Sylhet View 24 PRINT

মৃত্যুর ১৩ দিন পর ছেলেদের জমি লিখে দিলেন বাবা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-০৭ ১৯:২৬:৪৩

সিলেটভিউ ডেস্ক ::নওগাঁর মান্দায় বাবার মৃত্যুর ১৩ দিন পর নকল ব্যক্তিকে বাবা সাজিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন ছেলেরা। এই কাজে তাদের সহযোগিতা করেন স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রার শংকর চন্দ্র বর্মণ ও দলিল লেখক হামিদুর রহমান। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সাময়িক বরখাস্ত হন দলিল লেখক হামিদুর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শংকর চন্দ্র বর্মণ ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রসাদপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগ দেন। এছাড়া তিনি পার্শ্ববর্তী মহাদেবপুর উপজেলার অতিরিক্ত সাব-রেজিস্ট্রারের দায়িত্বও পালন করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রসাদপুরে যোগ দেয়ার পর তিন বছর ধরে সাব-রেজিস্ট্রার শংকর চন্দ্র বর্মণ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করেই চলছেন।

অভিযোগ উঠেছে, প্রসাদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নকল ব্যক্তিকে দাতা (কছিম উদ্দিন) সাজিয়ে এবং তার ছবি লাগিয়ে গত ১৯ জুন দানপত্র হিসেবে একটি জমি রেজিস্ট্রি করা হয় (দলিল নম্বর ৪৪০৩)। এরপর দলিল থেকে ওই ভুয়া ব্যক্তির ছবি সরিয়ে জমির প্রকৃত মালিক কছিম উদ্দিনের ছবি লাগানো হয়।

অথচ কছিম উদ্দিন এর প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই (৬ জুন) মারা যান। তার বাড়ি উপজেলার ভালাইন ইউনিয়নের মদকচক গ্রামে। কিন্তু স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২৬ জুন তার মৃ্ত্যুর তারিখ দেখিয়ে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ নেয়া হয়।

কছিম উদ্দিনের চার ছেলে- সাইফুদ্দিন, শরিফুল, আশরাফুল ও আলমগীর তাদের চার বোনকে বঞ্চিত করতে সাব-রেজিস্ট্রার শংকর চন্দ্র বর্মণ ও দলিল লেখক হামিদুর রহমানের যোগসাজশে মৃত বাবাকে জীবিত দেখিয়ে এভাবে জমি রেজিস্ট্রি করেন। এজন্য তারা ভুয়া ব্যক্তিকে বাবা সাজান। জমি রেজিস্ট্রির পর ওই নকল দাতার ছবি সরিয়ে আসল দাতার (কছিম উদ্দিন) ছবি দলিলে সংযুক্ত করা হয়। কয়েক দিন পর বিষয়টি প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় দলিল লেখককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

গ্রহীতাদের একজন আশরাফুল বলেন, বাবা মারা যাওয়ার আগে সব কাগজপত্র ঠিক করা ছিল। হঠাৎ করেই তিনি মারা যান। এর কয়েক দিন পর দলিল লেখকের মাধ্যমে চার একর ৩৬ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। তিনি স্বীকার করেন, মূলত চার বোনকে বঞ্চিত করতেই এটা করা হয়েছিল। এরপর বোনরা বিষয়টি জানতে পারায় তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরে স্থানীয়ভাবে বসে বিষয়টি মিটমাট করা হয়েছে।

দলিল লেখক হামিদুর রহমান বলেন, কাগজপত্র দেখেই জমির দলিল করে দিয়েছি। যে ব্যক্তি মারা গেছেন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া তার মৃত্যুর সনদপত্র আমার কাছে আছে। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ১৫ দিন আগে তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মান্দা প্রসাদপুর দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এরশাদ আলী বলেন, দলিল লেখক হামিদুর রহমান বেশ কিছুদিন থেকে অফিসে আসছেন না। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শুনেছি, তিনি এক মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রিতে সহযোগিতা করেছেন। তবে কোনো পক্ষই আমার কাছে অভিযোগ করেনি।

অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনা ছাড়াও সাব-রেজিস্ট্রার শংকর চন্দ্র বর্মণের যোগসাজশে উপজেলার কুশুম্বা ইউনিয়নে শামুকখোল মৌজায় সরকারি সম্পত্তি (ক-তফসিল অর্পিত) ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। ওই মৌজায় ২০১৮ সালের ৫ মার্চ ১৬ শতাংশ কাতে সাড়ে ৩ শতাংশ জমি (দলিল নম্বর ২৪২১, আরএস-১২৮ , খতিয়ান দাগ নম্বর হাল- ৪৯২ ও সাবেক ২৭০) বুদ্ধেশ্বরের তিন ছেলে সমর, অমল ও শ্যামলকে দাতা সাজিয়ে জগমোহনের ছেলে সঞ্জিত কুমারকে রেজিস্ট্রি করে দিতে তিনি (শংকর চন্দ্র বর্মণ) সহযোগিতা করেন।

এছাড়া ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি ৪৯২ নম্বর দলিলে একই খতিয়ানের ১৬ শতাংশ কাতে ৭ শতাংশ জমি ছেলে আনন্দ কুমারকে দাতা সাজিয়ে নওফেলের ছেলে রফিকুল ইসলাম রেজিস্ট্রি করে নেন। এ কাজেও শংকর চন্দ্র বর্মণ যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

অথচ এসএ খতিয়ান মূলে গেজেট হওয়ায় (কেস নম্বর ৪/১৯৮৩) ভিপি সম্পত্তি হিসেবে মান্দা সহকারী ভূমি কমিশনারের কার্যালয় থেকে ডিসিআর মূলে সরকারকে রাজস্ব প্রদান সাপেক্ষে শামুকখোল গ্রামের ভূমিহীন আব্দুল জব্বার ও তার দুই ছেলেকে বিধি মোতাবেক ৯ শতাংশ জমি লিজ দেয়া হয়েছে।

ভূমিহীন আব্দুল জব্বার বলেন, একই কাগজের ৯ শতাংশ জমি আমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ১০-১২ বছর ধরে বসবাস করছি। বাকি জমি আরও দুই ব্যক্তি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। জমির প্রকৃত মালিক ভারত থাকেন। তাদের কোনো আত্মীয়স্বজন এখানে থাকেন না।

এ বিষয়ে সঞ্জিত কুমার বলেন, জমির প্রকৃত মালিক ধরনি মোহন দাস। তার ভাগনেদের কাছ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছি। তবে ভূমি উন্নয়ন করের রসিদের বিষয়ে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাব-রেজিস্ট্রার শংকর চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে অফিসে একসঙ্গে বসে চা খাওয়ার দাওয়াত দেন তিনি।


সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪
সিলেটভিউ২৪ডটকম/৭ নভেম্বর ২০১৯/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.