আজ মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

'আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো, তুমি পারবে না'

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০২-১৬ ০১:০৭:০৩

রিমি রুম্মান, যুক্তরাষ্ট্র :: মানুষের বিচিত্র রকমের শখ থাকে। একদা চৌধুরী সাহেবের শখ ছিল, ছবি তোলা। বড়, ছোট নানান রকমের ক্যামেরা ছিল। সেসব দিয়ে ছুটির দিনে বাইরে ঘুরতে গেলেই আমায় নানান এঙ্গেলে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলতো। পাহাড়, সমুদ্র কিংবা অরণ্যের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কখনো ডানে তাকাও, বাঁয়ে তাকাও, চুলগুলো একপাশে সরাও ... এমন সব নির্দেশনা দিতো। আমি একরাশ বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কালের বিবর্তনে এ থেকে কিছুটা নিষ্কৃতি মিলেছে যদিও।

কখনো হারমোনিয়ামে গান গাওয়ার শখ। শ্রোতা আমি একজনই। সুরে, বেসুরে যা-ই গায়, আমি হাসিহাসি মুখ করে সামনে বসে থাকি, বসে থাকতে হয় বলে। যেন গভীর মনোযোগী শ্রোতা। এতে দ্বিগুণ তিনগুণ উৎসাহিত হয়ে তিনি একের পর এক মান্নাদে গাইতে থাকেন বিরামহীন। ব্যস্ততা বেড়েছে, তাই বহুদিন হয় হারমোনিয়াম, তবলা ঘরের এককোণে অসহায় পড়ে আছে। আমারও খানিক মুক্তি মিলেছে।

মাছ ধরার শখ পুরনো তাঁর। তিন ধরনের জাল আছে সংগ্রহে। আর বড়শী আছে এগারোটি। কোনটি বড় মাছের বড়শী, কোনটি ছোট। মাছ ধরার সঙ্গীও আমিই। রাত দুটোয় রওয়ানা দিয়ে ভোর পাঁচটায় পৌঁছাতাম মেরিল্যান্ডে। সে এক রাজকীয় প্রস্তুতি। নিজেদের জন্যে পর্যাপ্ত খাবার, মাছের আদার (খাবার), ব্যথানাশক ঔষধ, মাছ ধরার লাইসেন্সসহ কোন কিছুই নিতে ভুল হয় না। দিনভর বিশাল বড় মাছ বড়শী দিয়ে টেনে তোলা চাট্টিখানি কথা নয়! মাছেরা বড়শী থেকে ছুটে যেতে চায়, আর বড়শীওয়ালা তাঁদের টেনে তীরে তুলতে চায়। সে এক হৃদয়বিদারক যুদ্ধ।

বাড়ি ফিরে ক্লান্তিতে তিনি যখন বিছানায় গা এলিয়ে দেন, আমি সেইসব মাছ গাড়িতে নিয়ে ছুটি বন্ধুদের বাড়ির উদ্দেশ্যে, সবাইকে ভাগবাটোয়ারা করে দিবো বলে। কখনো বাড়ি থেকে ২৫/৩০ মিনিট দূরে ব্যাটারি পার্ক, কিংবা ক্যানার্‌সি পিয়ারে নদীর ধারে মাছ ধরতে যাই। এ এমন এক নেশা, কখন যে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত ভোর হয়, দিনের আলো ফোটে, সূর্যের কিরণ এসে ভেসে যায় চারপাশ, সেদিকে ভ্রূক্ষেপ থাকে না। কনকনে শীতের দিনকেও বসন্তদিন মনে হয়। আমি সামনেই পার্ক করা গাড়িতে হিটের উত্তাপে বসে আয়েশ করে কফির কাপে চুমুক দেই, গান শুনি, কিংবা ফোনে কথা বলি। কখনো বা কাছে গিয়ে বড়শী থেকে মুক্তি পাওয়া অর্ধ আহত বিশালাকৃতির মাছকে লাফাতে দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি। আমার তবুও যেতেই হয় সাথে।

জীবনের বিচ্ছিন্ন এই সময়গুলো মনে হতে হতে 'বেলাশেষে' সিনেমার শেষদিকের দু'টি সংলাপ মনে পড়ে গেলো।

১। পঞ্চাশ বছরের বিবাহিত জীবনের এক পর্যায়ে স্বামী বললেন, 'এতদিন পর যেন আরও ভালো করে বুঝতে পেরেছি, প্রকাশক আর লেখকের সম্পর্কটা স্বামী-স্ত্রী'র মতন। লেখক থাকে ভিতরে, আর বাইরে থাকে প্রকাশক। তুমি আমার জীবনের লেখক, আরতি।

২। প্রার্থনারত আরতি দেবীকে স্বামী জিজ্ঞেস করলেন, ঠাকুরের কাছে কী চাইলে? আরতি দেবী স্বামীর বুকে গভীর ভালোবাসার স্পর্শ রেখে বললেন, ঠাকুর যেন আমার আগে তোমাকে নিয়ে নেয়। কারণ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো, কিন্তু তুমি আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না।
কথাগুলো সত্যিই সুন্দর।

প্রিয়জনকে নিয়ে ভালো থাকুন।
সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন