Sylhet View 24 PRINT

ক্ষমতার জোর

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০১-২২ ১২:২৩:৫৪




|| আহমদ সাঈদ সালমী ||


দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে প্রিয় শহর থেক নিজ গ্রামে ফিরে যাচ্ছে নাজমা। পিছনে ফিরে তাকাতেই ওর ভেতরটা কেঁদে উঠছে। এই শহরের সাথে যে তার ২০ বছরের সম্পর্ক।

আজ থেকে ২০ বছর আগে বাবা মার সাথে এই শহরে পা রেখেছিলো নাজমা; জীবিকারতাগিদে। মা বাবা আজ আর বেঁচে নেই, কিন্তু স্বামী, সন্তান নিয়ে ভালোই দিনকাল যাচ্ছিলো তার। বাসায় বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করে সে।

এক এলাকায় অনেকদিন থাকার সুবাদে সবাই অনেক বিশ্বাস করতো তাকে। অনেক পরিবার অফিসে যাওয়ার সময় ওর কাছেই চাবি দিয়ে ঘরের সব কাজের দায়িত্ব দিয়ে যেতো। নাজমাও তাদের বিশ্বাসের প্রতিদান দিয়েছে সবসময়। পরিবারকে নিয়ে আস্তে আস্তে অনেক স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলো সে। এই স্বপ্ন ভালোভাবে থাকার, ভালোভাবে বাঁচার...

কিন্তু হঠাৎ এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় উলট পালোট হয়ে গেলো সবকিছু। সে কাজ করে এমন একটা বাসায় কিছু দামী গয়না চুরি গেলো এবং বাসার সবাই ওকেই সন্দেহ করে বসে। নাজমা তাদের অনেক বোঝানোর চেস্টা করে কিন্তু পরিবারের সবাই ওকে সন্দেহ করে হুমকি ধামকি দিতে থাকে। নাজমার মনে পড়ে কাজ করার ছলে অনেক কথাবার্তা শুনে বুঝতে পেরেছিলো ওই বাসায় টাকা পয়সা সংক্রান্ত পারিবারিক ঝামেলা চলছিলো কয়েকদিন থেকে, কেউ হয়তো সেই সুযোগ নিয়েছে ওকে চোর বানিয়ে। কিন্তু এসব কথা সে কাউকে বলতে পারেনা, এসব কথা বলার সেই জোর, সেই অধিকার যে তার নেই। সে নিতান্তই সমাজের সবচেয়ে নিচু শ্রেণির একজন মানুষ !!

সে আর তার পরিবার মিলে ওই বাসার সবাইকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়। উল্টো ওদের লোকজন হুমকি দিতে থাকে, এই শহরে থাকতে হলে ওদের জিনিস ফেরত দিতে হবে, নাহলে জানে বাঁচবে না। কিন্তু যে জিনিস নাজমা কোনদিন চোখেই দেখেনি তা কিভাবে ফেরত দেবে?
এলাকার অনেকের হাত পা ধরেও কোন সমাধান করতে পারে না সে। সবাই তো লোভী, ওকে সাহায্য করবেই বা কে।

নাজমা বুঝতে পারে এই শহর আর তার শহর নেই। এখানে বাসা বেধেছে অনেক কীটপতঙ্গ যাদের দেখতে আদতে মানুষের মতনই লাগে। যারা মুখোশ পরে এই সমাজে সততা আর ন্যায় বিচারের বুলি আওড়িয়ে বেড়ায়...এই শহর আজ তাদের দখলে !

অবশেষে নিরুপায় হয়ে হুমকির মুখে গ্রামের বাড়ী ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় নাজমা আর তার স্বামী। অনেক স্বপ্ন দেখেছিলো নাজমা। ছেলেটাকে শহরের স্কুলে পড়াবে, মানুষের মতো মানুষ করবে কিন্তু আজ এক ঝটকায় পুরো ভবিষ্যতেটাই যেখানে অন্ধকার, স্বপ্ন দেখা সেখানে বিলাসিতা।

বাড়ী ফেরার জন্য লকাল বাসে চড়ে বসে তারা। চলতে শুরু করেছে তাদের গাড়ী আর পেছনেপড়ে থাকে তার ২০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত প্রানের শহর, মানুষ নামের কীটপতঙ্গ, আর দারিদ্র্যতার দরুণ হেরে যাওয়া তার সেই ক্ষমতার শেকল।

লেখক: সিনিয়র অফিসার, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.