Sylhet View 24 PRINT

বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বনাশা ইয়াবা সিন্ডিকেট

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১১-১১ ০০:৫৯:৪৫

কাজী শাহেদ :: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (পাবিপ্রবি) ঘিরে গড়ে উঠেছে ইয়াবা সিন্ডিকেট। জঙ্গি অর্থায়নের জোগান দিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে পারে— এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গোপন প্রতিবেদনে।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো ওই গোপন প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে।

প্রতিবেদনের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, তালিকাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মাদক তথা ইয়াবা ব্যবসা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এভাবে অবৈধ মাদক সেবন ও ব্যবসা চলতে থাকলে জাতি মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। মাদক ব্যবসা ও সেবনের সুযোগ নিয়ে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে অবৈধ অস্ত্রের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসগুলোতে অসামাজিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান তালিকাটি পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি উদ্বেগের। এখন সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার। সেই সঙ্গে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী মাদকের ভয়াবহতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ব্যাপক হারে মাদকের ব্যবহার এবং সেবন বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুটিকয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ নেতা, কর্মচারী ও কর্মকর্তা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এই মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরে নয়, আশপাশেও মুখোশধারী কিছু বহিরাগত ও স্থানীয় লোকজন এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নানা কায়দায় জড়িত।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইয়াবা সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এমন শিক্ষকদের মধ্যে সর্বাধিক রাবির ছয়জন ও রুয়েটের একজনের নাম রয়েছে। রাবির জড়িত শিক্ষকরা হলেন— চিত্রকলা, চারুকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আমিরুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের আবুল হাসনাত, মৃিশল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের আবদুস ছালাম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, ড. মুসতাক আহমেদ, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্বপ্নীল রহমান এবং রুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক কামারুজ্জামান বিশাদ।

প্রতিবেদনে পাবিপ্রবির কোনো শিক্ষকের নাম উল্লেখ না থাকলেও প্রথম শ্রেণির কয়েকজন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন— সেকশন অফিসার তৌফিকুল ইসলাম সৈকত, সহকারী টেকনিক্যাল অফিসার শাহাদাত হোসেন, কম্পিউটার অপারেটর আহমেদ সরদার ও সিকিউরিটি গার্ড দালাল সরদার বাবু। রুয়েটের জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হচ্ছে— সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাহনেওয়াজ সরকার সেতু, কম্পিউটার অপারেটর মুরাদ

হোসেন, রাজীব হাসান, জুনিয়র অফিসার আখতারুজ্জামান, জাকির হোসেন, আসাদুজ্জামান ও আশিকুল্লাহ। এ ছাড়া প্রতিবেদনে রাবির আটজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বাদ পড়েনি ছাত্রলীগ নেতাদের নাম। ইয়াবা সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রাবি ছাত্রলীগের এমন ১১ জন প্রথম সারির নেতার নাম পাওয়া গেছে প্রতিবেদনে। জড়িত নেতারা হলেন— সহ-সভাপতি রবিউল আওয়াল মিল্টন, আবু খায়ের মোস্তফা রিনেট, আকতারুল ইসলাম আসিফ, এরশাদুর রহমান রিফাত, রেজওয়ানুল হক হৃদয়, সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম, আইনবিষয়ক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) সাইফুল ইসলাম বিজয়, নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক তাওশিক তাজ ও কর্মী (বহিষ্কৃত) অনিক মাহমুদ বনি। ছাত্রলীগের পাশাপাশি প্রতিবেদন থেকে তিনজন ছাত্রদল নেতার নামও পাওয়া গেছে। তারা হচ্ছেন— দর্শন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক নুরুজ্জামান লিমন, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, ফিন্যান্স বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও আহ্বায়ক আরাফাত রেজা আশিক। এ ছাড়া প্রতিবেদনে বগুড়া শাহজাদপুরের উম্মে হাবিব রহমান নামের একজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি রুয়েটের হলসহ ক্যাম্পাসে ইয়াবাসহ অবৈধ মাদক সরবরাহ করে থাকেন। রুয়েটে ২০১২ সিরিজের মিম নামের একজন স্বাস্থ্যকৌশলী মাদক সরবরাহ করেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফেরদৌস রওশন আরা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি ইতিমধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠনো হয়েছে। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে অভিযুক্ত শিক্ষকদের একজন সেলিম রেজা নিউটন এ তালিকায় নাম থাকাকে হাস্যকর বলছেন। তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাভারে কারা কাজ করছেন, তারা সবকিছু খেয়াল রাখছেন কিনা। ’ অন্যরাও নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান জানান, এমন একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করেছে। তবে কর্মস্থলের বাইরে থাকায় বিষয়টি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুত্ফর রহমান বলেন, ‘যারা ইয়াবা তথা মাদক ব্যবসা ও সেবনের সঙ্গে জড়িত, তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতার নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.