আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

চাকরি হারানোর আতঙ্কে সেসিপ প্রকল্পের ১৪৮৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-১৮ ১৬:৩১:৪৫

সিলেটভিউ ডেস্ক :: চাকরি হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সেসিপ) প্রকল্পের সহস্রাধিক কর্মকর্তা। ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়তে যাচ্ছে তাদের পরিবার। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে অন্য প্রকল্পে তাদের না নেয়ায় সিদ্ধান্তে হতাশায় দিন অতিবাহিত করছেন এসব কর্মকর্তা। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা আসার পর থমকে যাওয়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট ( সেসিপ) গঠন করেন। এ সময় জনবল ছিল ৬৫০ জন এবং রাজস্ব বাজেটের এ প্রকল্পকে আত্মীকরণের মাধ্যমে স্থায়ী করা হবে প্রজেক্ট প্রস্তাবে উল্লেখ ছিল।

২০০৭ সালে জুন মাসে সমাপ্ত করে পুনরায় সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট (এসইডিপি) চালু হয়। এ প্রকল্পের প্রজেক্ট প্রস্তাবেও প্রকল্প শেষে জনবল রাজস্ব বাজেটে নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এই প্রকল্পও ২০১৪ সালে শেষ হয়ে যায়।

এরই মধ্যে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ গৃহীত হয় এবং তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের কর্মকর্তাদের ওপর। আর এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ও মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের ২০১৫ সাল হতে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) এর যাত্রা শুরু হয়।

কিন্তু সেসিপ থেকে এসইডিপি, এসইডিপি থেকে পুনরায় সেসিপ করতে করতে প্রতি প্রকল্পের শুরুতেই যোগ্যতা প্রমাণের জন্য কর্মকর্তাদের পরীক্ষা নামক প্রহসনের মুখোমুখি হতে হয়। ঝরে যায় অনেক দক্ষ জনবল, হুমকির মুখে পড়ে তাদের ভবিষ্যৎ ও পরিবার পরিজন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রকল্পের শীর্ষ কর্তা-ব্যক্তিরা জানেন যে এভাবে পরীক্ষা নিলে ১৯৯৯ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি ২০১৫ সালে এসে কখনোই কৃতকার্য হবে না। ১০-১২ বছর চাকরি করে সরকারি চাকরির বয়স শেষ করে চাকরি হারিয়ে বেকারত্বের অভিশাপে পরিবার পরিজন নিয়ে কঠিন জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয় প্রকল্পের জনবলের অনেকেই। দিনের পর দিন তাদের অনেকেই এখন সমাজ থেকে লুকিয়ে দিন যাপন করছেন।

তারা জানান, সেসিপ প্রোগ্রাম ২০১৪-২০২৩ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে ২০১৫ সালে অনেক জনবল নিয়োগ দেয়। কিন্তু তিন বছর যেতে না যেতেই সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিপি) নামক নতুন প্রোগ্রামের কার্যক্রম হাতে নেয়। এবার ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়তে যাচ্ছে সহস্রাধিক পরিবার। কেননা অন্যান্য বার এক প্রকল্প থেকে অন্য প্রকল্পে যেতে তেমন কোনও বাধা না থাকলেও এবার এই প্রোগ্রামে আগের প্রকল্পের জনবল নেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের একজন মোহাম্মদ মিনহাজ অভিযোগ করে বলেন, সরকারের ভিশন-২০২১ যাতে বাস্তবায়ন না হয় সে জন্য চক্রান্ত চলছে। আর এই চক্রান্তের অংশ হিসেবে দক্ষ এই জনবলকে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যেখানে সদ্য সমাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন প্রকল্প রাজস্বখাতে গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অসংখ্য প্রকল্প রাজস্বখাতে গেছে। অথচ শিক্ষার এ শ্রমিকরা যেন সব সময়ই নির্যাতিত ও নিগৃহীত।

ভুক্তভোগীরা জানায়, বর্তমানে দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ৩০৮২৩টি। একজন কর্মকর্তা অন্যান্য দায়িত্ব পালনসহ মাসে গড়ে ১০টি বিদ্যালয় পরিদর্শনে সক্ষম হলে প্রতিটি বিদ্যালয়ে মাসে একবার নিবিড়ভাবে একাডেমিক পরিদর্শন করতে মোট ৩০৮০ জন কর্মকর্তার প্রয়োজন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে একাডেমিক সুপারভিশনের জন্য আঞ্চলিক পর্যায়ে উপপরিচালক (০১ জন), বিদ্যালয় পরিদর্শক (০১ জন), বিদ্যালয় পরিদর্শিকা (০১ জন), সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক (০১ জন), সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শিকা (০১ জন)। জেলা পর্যায়ে জেলা শিক্ষা অফিসার (০১ জন), সহকারি জেলা শিক্ষা অফিসার (০১ জন) ও উপজেলা পর্যায়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (০১ জন) ও সহকারি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (০১ জন) ব্যতিত রাজস্বখাতে অন্য কোনও জনবল না থাকায় মনিটরিং ও একাডেমিক সুপারভিশন কার্যক্রম যথাসময় ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য। সেসিপ এ কর্মরত জনবলের মাধ্যমে একাডেমিক সুপারভিশন, মনিটরিং ও মেন্টরিং বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।

নিয়োগপ্রাপ্ত জনবলকে সেসিপ, এসএসডিপি ও চলমান সেসিপের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই ১০-১৬ বছর যাবত কর্মরত এবং সবাই নিয়োগকালীন যোগ্যতায় একমাত্র শিক্ষাবিষয়ক প্রফেশনাল ডিগ্রিধারী ( বিএড,এমএড)।

তারা সেসিপ প্রকল্পের আওতায় কর্মরত জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের মাধ্যমে এসইডিপি প্রোগ্রামে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের স্বার্থে উক্ত দক্ষ জনবলকে কাজে লাগানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন