আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আদালতে মামলা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-১৭ ১৪:১১:০৯

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক দুই খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক অনুষ্ঠানে রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আদালতে সরকার ‍দু’টি মামলা করেছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

নূর চৌধুরীকে ফেরাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী বরাবর অনলাইন পিটিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গৌরব ৭১’, ‘কানাডা আওয়ামী লীগ অল ওভারসিস বাংলাদেশি’ এবং ‘মুভমেন্ট ফর ডিপোর্টেশন অব কিলার নূর চৌধুরী টু বাংলাদেশ’ যৌথভাবে এ উদ্যোগ নিয়েছে।

আইপিটিশন নামের ওয়েবসাইটের https://www.ipetitions.com/petition/petition-for-deportation-of-killer-nur-chowdhury লিঙ্কে অনলাইনে পিটিশন দাখিল করা যাবে বলে জানানো হয় এই অনুষ্ঠানে।

ছয় খুনি এখনও পলাতক থাকার প্রসঙ্গে টেনে কাদের বলেন, ‘এই ছয় জনকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরদার হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে আছেন রাশেদ চৌধুরী। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার আমাদের সহযোগিতা করছে। তাকে ফিরিয়ে আনতে ওখানে একটি মামলা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।’

নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনতে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর বরাবর অন লাইনে আবেদন তিনি বলেন, ‘তেমনই নূর চৌধুরীর ব্যাপারে কানাডায় একটি আইন আছে, সেটা হলো— কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান সেদেশের আইনে নেই। এই কারণে আইনটিকে শিথিল করে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কানাডায়ও একটি মামালা করেছে বাংলাদেশ সরকার। কানাডা সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ- আলোচনা অব্যাহত আছে।’
কাদের বলেন, ‘আমি বার বার একই প্রশ্ন করছি— বিএনপির নেতৃত্বের কাছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত। সেই খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করতে কেন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। কেন এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বাংলাদেশের লাখো শহীদের রক্তের আখরে রচিত সংবিধান পরিবর্তন করে পঞ্চম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে। এই প্রশ্নের জবাব বিএনপি আজও  দেয়নি। আমি আবারও সেই প্রশ্নের জবাব চাচ্ছি।’

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেন, ‘কানাডার মতো সভ্য দেশে আত্মস্বীকৃত দণ্ডিত খুনির জন্য অভয়ারণ্য হতে পারে না। এই খুনি ও তার দোসররা একটি দেশের জাতির পিতাকে, তার সহধর্মিণীকে ও তার ১০ বছরের শিশু রাসেলসহ ১৮ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এই খুনি গত ৪৩ বছর ধরে মুক্ত জীবন-যাপন করছে।’

নূর চৌধুরীর বিষয়ে কানাডা সরকারের কাছে দু’টি দাবি জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এই সভাপতি বলেন, ‘প্রথমত, তারা এই খুনিকে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেবেন, যাতে আত্মস্বীকৃত দণ্ডিত খুনির ফাঁসি কার্যকর করা যায় এবং আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কানাডা সরকারের অঙ্গীকার রক্ষা পায়। দ্বিতীয়ত, তাকে যেন স্বাভাবিক মুক্ত জীবন-যাপনের সুযোগ না দেয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আত্মস্বীকৃত খুনি থাকবে জেলে। তার স্বাভাবিক জীবন-যাপন কেন?’

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিক। দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিরাদীর্ঘদিন বিচার বন্ধ থাকার পর এই হত্যামামলার রায় হয়। আইনি প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে পাঁচ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ২০১০ সালে। বাকিদের একজন মারা গেছেন এবং ছয় জন এখনও পলাতক রয়েছেন। এরা হলেন— আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহউদ্দিন। তাদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা আছে।

এদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় এবং এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন বলে নিশ্চিত রয়েছে ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও  সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন উপস্থিত

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন