আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

বন্ধুবর আব্দুল্লাহ চেয়ারম্যানকে স্মরণ করছি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-৩০ ১৪:২৪:৫১

মনিরউদ্দিন মাস্টার :: আব্দুল্লাহ’র মৃত্যুতে গোয়াইনঘাট জৈন্তার ও বৃহত্তর জৈন্তাবাসী একজন জ্ঞানী মানুষকে হারিয়েছি, তাই শোকাহত আমরা।

একজন মানুষ সারাজীবনে একটি ব্যক্তিগত ইতিহাস সমাজে তৈরী করে যান। ভালমন্দ ব্যবহারের মধ্যে ফুটে ওঠে। আমি বৃহত্তর ফতেহপুরের চেয়াম্যান হিসাবে গোয়াইনঘাটে তার সাথে একত্রে ছিলাম। আমরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা নিয়মও-অনিয়ম নিয়ে অনেক প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু আব্দুল্লাহ ভাই কোন সময় লোভ লালসায় পড়ে তার নীতি বিসর্জন দিতে দেখিনি। আসলে তিনি একজন দেশ প্রেমিক লোক ছিলেন। পরে আবার জৈন্তা  উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে ছিলেন তিনি। আমার প্রায় ২-৩ বছরের  বড় ছিলেন। রাজনীতির মাঠে প্রথমে তিনি ন্যাপ-কমিউনিষ্ট সমর্থক ছিলেন। পরে তিনি আওয়ামিলীগে চলে যান। কারন বামপথকে ধারন করতে পারেননি, সেটা তার দূর্বল পয়েন্ট। অনেকে বলতেন কমিউনিষ্ট চিন্তা ধারার কারনে তিনি চির কুমার থেকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে রকম একেবারে কমিউনিষ্ট হতে পারেননি। তবে কেন তিনি বিবাহ বন্ধনে যাননাই তা বুঝতে পারিনাই। সে হিসাবে তিনি কমিউনিষ্ট মত বাদকে ধারণ করেননি। তবে তিনি আমার মতো শত, শত, হাজার, হাজার লোকের চেয়ে অনেক ভালো লোক ছিলেন। অনেকে বলেন চিকনাগুল বাজার ধ্বংসের মূলে তিনি ছিলেন এবং ধর্মান্ধতায় উদ্বেল হয়ে জৈন্তার কতেকটি নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ী পুড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু তা সত্য নয়। কারণ আজ কাল ভালো মানুষের পরামর্শ কেউ নেয়না। সমাজে সবচেয়ে বড়গুণ কমিউনিজম (সাম্যবাদ) এবং সবচেয়ে গুনী কমিউনিষ্ট (সাম্যবাদী), আব্দুল্লাহ চেয়াম্যান তা হতে পারেননি। আমরা চিন্তাকরে দেখতে হবে শাহ জালাল শাহ পরান, ও ৩৬০ আউলিয়ার দিকে, তারা কেহই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। কারণ তারা সুদুর ইয়ামেন দেশে মানবতা ও সৃষ্টির প্রেমে পড়ে প্রকৃতির সাথে মিলে যাওয়ার ভ্র্রতি হয়ে যান। তারা জীবন গড়েছিলেন প্রকৃতির শিক্ষার আলোয়। প্রকৃতি যে ভাবে তার সমস্ত শক্তিকে বস্তুর প্রেমে নিবেদীত করেছেন, ঠিক সেভাবেই তারা চরিত্র গড়ে তুলে ছিলেন। তারা সমস্ত সিলেট দখল করেও ক্ষমতায় যাননি। ক্ষমতার লোভে পড়ে একজন মানুষেরও ক্ষতি সাধন করেননি। ব্যাপক মানুষ ও মানবতায় তারা সকল জীবের সাথে মিশে যান। তারা ঝুপড়ী ও বন জঙ্গলে কাটাতেন দিন। তারা কোন মাছ, মাংশ, ও পাখি শিকার করে খাননি। তাদেরকে প্রায় কোন না কোন টিলায় পাওয়া যেতো। মানুষের সকল সংস্কৃতিকে তাদের সংস্কৃতি বলে মেনে নিয়েছিলেন। মনে প্রাণে তারা সৃষ্টি প্রাণী জগৎ কে তাদের জীবনের চেয়ে ভাল বাসতেন। তারা যদিও মুসলান ছিলেন কিন্তু তারা ধর্ম প্রচার করেননি, জাহির করেননি নিজেদেরকে। কিন্তু সমস্ত সিলেট জেলা সহ তাদের নাম শুনিয়া মুসলমান হয়েছিলেন মানুষ। তারা কাউকে ধর্মান্তরিত করেননি। তারা চাঁদা তুলেনিয়ে মসজিদ, মাদ্রাসা, বানাননি, কোন ওয়াজ নছীহত করেননি, তারা মানব সংস্কৃতি ধারণ করেছিলেন। জীবন সংস্কৃতি ছিল তাদের প্রাণ শক্তি। তারা ক্ষমতাকে পায়ে ঠেলে দিয়েছিলেন। তাদেরকে বন জঙ্গলে পশু,পাখিও মেনে চলতো, বাঘেও সালাম টুকতো, অনেকে জানিনা তারা এতো শক্তি কোথায় পেয়েছিলেন। তাদেরকে এতো এবাদত বন্দেগী করতেও দেখা যায়নি। তারা বিশ্ব প্রকৃতির শিক্ষায় সাম্যবাদী কমিউনিষ্ট ছিলেন। শোষন-শাসন মহাশক্তি বিরোধী ছিলেন, তাই তারা এতো সম্মানী হয়েছিলেন। ব্যক্তিগত লোভ লালসা নিয়ে দিন কাটাননি। প্রকৃতির যে ভাবে হরদমে বিরামহীন মানুষের পশু পঙ্কি পালন কর্তা তারা ও সেরুপ ছিলেন। এতো শক্তিধর তারা সত্যতায় জীবন গড়ে হয়েছিলেন। আমরা যদি চিন্তাকরি তা হলে দেখবো তাদের বিন্দু মাত্র হিংসা বিদ্ধেষ ছিলনা। শাহ জালাল, শাহ পরানের নাম শুনলেই প্রকম্পীত হয়ে উঠে মানুষ ও বিশ্ববাসী।

শাহ জালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করণে অনেক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নাম দেওয়ার সাথে সাথে সবার মুখ বন্ধ হয়ে গেল কারন কি ? কারণ মানুষের প্রতি  তাদের আত্বত্যাগ, কমিউনিষ্ট চিন্তা চেতনা, দেশ প্রেম, মানব প্রেমের সংস্কৃতিগত জীবন গড়ে তুলেছিলেন। ঠিক সেরুপ জিয়া আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর হাসিনা ওয়াজিদের মুখে শাহ জালালের নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে তা মেনে নিল দেশ সহ বিশ্ববাসী। বিএনপি, আওয়ামিলীগ ও জামাত শিবির সহ সারাদেশের মানুষ এক বাক্যে মেনেনিতে হয়েছে। তারা প্রাকৃতিক আলোতে আলোকিত হয়েছিলেন। অনেকে না বুঝে প্রকৃতি আবার কি বলে হাস্যরস দেখান। কিন্তু প্রকৃতির শক্তি ছাড়া এক মুহুর্তকাল বাঁচতে পারবেননি কেউ, প্রকৃতির বাহিরে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। আসলে বিশ্ব প্রকৃতিই সব। বিশ্বের জন্ম লগ্ন হতে তা আরম্ব হয়েছে, এখনো অবিরত চলছে, তাদের বস্তু, প্রাণী, প্রতিপালন থেমে যাবেনা। আবাহমান কাল পর্যন্ত চলতে থাকবে। এবং ৩৬০ আউলিয়ার ধাপটও থাকবে চিরকাল। আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর দেওয়ার পর কেন মানুষ থেমে গেল ? কোন দলের ভয়ে, না কামান বন্দুক, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহীনি, হিটলার বাহিনীর ভয়ে, না কোন ধর্মীয় উগ্রবাদের ভয়ে, না তাদের কোন আত্মীয় স্বজনের ভয়ে, তার পিছনে ছিল আত্বত্যাগেরগুণ, সাম্যবাদী কমিউনিষ্ট শক্তি। সর্বস্থরের মানুষের ভয়, মানব সংস্কৃতির ভয়, কারণ কখন জানি ঢোল, ডপকি বেজে উঠেযায়। গান গেয়ে গেয়ে লাকড়ী ভাঙ্গার ভয়, তারা যদি কোন ধর্ম উগ্রভাবে ধারণ করতেন তাহলে সর্বস্থরের মানুষ বের হতোনা। গান বাজনা সব মানুষ বের হয়ে যাবে বলে কেউ রাও করেন নাই। মানব সংস্কৃতির ঢেউ উঠলে উপায় থাকবেনা। তারা মানব সংস্কৃতিকে লালন করে গিয়েছেন। ভাওতা নয় সত্যিকারের আত্বত্যাগের সংস্কৃতি দেশ ও দুনিয়ায় জাহির করেছেন। পুঁজিহীন মানুষের পিছনে আজীবন কাল তারা কাটিয়েছেন। পৃথিবী থাকলে সারা বিশ্বের বুকে থাকবে সে সংস্কৃতি। মানবীয় ভয়ের কারণে তা সকলেই মানতে হয়। চীন, রাশিয়ায়, সমাজিক বিল্পব হওয়ার সত্ব্যেও সংস্কৃতিক বিল্পব করে মানুষের মনের মধ্যে সাম্যবাদী আদর্শ ঢুকাতে না পারার কারণে মহামতি লেলিনে ছবি উল্টে দিয়েছিল। বিভাজনের সংস্কৃতি দিয়ে। তাই একটি মানব সংস্কৃতিই মানুষের মধ্যে ঢুকাতে না পারলে বিশ্ব ধ্বংস হবে। সাম্যবাদী সংস্কৃতিই জীবন সংস্কৃতি। ৩৬০ আউলিয়া জীবে প্রেম করেই ইশ্বর তুল্য হয়েছিলেন। একটি সংস্কৃতি মানুষের মনে গড়ে উঠে। কথায় বলে জীবে প্রেম করে যে, সে সেবিষয়ে ইশ্বর, যতদিন পৃথিবী থাকবে ততোদিন ঢোল বাজাবে মানুষ। আধাত্মিক শহর সিলেট বললে ধর্মীয় উগ্র বিভাজান নিতীর আধাত্মিকতা নয়। মানবীক আধাত্মিক জাগরন মানুষের মনে ঢুকিয়েছেন তারা। কোন দিন উগ্রভাবে কারো সাথে ব্যবহার করেন নি। তারা ইতর, কাতর, ভদ্র, অভদ্র, তাদের মনে ছিলনা, তারা কাউকে ঘৃণা করতেন না। অনেকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করে থাকেন তাদের নাম। প্রায় প্রতিদিন বড় বড় নেতারা এসে শাহ জালাল, শাহ পরানের মাজার জেয়ারত করে আরম্ব করেন প্রতারণার রাজনীতি। তারা মানুষ প্রাতারণা সম্পূর্ণ ভাবে বর্জন করে ঘৃণা করে গিয়েছিলেন। তারা জীবন্ত প্রকৃতিকে ধারন করে এতো সম্মান অর্জন করে গিয়েছিলেন। তারা প্রকৃতপক্ষে জীবন সাংস্কৃতির ধারক ও বাহক ছিলেন। তারা পানির মতো, বাতাশের মতো, মাটির মতো, সেবা দিয়ে গিয়েছেন মানুষকে। অনেকে বলেন তারা নাকি জিন্দাপীর ছিলেন। আসলে একটি মহান সাম্যবাদী। কমিউনিষ্টশক্তি জিন্দারেখে গিয়েছেন।
চিন্তা গবেষনা ছাড়া কেউ বুঝবেনা। আমি আব্দুল্লাহ চেয়াম্যানের উপর লেখতে গিয়ে এতো সব লিখেছি বলে কেউ কিছু মনে আনিবেন না। বিবাহ-বন্ধন হতে এ কথাগুলো উঠে এসেছে। তারা ৩৬০ আউলিয়া প্রকৃতির মতো একটি ফাঁক ফুকরেও মানুষ বিভাজন করে যাননি। সৃষ্টির মূলেই একটি কমিউনিষ্ট সাম্যবাদী সংস্কৃতির জীবন ধারা আজীব চলে আসছে, তা আমাদেরকে বুঝতে হবে, সেগুণকে অমান্য করার কোন কিছু নেই। বড় বড় নেতারা রাজনিতী না বুঝে কমিউনিষ্টবলে গালি-গালাজ করা বন্ধ করতে হবে। তার অর্থ হচ্ছে সাম্যবাদী, তা বুঝে নিতে হবে। লুট-পাট করে কোন রাজনীতি হবেনা। পরিনামে সবাইকে প্রকৃতির মতো নীতি শাস্থ্রকে মেনে নিতেই হবে। কারণ তার চেয়ে বড় গুণ পৃথিবীতে নাই। হাজার, হাজার, লক্ষ,লক্ষ, কমিউনিষ্ট নেতাই বিশ্ব-শান্তিতে প্রয়োজন। রাজনীতি সাম্যবাদের মূল নীতি।
শেষ করছি একটি কবিতার মধ্য দিয়ে।

   কবিতা
চলার পথের সঙ্গি
জনমে,মরণে,স্মরে স্বজনে,
রক্তের টানে,
স্মরে, সর্বজনে, সমাজ, হিতৈশী হলে।
স্মরে, বিশ্বজনে, বিশ্ব, হিত হলে
ক্রন্দন করে, মাতম করে,
দেশ, প্রেমিক হলে,
মানবতায়, জীবন, কাটালে
বিশ্ব মানুষের আকঙ্কায়, জীবন গঠন করলে,
অমর করে রাখে, আত্বত্যাগী হলে।
বই পুস্তকে লেখা লেখিতে,
তুলে ধরে,
প্রদাঙ্ক, অনুস্মরণ করে,
যুগেযুগে মহাকাল ধরে,
মহা- মানবতা থাকিলে
কেউ সুপারিশ করতে হয় না যে।

লেখক: কলামিষ্ট, সমাজসেবী।


@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন