Sylhet View 24 PRINT

কেমন কেটেছে ফাতেমার পরিবারের ঈদ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-২০ ১৩:১৪:১৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ৮ ফেব্রুয়ারী থেকে কারাভোগ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদার দুর্নীতির অপরাধের সাথে সম্পর্ক না থাকার পরেও খালেদার সাথে কারাভোগ করছেন তার গৃহপরিচারিকা বলে পরিচিত ফাতেমা বেগম।

খালেদা জিয়ার দেখভাল করার জন্য কারাভোগ করতে থাকা ফাতেমারও খালেদার মতো নিজস্ব পরিবার রয়েছে। তার সন্তানরা মায়ের অপেক্ষায় বসে থাকে। কিন্তু তারা জানে না, খালেদা জিয়ার কারণে বিনা অপরাধে কারাভোগে থাকা তাদের মা কবে ছাড়া পাবে। ‘দরিদ্র’ হওয়ার অপরাধে ফাতেমার পরিবার কোনোরকম প্রতিবাদও করতে পারছে না।

ঈদ উপলক্ষ্যে খালেদার সাথে দেখা করার জন্য তার স্বজনরা কারাগারে গেলেও ফাতেমার কোনো স্বজনকে সাথে নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, ৮ বছর আগে ফুফাতো ভাই বশির উল্ল্যার হাত ধরে ভোলা থেকে ঢাকায় আসেন ফাতেমা। ঢাকা এসেই গৃহকর্মী হিসেবে ফাতেমা বেগম জিয়ার সঙ্গে আছেন। ঢাকা আসার আগেই ফাতেমার স্বামী হারুন লাহড়ী মারা যান। ফাতেমার দুই সন্তান। বড় মেয়ে রিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ছেলে রিফাত চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তারা দুজনই নানা-নানীর সাথে রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকায় থাকেন।

বাবা হারা রিয়া এবং রিফাতের মনের আনন্দে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিল তাদের মা ফাতেমা বেগম। অথচ নিয়তির কি নির্মম পরিহাস তাদের মা আজ থেকেও নেই। গরীব হয়ে জন্ম নেওয়াটাই যেন রিয়া এবং রিফাতের সব থেকে বড় ‘অপরাধ’। বিনা অপরাধে কারাবন্দী তাদের মায়ের সাথে দেখা করতে চেয়েও সুযোগ মেলেনি রিয়া ও রিফাতের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার কাছে ফাতেমার সন্তানদের তাদের মায়ের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই অনুরোধে কর্ণপাত করেনি বিএনপির নেতারা। তারা খালেদার স্বজনদের দেখা করা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।

অন্যান্য বছর  ফাতেমা তার সামর্থ্য অনুযায়ী দুই ছেলেমেয়েকে ঈদ উপলক্ষ্যে নতুন পোশাক কিনে দিলেও এবার ফাতেমার সন্তানদের ভাগ্যে নতুন পোশাক জোটেনি। ফাতেমার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আত্নীয়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফাতেমার ছেলেমেয়ে ঈদ এর দিন সারাদিনই মন খারাপ করে বসে ছিল। সকাল বেলা দুই ভাই বোন মায়ের জন্য কান্নাকাটিও করেছে। এসময় তাদের নানী তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। উপস্থিত স্বজন এবং প্রতিবেশীরা জানান এসময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। উপস্থিত অনেকেই তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি এসময়। অনেকেই মন্তব্য করেন যে, যাদের কারণে আজ ফাতেমা অপরাধ না করেও কারাগারে বন্দি আছে এবং বাবা হারা এই এতিম দুই শিশুর চোখের পানি ঝরেছে তাদের বিচার নিশ্চই আল্লাহতায়ালা একদিন করবেন।

ফাতেমার এক আত্নীয় জানান বিএনপির চেয়ারপারসনের দেখভাল করার জন্য ফাতেমা তার পিতৃহারা দুই সন্তানকে রেখে কারাগারে গেল। অথচ কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বিএনপির পক্ষ থেকে ফাতেমার পরিবারের একবার খোঁজ নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি বিএনপি। প্রথম দিকে কয়েকজন বিএনপি নেতা খোঁজ খবর নিলেও এখন আর কেউ খোঁজ খবর রাখে না ফাতেমার পরিবারের।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোও নিরপরাধ ফাতেমার কারাভোগের বিষয়ে মুখ খুলেনি এখন পর্যন্ত। অথচ খালেদার সাজা হবার পর থেকেই মানবাধিকার সংগঠনগুলো খালেদার মুক্তি এবং কারাগারে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য উচ্চবাচ্য করে আসছে। তবে কি ‘মানবাধিকার’ শুধু মাত্র সমাজের উঁচু তলার মানুষের জন্যই বরাদ্দ নাকি একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নই মূল উদ্দেশ্য তাদের?

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০জুন২০১৮/ডেস্ক/ আআ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.