Sylhet View 24 PRINT

ধেয়ে আসছে ‘সুন্দর পাখার প্রজাপতি’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-১০ ২২:১৩:২২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে সাগর উত্তাল। বাড়ছে বাতাসের গতিবেগ। ‘সুন্দর পাখার প্রজাপতি’ নামের অর্থ হলেও তিতলিকে সম্ভব হলে এড়াতে চাইছে বাংলাদেশ। কিন্তু, তারপরেও পাখা নয় যেন থাবা মেলে ধরতেই বাংলাদেশ বা এর খুব কাছের ভারতের ওডিশা রাজ্যের গোপালপুর দিয়ে স্থলভাগে উঠতে পারে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা জলের পাখার প্রজাপতি তিতলি। তবে

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কায় দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত ও নদী বন্দরে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। পাশাপাশি সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, বুধবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সকল অভ্যন্তরীণ রুটে নৌ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

আবহাওয়া অফিসের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তিতলি সামান্য পশ্চিম দিকে সরছে। তাই সবকিছু মিলিয়ে এখনই বলা যাচ্ছে যে এটি বাংলাদেশে আসবে। এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে তাতে উত্তর-পশ্চিম দিকে ওডিশার কাছাকাছি গোপালপুর দিয়ে উপকূলের কাছাকাছি আসতে পারে। সেখান থেকে একটু মোড় নিয়ে বাংলাদেশেও আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ঘূর্ণিঝড় এখনও অনেক দূরে, এর মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটতে পারে। ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে চলার পথে বারবার গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে বলে তারা জানান। 

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি সামান্য উত্তর দিকে সরে গিয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। বুধবার সকালে ঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৪৫ কিলোমিটার দূরে থাকলেও দুপুরের পর তা এগিয়ে বন্দর থেকে ৯১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে সকালে ৯০০ কিলোমিটার দূরে থাকলেও এখন তা ৮৭০ কিলোমিটার দূরত্বে এসে অবস্থান করছে। মংলা সমুদ্রবন্দরের ৮১৫ কিলোমিটার থেকে এগিয়ে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এছাড়া পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এটি সকালে ৮১৫ কিলোমিটার দূরে থাকলেও এখন তা এগিয়ে এসে ৭৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। একইসঙ্গে এটি ভারতের ওডিশা ও অন্ধ্র উপকূলের দিকেও এগোচ্ছে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়।

আবহাওয়াবিদ এক এম রুহুল কুদ্দুছ জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসে গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রবল আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ।

এদিকে তিতলির প্রভাবে মঙ্গলবার রাত থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়োবৃষ্টি ও বাতাস বইতে শুরু করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানেও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। কমে গেছে তাপমাত্রা। আজ ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সামান্য বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা বাতাস যেন আসন্ন শীতের আগমনকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের অধিকাংশ জায়গা, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায়, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, ঝড়ের প্রভাবে ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। এইসব এলাকার নদী বন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া অন্য এলাকার নদী বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, বিকেল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে ৬৬ মিলিমিটার। এরপর কুতুবদিয়ায় ৪৬ মিলিমিটার, হাতিয়ায় ৪৪ মিলিমিটার, রাঙ্গামাটিতে ৩৬ কিলোমিটার, কক্সবাজারে ২৯ মিলিমিটার, সীতাকুণ্ডে ২৮ মিলিমিটার, সন্দ্বীপে ২০ মিলিমিটার, মাইজদীকোর্টে ১৪ মিলিমিটার এবং ফেনীতে ১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ঢাকা, কুমিল্লা ও চাঁদপুরে সামান্য বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে ঝড়ের কারণে বুধবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সব অভ্যন্তরীণ রুটে নৌ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিএ’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় তিতলি ধেয়ে আসার কারণে এরইমধ্যে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখানো হয়েছে। এর ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ নদীবন্দরগুলোতে বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে। ফলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সব অভ্যন্তরীণ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। এরইমধ্যে সব নৌবন্দরগুলোতে এ নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং ওমান মিলে গঠিত সংস্থা এস্কেপ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে। তিতলি’ নামটি পাকিস্তানের দেওয়া। তিতলি অর্থ, সুন্দর পাখার প্রজাপতি।

এছাড়া চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেতের অর্থ হলো বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। কিন্তু, ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনও আসেনি।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.