আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের নমিনেশন প্রদান, লাঞ্ছিত হলেন মির্জা ফখরুল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১১-২০ ১৩:২৪:১৬

নিউজ ডেস্ক: জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে একাধিক বিতর্কিত বিষয় নিয়ে সমঝোতা করার জন্য আগেই ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এবার যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের নমিনেশন দেয়ায় নিজ দলের নেতাকর্মীদের কাছে চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন বিএনপি’র এই শীর্ষ নেতা। বিশেষ করে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর অনুপস্থিতিতে পিরোজপুর-১ আসন থেকে তারই মেজপুত্র শামীম সাঈদীকে নির্বাচনে সমর্থন দেয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত হয়েছেন তিনি।

১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ চলাকালে এ অনভিপ্রেত ঘটনাটি ঘটে।

সূত্র বলছে, জামায়াতের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল পিরোজপুর-১ আসনসহ বেশকিছু আসনে যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের নমিনেশনের নিশ্চয়তা দেন। এসময় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

পিরোজপুর-১ আসনে খালেদা জিয়ার সাবেক বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা ও বিএনপির বিশেষ দূত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জাহিদ এফ সরদার সাদীর পক্ষে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম রাগান্বিত স্বরে মিডিয়ার সামনে সাঈদী পুত্রের নমিনেশনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে মির্জা ফখরুলকে পরামর্শ দেন। মির্জা ফখরুল তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানালে আব্দুস সালামের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে পিরোজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান বাবুল উত্তেজিত হয়ে মির্জা ফখরুলের দিকে তেড়ে আসেন। এসময় যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় তিনি মির্জা ফখরুলসহ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন।

এ বিষয়ে মির্জা ফখরুলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বিব্রতবোধ করেন এবং অত্র প্রতিবেদকের নিকট তার অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেন। সার্বিক বিষয়টি পত্রিকায় প্রকাশ না করতে তিনি অনুরোধ করেন। তিনি বলেন- ‘জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখতে ঐক্যফ্রন্ট ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে চাপ থাকলেও তিনি এ বিষয়ে কোন ভূমিকা রাখতে পারছেন না। এ বিষয়ে লিডারের (তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে) কথাই চূড়ান্ত। তাছাড়া, ম্যাডামের সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাতেও আমি এ বিষয়ে সম্মতি পেয়েছি’। দোষ না থাকা সত্ত্বেও সামগ্রিক বিষয়ে দলীয় সাধারণ কর্মীদের তোপের মুখে পড়ায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন।

সূত্র বলছে, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহম্মেদ একাধিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিতর্কিত সমঝোতা করার জন্য মির্জা ফখরুলকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেন। তিনি রংপুর থেকে নির্বাচন করতে চাইলেও মির্জা ফখরুলের জামায়াত প্রীতির জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না বলেও গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন।

এ প্রসঙ্গে রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মোজাফফর হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে মির্জা ফখরুল সাহেব অসম বণ্টনের মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়ার চুক্তি করছেন, যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়াও মির্জা ফখরুল জামায়াতের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের প্রকাশ্যে গণমাধ্যমের সামনে নমিনেশনের কথা বলে ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন- যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। অধিকাংশ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সাক্ষাৎকারে স্কাইপির মাধ্যমে তারেক রহমানের কাছে মির্জা ফখরুলের এই ধরনের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেছেন।

এদিকে বিবিধ রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের নমিনেশন প্রদান ও বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পৃক্ততার কারণে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও মনে করছেন মোজাফফর হোসেনসহ বিএনপি একাধিক নেতা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাজনীতিতে মির্জা ফখরুল মোটামুটি ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি। তিনি কখনই জামায়াত-যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলার মতো ব্যক্তি নন। আসলে বিএনপির রাজনীতিতে তারেক জিয়াই সব।’ তাছাড়া, সিনিয়রদের অসম্মান ও তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে রাজনীতি করা দেশ ও দলের জন্য কখনই মঙ্গল বয়ে আনে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন