে গেছে বা আর ক্ষুধা নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেগাস স্নায়ু আরও একটা কাজ করে। পাকস্থলীর হয়ে সে মস্তিষ্কের কাছে সংকেত পাঠায় কখন ও কীভাবে বিপাক হরমোনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ঘ্রেলিনকে বলা হয় ‘Hunger Hormone’ কারণ এটি মানুষের ক্ষুধার ওপর প্রভাব খাটায়। মস্তিষ্কের সাহায্যে এই হরমোনের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে পাকস্থলী।


পাকস্থলীর আকার কমানো যায় না, তবে ক্ষুধাকে বশে রাখা যায়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকস্থলীর আকার নিয়ে না ভেবে বরং বেশি খাওয়ার প্রবণতাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেই চেষ্টা করাই ভাল। ক্ষুধাকে বশে রাখতে হলে কিছু নিয়ম মানতেই হবে।

যেমন, একবারে বেশি না খেয়ে সারাদিনে অল্প অল্প করে খাবার খাওয়া উচিত। স্টার্চ, কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে না খেয়ে বরং কিছুটা বিরতি দিয়ে খাওয়াই ভাল। কারণ প্রোটিন হজম হতে সময় লাগে। তার সঙ্গে যদি স্টার্চ মিলে যায় তাহলে তা ফারমেন্ট হয়ে গ্যাস তৈরি করে, পেট ফুলে ওঠে।

বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ভাল। কার্বোহাইড্রেট পরিমাপ মতো খেয়ে বেশি করে সবুজ শাকসব্জি, বাদাম, ফল, আমন্ড এগুলো খেলে ক্যালোরি সঠিক পরিমাণে পাওয়া যাবে। মেদও জমবে না।




সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০/ দ্য ওয়াল / জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.