Sylhet View 24 PRINT

ছোট গল্পঃ আদিখ্যেতা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১০-০৯ ০০:৩৯:৩৪

লিটন সরকার ::  মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আকাশ । ভাব দেখে বুঝার উপায় নেই যে, সে মধ্যবিত্ত। চলাফেরা তার লাট সাহেবের মত। দশ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে তার একটা মেয়ের সাথে।

মনতার এখন ছনমনা কখন তার প্রেয়সীকে সাতপাকে বাধবে। প্রেয়সী তার কাছে রুপে গুণে অনন্যা। অন্যের কাছে কি? তা সে জানে না। জানতেও চায় না। তার পছন্দে সে প্রেম করেছে । অন্যের পছন্দে নয়। সুতরাং দশ জনের মত নেয়ার তার দরকার নেই। দশের কথা ভাবারও দরকার নেই।

অবশ্য সে না ভাবলেও সবাই তার কথা ভেবে সামাজিক ভাবেই তাদের বিয়ে দিচ্ছে। কারণ বাপ মরা ছেলে সে। সবার আলাদা মায়া রয়েছে তার উপর।

এনগেজমেন্টপর্ব শেষ হয়েছে। এনগেজমেন্ট এ তার অনামিকায় কোন আংটি পড়েনি। যৎ সামান্য কিছু টাকা দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়েছে। টাকার অংক ভারি করতে ব্যাস্ত সে। কনে বাড়িকে তো আর ছোট হতে দেওয়া যায় না।

এজন্য যে সবাই তাকে নিয়ে হাসছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। তার সব মনোযোগ সামনের মঙ্গলাচরণকে ঘিরে। প্রেয়সীকে সে রংধনুর সাত রঙে রাঙাতে চায়। সেজন্য কিনে আনা হয়েছে সাত রঙের লিপস্টিক, সাত রঙের নেইলপালিশ ইত্যাদি ইত্যাদি। মোট কথা তার বিয়ের বাজার যেন রংধনুর বাজার। সবাই তা দেখে দেখেই ক্লান্ত। যে এগুলা কিনে এনেছে তার না জানি কি ঝাক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।

তাকে আংটি দেয়নি তো কি হয়েছে। কনের জন্য সে সাত সমুদ্র তের নদীর পাড় থেকে কিনে এনেছে দামি এক নেকলেস।এত দামি নেকলেস কার কার পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মেয়েরা যেখানে টপিক ছাড়াই টক শো চালিয়ে যেতে পারে সেখানে আজ টক শো এর হট আইটেম ‌‌নেকলেস।

একজন বলল, বিয়ের সময় আমার জামাই ছিল ম্যাজিস্ট্রেট আর এখন ইউএনও। আমাকে তখনও এত দামি নেকলেস দিতে পারেনাই এখনও পারেনি।

আরেকজন বলল, আমার শ্বশুর এর একমাত্র ছেলের বৌ আমি। তারা তো জমিদার বংশের। কই আমাকে তো দশ আনার একটা পাতলা সিতাহার দিয়েই মঙ্গলাচরণ করিয়েছে।
পাশে থেকে একজন টিপ্পনী কেটে বলল, আপনারা বুঝছেন না কেন? ছেলে তো প্রেম করে বিয়ে করছে। ভালবাসাটা একটু বেশি তাই নেকলেসের ওজনও বেশি।
প্রেমের কথা বলছেন! প্রেম করে তো আমিও বিয়ে করলাম ।কই আমিতো এমন নেকলেস পাইনি । আরে ভাই  এইগুলা সবই হল তার আদিখ্যেতা।

নেকলেস নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে তখন আকাশেরকাজিন এসে বলল , তোমরা মহিলারা এই একটা কাজই ভাল করে করতে পার আর তা হল সমালোচনা। আকাশদা তো  একবারই  বিয়ে করবে । তো একটু ভাল করে করতেছে এই যা।

ছেলের পিসি বললেন,তোকে ছাইপাঁশ গিলার পয়সা দিছে বুঝি । সেজন্য এখানে এসেছিস ওর হয়ে আমাদের সাথে উকালতি করতে। ভাল করে বিয়ে করার মানে জানিস?।  সে তো শুধু বৌকে দিয়েই সব ভরিয়ে দিচ্ছে অন্য আয়োজনের বেলায় পকেটে একবারের বেলায় দুইবার হাত দিচ্ছে। দেখে নিচ্ছে টাকা আছে কিনা।না জানি বিয়েতে কি খাওয়ায়। আর আমরা যারা তারা বিয়েতে গতর খেটে মরতেছি তাদের দিকে  তো আর দৃষ্টি পড়বে না।
সব আদিখ্যেতাতার বৌকে নিয়ে।

এবার আগুনের মধ্যে ঘি ঢালার মত এক বার্তা আসল সবার কাছে। বার্তা নিয়ে আসল বরের আপন ছোট বোন। সুরেলা ভঙ্গিতে সে বলল,জানো পিসি বড়দা বলতেছে বৌভাতে নতুন বৌ এর  সাজ নাকি শহরের সবচেয়ে দামি পার্লারে করাবে।

ঃ বলিস কিরে ! তো , কার সাজে সাজাবে কনেকে ??শুনেছি দশ হাজারেনাকি ক্যাটরিনা পনের হাজারে ঐশ্বরিয়া সাজায় । আর বিশ খরচ করলে এঞ্জেলিনা জলি বানিয়ে দেয়।
ঃ তাতো জানিনা পিসি। তবে বলেছে রাজকুমারীর সাজে সাজাবে তোমাদের বৌমাকে।
আকাশের এইসব আদিখ্যেতার  মধ্যেই সবাই বরযাত্রার জন্য প্রস্তুত ।ঘর থেকে বের হচ্ছে সবাই। যার যার মত করে তারা গাড়িতেও  বসে যাচ্ছে ।কিন্তু আকাশ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।কিসের জন্য অপেক্ষা তার। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। ফিসফিসানি বেড়ে গেল। আকশের কাকু আকাশকে জিজ্ঞেস করলেন,কিসের জন্য অপেক্ষা তোমার। তোমার বাবা নেই । দেরি করার কারণে বিয়ের লগ্ন মিস হোক সেটা আমরা চাই না। কথা শেষ হবার আগেই বড় শোঁর পেছিয়ে পেছিয়ে গাড়ির বহরের সামনে এসে উপস্থিত হল বিরাট এক হাতি।
হাতির উপর থেকে নেমে কাকাতো ভাই রাজ বলল,  বাবা । আকাশদা তো  হাতিতে চড়ে বিয়ে করবে।

বাপ মরা ছেলে একটা শখ করেছে। কাকু তাই তাকে কিছু বলল না। পাশ থেকে কাকী ঠিকই বললেন, তো বাবা আকাশ, তুমি আর কি কি করবে , তা যদি একটু বলতে ।আগে থেকে জানলে আর হঠাৎ শক টক খেতাম না।
আকাশের কাকিমা  জানেন না যে,  তাদের আকাশ যেহেতু আকশে উঠে বিয়ে করছে সেহেতু তাদেরকে কয়েকবার শক খেয়ে মাটিতে পড়তে হতেই পারে।
পথে যেতে যেতে তিনি আরেকটি শক খেলেন ।শুনলেন বৌ কে নাকি  পালকি করে নিয়ে আসা হবে। সামনে থাকবে সে। মুখে থাকবে রোমাল । আর কনে আসবে পালকি করে তার পিছন পিছন। আদিখ্যেতা ষোল কলা পূর্ণ করার পণ নিয়েই যেন সে বিয়ে করতে নেমেছে।
বরের গাড়ির বহর  চলছে । সামনে সুউচ্চ হাতি।তার পিঠে আকাশ। যারা হাতি দেখে নাই তারা দেখছে হাতি আর যারা হাতির উপর চড়ে বিয়ে করা দেখে নাই তারা হাতির উপরের আকাশকে দেখছে। কখনো বা চারপাশ ভারি হচ্ছে মানুষের অট্রহাস্যে আবার কখনোবা গাড়ির বহরে আসা মানুষজনের ফিসফিসানিতে। এ বিয়ে বড়ই আদিখ্যেতার বিয়ে যে।


লেখক: লিটন সরকার, ব্যবস্থাপক, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, সিলেট।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.