আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

যে কারণে জামিন হয়নি শহিদুলের

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-১২ ২১:৪৯:৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত। মঙ্গলবার ওই আদালতের বিচারক এ কে এম ইমরুল কায়েস এ সংক্রান্তে একটি ফৌজদারি মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় আটক-গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই জামিনে মুক্ত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদও কোরবানি ঈদের আগের দিন ২১ আগস্ট জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু শহিদুল আলমের আজও জামিন হলো না। তার জামিন না হওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে পাঁচটি বিষয়:

এক, আটক-গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের সবাই ছিলেন বয়সে তরুণ। বুঝে-না বুঝে, আবেগের বশে তারা অনেক কিছুই করেছে। পরবর্তীতে এজন্য অনুশোচনা তাদের জন্য যথেষ্ট। কাজী নওশাবা পর্যন্ত এদের মধ্যে পড়তে পারেন। কিন্তু পরিণত বয়স্ক, দায়িত্বশীল ব্যক্তির পর্যায়ে থাকা শহিদুল আলম এদের মধ্যে পড়েন না। তাই শিক্ষার্থীসহ তরুণদের যে যুক্তিতে জামিন হয়েছে, শহিদুল আলমের জন্য তা প্রযোজ্য নয়।

দুই, শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের অতি কাছের মানুষ বলেই পরিচিত শহিদুল আলম। এক সময় ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত আলোকচিত্রী ছিলেন তিনি। ড. ইউনূসের কারণে বিশ্বব্যাপী আলোকচিত্রী হিসেবে খ্যাতি পান তিনি। একইভাবে ড. ইউনূস ও ‘ইউনূস সেন্টারের’ কারণেই সামাজিক আন্দোলনেও যুক্ত হয়েছেন মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলম। বর্তমানে জাতীয় ঐক্যসহ সরকার বিরোধী নানা জোট ও কর্মকাণ্ডে ড. ইউনূসের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। সরকারের একটি অংশের ধারণা, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে হয়তো শহিদুল আলমকে ব্যবহার করেছেন ড. ইউনূস।

তিন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ছিল আবেগের বহিঃপ্রকাশ। একইভাবে কাজী নওশাবাও আবেগের বশবর্তী হয়ে গুজব ছড়িয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। কিন্তু শহিদুল আলমের বিষয়টি কিন্তু ভিন্ন। শহিদুল আলম সরকারের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে উসকানিমূলক মিথ্যা ছড়িয়েছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

চার, সরকারের পদত্যাগ দাবিসহ নানা দাবিই করে আসছে সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দল বিএনপি। কিন্তু শহিদুল আলম সরকারের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘আল জাজিরা’য় দেওয়া সাক্ষাৎকারে শহিদুল আলম সরকারের বৈধতাসহ সরকারের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক বিভিন্ন কথা বলেন। এমন কথা বিরোধী দলগুলোর মধ্যে থেকেও কখনো শোনা যায়নি। শহিদুল আলমের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলেই মত বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, সরকারের সমালোচনা করা একটি বিষয়, আর সরকারকে ‘অবৈধ’ বলা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। সরকার দুর্নীতি করছে, ভুল করছে- এমন লাইনে কোনো দেশের সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করাই যায়, কিন্তু সমালোচনার সীমা অতিক্রম করে তাকে অবৈধ বলা এবং তার বৈধতা নেই দাবি করা রাষ্ট্রদ্রোহিতা।

পাঁচ, অতিসামান্য কোনো বিষয় নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা দেখা যাচ্ছে। যেকোনো একটি বিষয়কেই বড় ইস্যু করার প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। আর এমন সমালোচনা ও বিরোধী প্রচারণা মোটেই বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে ক্যাম্পেইন পরিচালিত হচ্ছে। শহিদুল আলম এই সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রেরই গুরুত্বপূর্ণ একজন বলে মনে করছে সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

গত মাসে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে উসকানিমূলক মিথ্যা প্রচারের অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলায় ৬ আগস্ট শহিদুল আলমকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এর আগের দিন রাতে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবি। সাত দিনের রিমান্ড শেষে গত ১২ আগস্ট শহিদুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন নিম্ন আদালত। তখন থেকে শহিদুল আলম কারাগারে।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের বিষয়টি একই আন্দোলনে আটক-গ্রেপ্তার অন্য দশ জনের মতো নয়। অন্যরা যেভাবে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে এসেছে এবং নানা কর্মকাণ্ড করেছে, তাদের চেয়ে শহিদুল আলমের সংশ্লিষ্টতাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর এসব কারণেই অন্যদের মতো জামিন হয়নি শহিদুল আলমের।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন