আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

যা রয়েছে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন বিলে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-১৯ ২২:৪৩:৫৩

সড়কে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে’ প্রাণহানি ঘটালে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন বিল-২০১৮ পাস হয়েছে। পাসকৃত আইনে কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে এবং সেই দুর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলা অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিলে জনমত যাচাই-বাছাই ও কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাব করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম মিলন, বেগম নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, বেগম মাহজাবীন মোরশেদ, বেগম রওশন আরা মান্নান ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী। কিন্তু তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। তারা বিলের বিভিন্ন ধারায় সংশোধনী প্রস্তাব দিলেও সেগুলো গৃহীত হয়নি।

জনমত যাচাই-বাছাইয়ের উত্থাপিত প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আগের মোটর ভেইকেলস অর্ডিন্যান্সে সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছর, সর্বনিম্ন এক মাস। আর সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড ৫ হাজার টাকা সর্বনিম্ন অর্থদণ্ড ১০০ টাকা। তবে প্রস্তাবিত আইন সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের পরিমাণ পাঁচ বছর এবং সর্বনিম্ন কারাদণ্ড অনধিক একমাস। আর সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড অনধিক ৫ লাখ আর সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা।’

ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার শাস্তির বিষয়টি পরিষ্কার করে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলেন ডেলিভারেটলি কিলিংয়ের (ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড) ক্ষেত্রে কী শাস্তি হবে? এটা কি পাঁচ বছরেই থাকবে? আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি। কেউ ডেলিভারেটলি কিলিং করলে প্যানাল কোডের ৩০২ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। কাজেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট। তাছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও আছে।  সব কিছু মিলিয়ে শাস্তিটা কম নয়। অপরাধ অনুযায়ীই শাস্তি সেভাবে হবে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করেছে বলে এই বিলটি তড়িঘড়ি করে সংসদে আনা হয়েছে- এটা ঠিক নয়। বিলটি দেড় বছর আগে মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হয়েছে। ৫৭ পৃষ্ঠার এই বিল এক দিনে আসেনি। অনেক আলাপ-আলোচনার সোনালী ফসল এই বিলটি।’

দীর্ঘ এক বছর ঝুলে থাকার পর আলোচিত এই নতুন সড়ক পরিবহন আইনটি গত ৬ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হয়। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ওই আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হয়। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি বিলটি পাসের সুপারিশ করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংসদে প্রতিবেদনটি জমা দেয়।

পাস হওয়া বিলে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘এই আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, মোটরযান চালনাজনিত কোনো দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হইলে বা তাহার প্রাণহানি ঘটিলে তদসংক্রান্ত অপরাধসমূহ পেনাল কোড ১৮৬০ (অ্যাক্ট নং এক্সএলভি অফ ১৮৬০) এর এতদসংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে’।

সেখানে শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে যাহাই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তি বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত মোটরযান চালানোর কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হইলে বা তাহার প্রাণহানি ঘটলে, উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৫ বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন’।

বিলে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করলে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে পয়েন্ট কাটার ব্যবস্থাও থাকবে আইন অনুযায়ী। নির্ধারিত পয়েন্টের নিচে গেলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। চালককে নতুন করে আবার লাইসেন্স নিতে হবে। বিলে ব্যক্তিগত গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতোই অন্ততঃ ১৮ বছর রাখা হয়েছে। তবে পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর।

এছাড়া বিলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালকের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাসের শর্ত রাখা হয়েছে। আগের আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিলো না। নতুন আইনের সহকারী হতেও শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। সহকারীর পঞ্চম শ্রেণি পাসের সার্টিফিকেট থাকতে হবে। আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিল না। এছাড়া সহকারী হতে বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্সের বিধানও থাকছে। বিলে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সহকারীরও শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে বিলে। চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

বিলের বিধান অনুযায়ী, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না চালক। এই বিধান অমান্য করলে এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। এছাড়া ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে- এমন অপরাধের ক্ষেত্রে চালককে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। নতুন আইনের বিধি অমান্য করলে পয়েন্ট কাটার বিধান রাখা হয়েছে বিলে। বিলের বিধান অনুযায়ী লাইসেন্সে থাকবে মোট ১২ পয়েন্ট। বিধি অমান্যের কারণে পয়েন্ট কেটে তা শূন্য হলে বাতিল হবে চালকের লাইসেন্স। এরপর চালককে নতুন করে লাইসেন্স নিতে হবে।-বাংলানিউজ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন