আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাশেদের মায়ের আর্জি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৭-১৫ ১৮:০৯:০১

 ঝিনাইদহের সালেহা বেগম এর আগে কখনো ঢাকায় আসেননি। এবারই প্রথম। স্বপ্ন ছিল ছেলের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরবে সে। সেই সুযোগ তার হলো না। এর আগেই তাকে চিনতে হয়েছে ডিবি অফিস, ডিএমপি, শাহবাগ থানা, সিএমএম কোর্ট। একমাত্র ছেলে কারাগারে থাকায় তিনি এখন দিশেহারা। ছেলেহীন এই শূন্যতার হাহাকার থেকে তিনি মুক্তি চান।

রবিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোটা আন্দোলনের নেতাদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খানের মা সালেহা বেগম ছেলেকে ফিরে পেতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। মানববন্ধনে নিরাপদ ক্যাম্পাস চেয়ে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড বহন করে শিক্ষার্থীরা।

সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে গত এপ্রিলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনের মুখে ১১ এপ্রিল কোটা থাকবে না বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর ২ মে এবং সব শেষ ২৭ জুন সংসদে একই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। এতদিন ধরে চলে আসা পদ্ধতিটি কীভাবে বাদ দেয়া যায়, সেটি নিয়ে কাজ চলছে। তারা প্রতিবেদন দিলেই সিদ্ধান্ত হবে।

এর পাশাপাশি কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খান গত ২৭ জুন ফেসবুক লাইভে এসে ‘রক্ত গরম হয়ে গেছে’ জানিয়ে বারবার ছাত্রদেরকে বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে এসে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান। এমনকি সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণাকে তার নাম উল্লেখ না করেই একাধিকবার প্রতারণা বলে উল্লেখ করেন। বলেন, ‘মনে হচ্ছে এই দেশ তার বাপের দেশ।’

পরে এই ভিডিও বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন ছাত্রলীগ নেতা আল নাহিয়ান খান জয়। এরপরই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মানববন্ধনে রাশেদের মা সালেহা বেগম নিজে কাঁদলেন, কাঁদালেন উপস্থিত সবাইকে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা প্রতিদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করতো, মা কেমন আছ? আজ কতদিন আমার বাবার মুখ থেকে এই মা ডাক শুনি না। আমার বুকটা ভেঙে যাচ্ছে। আমার বাবা তো শুধু একটা চাকরি চেয়েছিল। কেন তাকে আজ এতদিন ধরে রিমান্ডে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, আমার ছেলেকে আপনারা ফিরিয়ে দিন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দিন’।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই আবেদন, আমার সন্তানকে আমি ভিক্ষা চাই। তারে পেলে আমি দেশে চলে যাব। আমার মণির (রাশেদ) আর চাকরির দরকার নাই। আমার মণিরে যেন রিমান্ড থেকে মুক্ত করে। আমার সন্তানকে বাঁচান।’

‘আমার মণি (রাশেদ) সাধারণ ছাত্র। সে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সময় জড়িত ছিল না। রাজনৈতিক কোনো দল বা দেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রে জড়িত নয়। এমনকি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও জড়িত নয়। আমার মানিক শুধু চাকরির জন্য কোটা সংস্কারের দাবি করেছিল, ওতো কোনো অপরাধ করেনি। তারপরও ওকে এমনভাবে হয়রানি করা হচ্ছে কেন? রিমান্ড বাতিল করে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমি পরের বাড়িতে কাজ করে আমার মানিককে লেখা পড়া শিখাইছি। ওর বাবা অন্যের জমিতে কাজ করে বহু কষ্টে সংসার চালাচ্ছে। ওর বাবার পেটে পাথর জমেছে।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন