আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং

এ যুগের মহানায়ক মাশরাফি

সাইদুল ইসলাম

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-৩০ ২১:৪০:৩৯

ইতিহাস সাক্ষী দেয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন অঞ্চলে শত বছর পর পর একেকজন মহাপুরুষের আগমন ঘটে। মহান কাজের মাধ্যমে এ সকল মহাপুরুষরা ইতিহাসে মহান অধ্যায়ের রচনা করেন।  নিজেদের প্রজ্ঞা, ধ্যান,ধারণা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, অসাধারণ নেতৃত্বগুণ, অধ্যাবসায় আর পরিশ্রমের বদৌলতে তাদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্নাক্ষরে মুদ্রিত হয়। এর ব্যতিক্রম নয় আমাদের বদ্বীপ প্রিয় বাংলাদেশ। কালের বিবর্তনে এবং সময়ের প্রয়োজনে এ অঞ্চলেও জন্মেছেন কালজয়ী  অনেক মহাপুরুষ। নিজেদের মহান ব্যক্তিত্বগুনে  আজ তারা আমাদের কাছে অনুকরণীয়, অনুস্মরনীয়। নিকট অতীতেও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী সর্বশেষ বাঙ্গালী জাতির মুক্তির দূত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারিত হয় এবং হবে বহু বছর, বহু যুগ, বহু শতক, বহুকাল ধরে। বাংলাদেশ নামক মানচিত্রের সাথে এ নামগুলো অতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে লাল বৃত্তের সবুজ বাউন্ডারির পতাকায় এ নামগুলো উড়বে যুগ থেকে যুগান্তর, কাল থেকে কালান্তর।

মাস ছয়েক আগেও আমি আমার কাছের মানুষদের সাথে বাংলাদেশের কিংবদন্তী ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মোর্তজাকে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত কথা বলেছি, এখনও বলি। কারণ, আমার চোখে মাশরাফি-ই এ যুগের মহাপুরুষ। তিনি শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নন। দেশের আপামর ষোল কোটি ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের অবিসংবাদিত নেতা। রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও ক্রিকেটের বেলায় সবাই একাট্টা। ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে মাশরাফি পুরো বাংলাদেশকে বেঁধেছেন একই সুতোয়। তাঁর নেতৃত্বে মাঠের ভেতরে ১১ জন খেলোয়াড় খেললেও ষোল কোটি দর্শকের বত্রিশ কোটি চোখ তাঁর নেতৃত্বেই ভরাসা রাখে। খেলায় হার-জিত নিয়ে সমালোচনা থাকলেও মাশরাফির নেতৃত্ব নিয়ে মাঠের ভেতরে কিংবা বাইরে আজ পর্যন্ত কেউ টু শব্দ পর্যন্ত করেনি। তাঁর নেতৃত্বে ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের জয়জয়কার। নিকট অতীতেও যেখানে কেউ বাংলাদেশকে পাত্তা দিত না মাশরাফি ক্রিকেট নেতৃত্বে আসার পর আজ সবাই সমীহ করে চলে। দেশের প্রতি তাঁর অগাধ ভালবাসা, সম্মান, আত্মবিশ্বাস আর ত্যাগের মাধ্যমেই আজ তিনি কিংবদন্তী, মহানায়ক।

কিছু দিন আগেও যারা ক্রিকেট খেলা বুঝতো না আজ তারাই মাশরাফির নেতৃত্বে খেলা দেখার জন্য টেলিভিশনের পর্দার সামনে বসে থাকেন ঘন্টার পর ঘন্টা। প্রবাসীরা বাংলাদেশের খেলার দিন অগ্রিম ছুটি নিয়ে দেখেন ম্যাশ বাহিনীর তর্জন-গর্জন। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ন খেলায় মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশকে জেতানের জন্য গ্যালারির ভেতরে কিংবা বাইরে হাজার হাজার মা, চাচী, দাদী, নানী,মসজিদের মোয়াজ্জিন থেকে ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত কিংবা গির্জার পাদ্রী প্রার্থনা করেন। দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, বৃদ্ধ আবাল বনিতা থেকে শুরু করে সব বয়সী সব লিঙ্গের মানুষের মনে যে আবেগ মাশরাফি তৈরি করেছেন, তা বঙ্গবন্ধুর পর আর কেউ পারেননি। মাশরাফি শুধু একজন খেলোয়াড় বা ক্রিকেটার নন, তিনি আপাদমস্তক একজন প্রতিশ্রুতিশীল নেতা। তিনি ষোল কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন এবং এ যুগের মহাপুরুষ।

প্রত্যেক মানুষের রাজনীতি করার স্বাধীনতা এবং অধিকার রয়েছে। বিশেষ করে ভাল মানুষের রাজনীতিতে আজ বড় প্রয়োজন। প্রিয় কিংবদন্তি মাশরাফি যদি ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা থাকে, তবে আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপির হয়ে কেন? মাশরাফির মত ব্যাক্তির কি গতানুগতিক রাজনীতিতে একজন এমপি হওয়ার খুবই প্রয়োজন? ব্যক্তি মাশরাফির অবস্থান তো এমনিই বহু এমপি-মন্ত্রীর উর্ধ্বে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে মুক্তির আকাঙ্খায় যখন মুখিয়ে আছে দেশের জনগন, তখন মাশরাফিই হতে পারেন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের মুক্তির অগ্রদূত। কিংবদন্তী মাশরাফি বিন মোর্তজার এমন সাহসী উচ্চারনের অপেক্ষায় দেশের আপামর জনসাধারণ। বিশেষ করে বাংলাদেশের হৃদপিন্ড তরুন প্রজন্ম। এই মুহুর্তে বহু ধারায় বিভক্ত দেশের জনগণকে একত্রিত করার মত ব্যক্তিত্ব এবং জনপ্রিয়তা একমাত্র মাশরাফিরই আছে। বাংলাদেশের নড়াইল জেলায় মাশরাফির জন্ম হলেও তিনি সারা বাংলাদেশের এবং তিনিই বাংলাদেশ। তাঁর যদি নির্বাচন করতে ইচ্ছে হয় তবে নড়াইল কেন, বাংলাদেশের তিনশত আসনের যেকোন একটি আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা তিনি রাখেন। এমন নির্লোভ, নিরহংকারী, প্রতিশ্রুতিশীল,ত্যাগী, দেশপ্রেমিক নেতা মাশরাফি ব্যাতিত দ্বিতীয়জন বাংলাদেশে এই মুহুর্তে বিরল।

লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী সংবাদকর্মী
syd903@yahoo.com


শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন