Sylhet View 24 PRINT

হাসপাতাল থেকে বের করে দিলেন নার্স, গাছতলায় সন্তান প্রসব

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-২০ ০১:১৬:৩৫

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রীনা বেগম (৩০) নামে এক প্রসূতিকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক নার্সের বিরুদ্ধে। পরে হাসপাতালের বাইরে গাছের নিচে ওই প্রসূতি একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। শনিবার দুপুরে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ওই নার্সকে শোকজ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সাথে ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার গভীর রাতে বোদা উপজেলার গোয়ালপাড়া এলাকার জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী রীনা বেগমের প্রসব বেদনা ওঠে। শনিবার সকাল ৮টার দিকে তাকে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়।

রীনা বেগমের প্রথম সন্তান সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে হয়েছিলো শুনে দুপুরের দিকে হাসপাতালের মিডওয়াইফ নার্স শাবানা বেগম প্রসূতিকে ছাড়পত্র দিয়ে পঞ্চগড় বা ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় ওই প্রসূতির স্বামী জাহিদুল ইসলাম টাকা ও গাড়ির ব্যবস্থা করতে যান।

এদিকে ছাড়পত্র দেয়ার পরও ওই রোগী হাসপাতাল না ছাড়ায় তা চাপ দিতে থাকেন নার্স শাবানা বেগম। কিন্তু স্বামী ফিরে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিলো না রীনার।

এক পর্যায়ে তাদের হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করেন ওই নার্স। ননদ রেজিনাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে হাসপাতালের সামনের একটি ইউক্যালিপটাস গাছের নিচে অপেক্ষা করছিলেন ওই প্রসূতি। কিছুক্ষণ পর সেখানেই একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এটি তার তৃতীয় সন্তান।

পরে ওই হাসপাতলের পরিচ্ছন্ন কর্মী সোহাগী নবজাতক ও প্রসূতিকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে নিয়ে যান। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্থানীয়রা। মুহূর্তেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালে ছুটে আসেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আফরোজা বেগম ও বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই প্রসূতিকে দেখতে যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক ওই রোগীকে অর্থ সহায়তা দেন।

এ ঘটনায় ওই প্রসূতির পরিবারসহ স্থানীয়রা দোষীদের বিচার দাবি করেছেন।

প্রসূতি রীনা বেগম বলেন, ছাড়পত্র দেয়ার পর আমি আমার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু নার্স শাবানা আমাকে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করেন। নিরুপায় হয়ে ননদ রেজিনা আক্তারকে নিয়ে হাসপাতালে বাইরের একটি গাছের নিচে আশ্রয় নিই। সেখানেই আমার সন্তান প্রসব হয়।

রীনার স্বামী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা অমানবিক। আমরা চাই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে আর কোনো প্রসূতি মাকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে না হয়।

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসআইএম রাজিউল করিম রাজু জানান, নার্স শাবানা বেগমকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার কারণ জানতে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. জাহিদ হাসানকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমি হাসপাতালে ওই রোগীকে দেখতে যাই। আমি বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগকে জানিয়েছি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নার্স শাবানা বেগম বলেন, রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে আমি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি মাত্র।

সৌজন্যে: বাংলাদেশ জার্নাল

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.