আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

পোশাক শ্রমিকদের কাজে যাওয়ার আহ্বান, তিনটি গ্রেডের সমাধান রবিবার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-১২ ১০:৫৫:৫৬

‘বেতন বৈষম্য’ দূর করার দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের টানা আন্দোলনের পঞ্চম দিনে এসে সরকারের প্রতি আস্থা রেখে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম সচিব আফরোজা খান। তিনি পোশাক শ্রমিকদের ‘বেতন বৈষম্য নিরসনে’ গঠিত পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক।

এদিন তিনি জানান, ‘পর্যবেক্ষণে দেখা যায়- মজুরি কাঠামোর সাতটা গ্রেডের মধ্যে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডেই মূলত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সরকারের ঘোষিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ি পোশাক শ্রমিকদের আশানুরূপ মজুরি বৃদ্ধি পায়নি। আর এই তিনটি গ্রেডের সমাধান হলেই এ খাতে কর্মজীবীরা তাদের ন্যায্য পাওনা পাবে বলে জানিয়েছে সরকারপক্ষ।’
এবারের পোশাক খাতের মজুরি কাঠামোতে ন্যূনতম মজুরি ধরা হয়েছে আট হাজার টাকা। দ্বিতীয় গ্রেডে ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা, তৃতীয় গ্রেডে ৯ হাজার ৫৯০ টাকা, চতুর্থ গ্রেডে ৯ হাজার ২৪৫ টাকা, পঞ্চম গ্রেডে ৮ হাজার ৮৫৫ টাকা ও ষষ্ঠ গ্রেডে ৮ হাজার ৪০৫ টাকা।

তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত ২৫ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করেছিল বিগত সরকার। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে তা কার্যকর করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল সেখানে। কিন্তু একটি মহল শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় যে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হওয়া মজুরি কাঠামোতে বার্ষিক পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। ওই হিসাব ধরা হলে এখন যত বেতন ধরা হয়েছে তাতে তাদের মজুরি আরও কমে যাবে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শ্রমিকরা।

বেতন কাঠামোর ঘোষণা আসার সময় পোশাক শ্রমিকরা কোনও প্রতিক্রিয়া না দেখালেও গত ৩০ ডিসেম্বর সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো নতুন সরকার গঠন করার পরপরই গত রবিবার রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে পোশক শ্রমিকরা। নতুন বেতন কাঠামোতে নানা বৈষম্য আর ত্রুটি আছে এমন অভিযোগ এনে তা সমাধানের কথা বলে তখন থেকেই বিভিন্ন অংশের পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা টানা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।

এর সমাধানে গত মঙ্গলবারই জরুরি বৈঠকে বসে সরকার, মালিক ও শ্রমিকপক্ষ। যেখানে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের পাঁচজন করে এবং সরকারের বাণিজ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে নিয়ে ১২ সদস্যের একটি মূল্যায়ণ কমিটি গঠন করা হয়।

পর্যালোচনা শেষে মজুরি কাঠামোর সাতটি গ্রেডের মধ্যে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডেই মূলত সমস্যাটার সৃষ্টি হয়েছে বলে কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। একইসাথে কমিটির আহ্বায়ক ও শ্রম সচিব আফরোজা খান গার্মেন্টস শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সরকারের প্রতি আস্থা রাখুন, কাজে যোগদিন। যেহেতু সমস্যা শনাক্ত হয়েছে সেহেতু সমস্যা সমাধান করা যাবে। পরবর্তী বৈঠকে ওই তিনটি গ্রেডের বিষয় সমাধান করা হবে।’

এদিকে সূত্রে জানাগেছে, মজুরি কাঠামোর চেয়েও পোশাক শ্রমিকদের বেশি বেতন দেওয়া হয় এমন একটি কারখানাও এ আন্দোলনের সময়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।

নির্বাচনের পরপরই হঠাৎ ভুল তথ্য দিয়ে শ্রমিকদের এভাবে ক্ষেপিয়ে তুলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য আন্দোলনের উষ্কানির পিছনে কুচক্রি মহলের আতাত দেখছেন শ্রম সচিব। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির মূলভিত্তিই হচ্ছে গার্মেন্টস খাত। আর এ খাতকে ধ্বংস করার জন্য একটি চক্র পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে। আন্দোলনের পেছনে শুধু শ্রম বৈষম্য নয়, খাতটিতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য কোনো একটি মহলের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।’

সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের যে কোনো সমস্যার অভিযোগ গ্রহণের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের হটলাইন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হবে বলে জানান শ্রম সচিব।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন