Sylhet View 24 PRINT

‘রোগীদের জিম্মি করে এ কেমন প্রতিবাদ’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৭-০৯ ১২:৩৬:৪১

সিলেটভিউ ডেস্ক :: চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়ার পর চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালসহ বেসরকারি চিকিৎসালয়ে র‌্যাবের অভিযানের প্রতিবাদে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয়ায় অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

রবিবার দুপুরের পর থেকে চট্টগ্রামের প্রায় সবকটি বেসরকারি হাসপাতালের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। আগে থেকে ভর্তি থাকা অনেক রোগীকেও হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের দুই সরকারি হাসপাতাল চমেক ও জেনারেল হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। রোগীদের জিম্মি করে এভাবে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ।

ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিক কন্যা রাইফার মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে এসে ম্যাক্স হাসপাতালের নানা অনিয়ম খুঁজে পায় তদন্ত কমিটি। এসব অনিয়মের অভিযোগে রবিবার হাসপাতালটিতে অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম অভিযান পরিচালনা করেন।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিকরা চিকিৎসাসেবা বন্ধের ঘোষণা দেন। তাদের ঘোষণায় রবিবার বিকাল তিনটা থেকে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে বন্ধ রয়েছে চিকিৎসা সেবা। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন রোগী ও তার স্বজনরা। তাদের এই ঘোষণায় সংহতি প্রকাশ করেছে সরকার সমর্থিত বিএমএ চট্টগ্রাম শাখা।

নগরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, ঘোষণার পরপরই চট্টগ্রামের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাব বন্ধ করে দেয়া হয়। হাসপাতাল-ল্যাবের মুখে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে ধর্মঘটের ব্যানার। হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে সেবা নিতে আসা রোগীদের। এছাড়া জরুরি বিভাগও অচল করে দেয়া হয়।

প্রতিটি হাসপাতালের সামনে ভর্তি হতে আসা মুমূর্ষু রোগীদের বের করে নিয়ে আসার দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। এতে রোগী ও স্বজনদের পড়তে হয় অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে।

চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী থেকে নগরের প্রবর্তক এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছোট ভাইকে নিয়ে এসেছিলেন কাজী মারুফ। কিন্তু এসে জানতে পারেন চিকিৎসক চেম্বারে বসবেন না। এখন শ্বাসকষ্টে ভোগা ভাইকে নিয়ে কোথায় যাবেন তা নিয়ে ভেবে উঠতে পারছেন না তিনি।

নগরের গোলপাহাড় এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখাতে সোমবার সকালে এসেছেন কবির হোসেন। তিনি বলেন, গতরাতে হাটতে গিয়ে হঠাৎ পা মচকে ফুলে যায়। সকালে এসে দেখি সব হাসপাতাল বন্ধ। অনেক অনুনয় বিনয় করেও তাদের মন গলানো যায়নি। এখন কোথায় যাব এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি।

তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আফজাল হোসেন এসেছেন স্ত্রীকে নিয়ে। অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কেউ অনিয়ন করলে তার অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। তারা রোগী মারবেন আর কেউ কিছু বলতে পারবে না। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর হওয়া উচিত।’

মিরসরাই থেকে আসা ওবায়েদ চিকিৎসাসেবা না পেয়ে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের সেবা করাই ডাক্তারদের ধর্ম। ঠিকভাবে সেবা না করে ধর্মঘট ডেকে বসা তাদের জন্য মানায় না। রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায় করা তাদের এ কেমন প্রতিবাদ।

এদিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে চিকিৎসাসেবা বন্ধের ঘোষণায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সাধারণ রোগীদের জিম্মি করে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে ক্যাব চট্টগ্রাম শাখা।

সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে এ ধরনের খেলা বন্ধের দাবি জানিয়ে নেতারা বলেন, তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতেন। তা না করে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে জনগণের চিকিৎসাসেবার মতো মৌলিক অধিকার খর্ব করেছেন তারা।

ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতির সভাপতি ডা. আবুল কাশেম জানান, ‘সংশ্নিষ্টরা আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে সমঝোতায় এলে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর আগ পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।’

এদিকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ ঘোষণার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ধারণ ক্ষমতার তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের। রোগীর চাপে জরুরি বিভাগে বাড়ানো হয়েছে চিকিৎসকের সংখ্যা। প্রতিদিন জরুরি বিভাগে একজন চিকিৎসক সেবা প্রদান করলেও এদিন দুইজন চিকিৎসককে জরুরি সেবা প্রদান করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার দুই থেকে তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৯ জুলাই ২০১৮/ডেস্ক /আআ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.