আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

আজ একটা ভালবাসাময় ঈদ কার্ড পেলাম

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-১৬ ০০:৫২:৪৯

ইফতেখায়রুল ইসলাম :: বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া ঈদ কার্ড ও আগোছালো অতীত স্মৃতি রোমন্থন। আমি সনাতনী ধারায় বিতর্ক করা শুরু করি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে, বিতর্ক দিয়েছে অনেক! বিতর্ক চর্চা অব্যাহত ছিল স্নাতকোত্তর পর্যন্ত, এ জীবনে প্রতিটি অর্জনে বিতর্কের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

বাংলাদেশের অনেক প্রথিতযশা বিতার্কিকগণ যখন বিতর্ক করতেন, আমি তখন অনেক ছোট! তাই অনেকের বিতর্কই দেখা হয়নি।

বিতর্কে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এক অনন্য জায়গা করে নিয়েছে। শুরুটা এতটা মসৃণ ছিল না যদিওবা! আমরা যখন বিতর্ক করতাম তখন অনেকের বিতর্ক উপভোগ করতাম। কিন্তু অনুসরণ করতাম খুব অল্প সংখ্যক বিতার্কিকদের!

বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই রুবাইয়াৎ রাকিব'র গতি এবং তাৎক্ষণিক তথ্য প্রদান যে কারো কাছে ঈর্ষণীয় ছিল নিঃসন্দেহে! তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের 'প্রথম বর্ষসেরা বিতার্কিক' ছিলেন।

পরবর্তী দীর্ঘ সময় পর যখন দ্বিতীয় বর্ষসেরা বিতার্কিক নির্বাচন করা হয়; সেটির বিজয়মাল্য আমার গলায় উঠে ২০০২ সালে! রুবাইয়াত ভাইয়ার মত চমৎকার সনাতনী ধারার বিতার্কিক'র পর আমার এই অর্জন আমাকে আনন্দে উদ্বেলিত রেখেছিল দীর্ঘ সময়!

লেখায় ইচ্ছেকৃত খেই হারিয়ে ফেলছি.............!
আমাদের সময় সিনিয়র বিতার্কিক অনেককেই পছন্দ করতাম; কিন্তু সত্যি কথা বলতে অনুসরণ করতাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়'র তৎকালীন একজন আদর্শিক ও চমৎকার বিতার্কিককে, যিনি জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ক্লাব- জুডো'র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন! তিনি আর কেউ নন আমাদের সকলের প্রিয় Mamun Chowdhury তথা মামুন ভাই।

একটা মানুষ কতটা ধীরস্থির থেকে, চমৎকার কিন্তু দৃঢ় উচ্চারণে, ক্ষিপ্র যুক্তির আবছায়ায়, বিতর্ক মঞ্চে নিজের আবির্ভাব ঘটাতেন সেটা মামুন ভাইকে না দেখলে বোঝার উপায় ছিল না! সনাতনী ও সংসদীয় ধারায় আমার প্রিয় তথা অনুসরণীয় বিতার্কিক ছিলেন এই বড় ভাই।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আমার সেকেন্ড হোম গ্রাউন্ড ছিল; যার পেছনে অবদান ছিল জুডো'র তৎকালীন বিতার্কিক ভাই ও বোনদের এবং তাদের যোগসূত্র মামুন ভাই।

ভাই গত রাতে বসে এই আগোছালো লিখা লিখছি তোমাকে নিয়ে। কিছু মানুষ থাকে না যাদের দেখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মন ভাল হয়ে যায়, তুমি আমার তেমন-ই ভাই! বিতর্ক চলাকালীন প্রতিবার তুমি আমাকে বিচারক হিসেবে নিয়ে যেতে, বটতলার হাসের মাংস, ভর্তা, ভাত সব এখনো জিভে লেগে আছে! কি চমৎকার সময় ছিল আমাদের ভাই, তাই না?

এতকিছুর অবতারণা করলাম সেই কারণটাও তুমি!! শেষ কবে ঈদ কার্ড গিফট পেয়েছি মনে পড়ে না ভাই। দীর্ঘ কয়েক বছর পর আজ একটা ভালবাসাময় ঈদ কার্ড পেলাম। কোন কাকতাল কারণ ছাড়াই আমার এখন "তুমি বিশ বছর আগে ও পরে" কবিতাটি মনে পড়ছে! সম্ভবত শেষ দশ থেকে পনেরো বছর আগে হাতে লেখা ঈদ কার্ড পেয়েছিলাম! অবাক হয়ে ভাবছি, মুঠোফোন নামক যান্ত্রিক যন্ত্রটি আমাদের জীবন থেকে একটা বিশাল অধ্যায় মুছে ফেলেছে! দীর্ঘ সময় জমিয়ে রাখা চিঠি, কার্ড গত হয়ে গেছে বেশ অনেক বছর আগেই....অতীতের সেই মনোলোভা স্মৃতি আবারও দ্বারপ্রান্তে....।

গত রাত ০১ টায় অফিস থেকে বাসায় ফিরে যখন তোমার কার্ডটি হাতে পেলাম; আমার সময়টা হঠাৎ করে রঙিন হয়ে গেলো ভাই.... তুমি এখনো আলাদা, স্বতন্ত্র! তাই একজন বিতার্কিক ও একজন মানুষ হিসেবে তোমাকে অনুসরণ করা এই আমি যথেষ্ঠই যথার্থ ছিলাম।

ভালবাসা ভাই, সবসময় তোমার আশীষ যেন পাই!

(তোমার অনুমতি ছাড়াই, তোমার লেখা সম্বলিত কার্ড উন্মুক্ত করে দিলাম, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখো ভাই...)

লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন)
(লেখকের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন