আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

ওপারে মুসলমান, এপারে হিন্দু, নীপিড়িতরা মানুষ কিন্তু

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-০৪ ০০:৪২:০৬

বিপ্লব কুমার পোদ্দার :: অপার কৃতজ্ঞতা আমার সকল শ্রদ্বেয় পাঠকের প্রতি যাঁরা আমার গেল শুক্রবারের লেখাটি পড়েছেন, জানিয়েছেন তাদেঁর মুল্যবান ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া।

লন্ডনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর গত সফরের সময় শ্লোগান দেয়া হল " হরে কৃষ্ণ হরে রাম,শেখ হাসিনার বাপের নাম"। ঘটনাটির  দুসপ্তাহ হয়ে গেল।  ধর্মকে জড়িয়ে যারা  এ ঘৃনিত ঘটনাটি ঘটালো, এত দিনেও তাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা কোন প্রতিক্রিয়া বা পদক্ষেপ দেখিনি। এ ঘটনার অব্যহতিত পর ঘটনার নেতৃত্ব দেয়া ব্যাক্তিটি ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (স:) কে জড়িয়ে ভূল ব্যাখ্যা দিলেন। এসকল ঘটনাগুলো স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হল। কিন্তু,জামায়াতে ইসলামী সহ অন্যান্য ইসলামী দলগুলো এব্যাপারে রহস্যজনকভাবে নীরবতা পালন করছে। এ নীরবতার এক ধরনের অর্থ দাড়ায়,সায়। অর্থাৎ,তারা যা করবেন তাই সঠিক। ঘটনার মূল হোতার সাথে নেতাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের দহরম-মহরম কি জামায়াতের নিশ্চুপ থাকার কারন কিনা; সেটি জানা নেই।

হয়ত আজ ভোটের জন্যই বিএনপির দু-একজন বুদ্ধিজীবির মত, সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভাববার দরকার কি? এদেশ তো নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশ। এ ভাবনা থেকেই হয়ত তারা,এ ধরনের অমার্জনীয় ঘটনাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। কিন্তু সার্বিকভাবে এ ঘটনা এড়িয়ে যাবার চেষ্টার বিষয়টি দেশের কোন বিবেক ও বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছেন না। সব ধর্ম আর শ্রেনী পেশার মানুষ এ ঘটনার সাথে জড়িতদের ব্যাপারে তাদের নিন্দা জানাচ্ছেন। আর এ ঘটনাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টার মধ্য দিয়ে বিএনপি তার রাজনৈতিক দৈন্যতাই প্রমান করছে।

আমি কামনা করি না তবে আশংকা করি,এ ঘটনার জন্য দলটিকে আখেরে বড় মুল্য দিতে হতে পারে।

আমার প্রতিবাদের জায়গাটি, আমি হিন্দু বলে নয়। আমার আঘাতের জায়গা হলো, মানুষ হিসেবে ধর্ম ও মানুষের প্রতি অসন্মান।

ভারতের গুজরাটে জুম্মার নামাজরত ধর্মপ্রান মুসল্লীদের উপরে কিছু উগ্রপন্থী হিন্দুদের ন্যাক্কারজনক, বর্বর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানাই। ধর্মকে নিয়ে যারা রাজনীতি করে, বিভাজনের সৃষ্টি করে একটা জাতিকে বিভক্ত করতে চায়, তারা কতটা মানুষ নামের যোগ্য তা আমার জানা নেই। ভারতের সরকার এবং নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ, এই উগ্রপন্থীদের আপনারা নিয়ত্রন করুন। নতুবা এ সাম্প্রদায়িক বিষবাস্পের আগুন কিন্তু আপনাদেরও পুড়িয়ে দিতে পারে। যার অনেক উদাহরনের সাক্ষী ইতিহাস। তবে,ইতিহাস থেকে যে আমরা শিক্ষা নেই না, তাও ইতিহাসের পরিহাস।

আবার ফিরি বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠে। সরকারের কৌশলের খেলায় বিএনপি আজ এখানে পরাজিত। বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ।  ব্যক্তিগত চিকিৎসক বেগম খালেদা জিয়ার পঙ্গুত্বের আশংকা করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার যদি সরকারের অবহেলায় স্বাস্থগত কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তার জন্য বাংলাদেশের প্রতিহিংসার রাজনীতিকে বড় মুল্য দিতে হতে পারে।কারন,বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে খালেদা জিয়াকে মুছে ফেলবার ক্ষমতা কারো নেই।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশের নাগরিকরা আজ পরিশ্রান্ত, কিছুটা তন্দ্রাছন্ন। তাই আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশের মানুষের জেগে উঠা। পরিবারতন্ত্র, গনতন্ত্রের নামে সুবিধাতন্ত্র, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর লুটপাটের সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এ কাজটা এখনকার রাজনৈতিক দলগুলো করবে না। এর শুরুটা করতে হবে আপনার আমার মতো সহ-নাগরিকদেরই হাতে হাত ধরে। কেননা, দেশটা কোন রাজনৈতিক দলের নয়, দেশটা আপনার-আমার মতো সাধারন মানুষের।

আজ হোক,কাল হোক সুন্দর সকাল আসবেই। এমন সপ্নমাখা বিশ্বাস নিয়েই পথ চলি সুন্দর,সত্য আর ন্যয্যতার জন্য।

লন্ডন ৩রা মে
লেখকঃ লন্ডনে কর্মরত আইনজীবি,সমাজকর্মী।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন