Sylhet View 24 PRINT

নতুন রিপোর্ট প্রকাশ: স্যানিটেশন শ্রমিকদের নির্মম কর্ম পরিবেশ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-১৮ ১৭:৫৫:৫৮

সিলেটভিউ ডেস্ক :: বিশ্ব টয়লেট দিবসকে সামনে রেখে ওয়াটারএইড, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এক সঙ্গে মিলে ‘স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও স্যানিটেশন শ্রমিকদের মর্যাদা’ শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

স্যানিটেশন শ্রমিকদের নির্মম কর্ম পরিবেশের কথা উল্লেখ করে তা পরিবর্তনের ওপর বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে রিপোর্টটিতে। উন্নয়নশীল বিশ্বে এখনও স্যানিটেশন শ্রমিকদের অবস্থার ভয়াবহ চিত্র চোখে পড়ার মতো।

স্যানিটেশনের বিশাল লম্বা চেইনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরুষ ও নারী স্যানিটেশন শ্রমিকরা কাজ করে। মানুষের টয়লেটে যাওয়া থেকে শুরু করে বর্জ্য নিষ্পত্তি বা পুনঃব্যবহার করা পর্যন্ত কাজে নিয়োজিত থাকে এই স্যানিটেশন শ্রমিকরা।

টয়লেট পরিষ্কার করা, গভীর কূপ ও সেপটিক ট্যাংক খালি করা, সুয়ারেজ লাইন ও ম্যানহোল পরিষ্কার করা এবং পাম্পিং ষ্টেশন ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পরিচালনা করা স্যানিটেশন শ্রমিকদের কাজের মধ্যে পড়ে।

বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্যানিটেশন শ্রমিকদের বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশের মাঝে কাজ করতে হয়, যা তাদের স্বাস্থ্য এমনকি জীবনের জন্য মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ সুইপার রয়েছে যারা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে এবং প্রায়শই কোনো সরঞ্জামাদি ও কোনো ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

এসব শ্রমিকরা কোনো সরঞ্জামাদি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিয়ে মনুষ্য বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজে নেমে পড়ে, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য চরমভাবে বিপজ্জনক।

সুয়ারেজ লাইন ও সেপটিক ট্যাংকে টক্সিক গ্যাস যেমন- অ্যামোনিয়া, কার্বন মনোঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইড থাকায় শ্রমিকরা অজ্ঞান হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর মুখে পতিত হয়ে থাকেন।

যদিও বিশ্বব্যাপী কোনো পরিসংখ্যান নেই, তবে শুধুমাত্র ভারতে প্রতি পাঁচদিনে তিনজন স্যানিটেশন শ্রমিক মারা যায়, অসংখ্য শ্রমিক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ও মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার কারণে আয়ুকাল কমে যায়।

অধিকার বা কোনো প্রকার সামাজিক সুরক্ষা ছাড়াই শ্রমিকরা এসব কাজ করে থাকে। অসঙ্গত কিংবা বিনা বেতনে কাজ করতে হয় তাদেরকে- কখনও কখনও কিছু শ্রমিকদের কাজের বিনিময় অর্থ না দিয়ে খাবার দেয়া হয়।

অনেক দেশে স্যানিটেশন শ্রমিকদের কাজকে সামাজিকভাবে হেয় বা কলঙ্কজনক কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়, আর তাই শ্রমিকরা প্রায়ই রাতে কাজ করে যেন অন্যান্যদের থেকে লুকিয়ে থাকা যায়।

এ প্রসঙ্গে ওয়াটারএইড-এর সিইও টিম ওয়েইনরাইট বলেন, সবাই টয়লেট ব্যবহার করে আর এর মাধ্যমে সবাই কিন্তু পানিবাহিত সংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে থাকতে পারতো যদি না বর্জ্যরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিকভাবে করা হতো।

স্যানিটেশন শ্রমিকদের বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশের মাঝে কাজ করতে হয়, যা তাদের স্বাস্থ্য এমনকি জীবনের জন্য মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।

এছাড়া উপযুক্ত সরঞ্জামাদি, সম্মান এবং জীবন রক্ষাকারী কাজে নিয়োজিত হওয়ায় সে অনুযায়ী মর্যাদা পাওয়ার পরিবর্তে তাদেরকে বৈষম্য ও দারিদ্র্যতার শিকার হবে যা সত্যিই হতাশাজনক। দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশের কারণে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে মানুষ, যা আমরা মোটেই এভাবে চলতে দিতে পারি না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাবলিক হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্টের ডিরেক্টর মারিয়ে নেইরা বলেন, “স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মৌলিক যে নীতি তা হচ্ছে প্রথমে কোনো ধরনের ক্ষতি করা যাবে না।

সারাবিশ্বেই স্যানিটেশন শ্রমিকরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি মানা যায় না।

এসকল মানুষের জন্য কাজের পরিবেশ উন্নয়ন এবং গতিশীল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আমাদের নিশ্চিত করতেই হবে আর তাতে করেই বিশ্বব্যাপী পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সংক্রান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সেকটরাল পলিসিজ ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর অ্যালেটে ভ্যান লিউর বলেন, স্যানিটেশন শ্রমিকদের ঘিরে নীতি, আইন ও নিয়মের অভাব আছে।

যেসব জায়গায় তারা বসবাস করে তা অপর্যাপ্ত। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় আর্থিক ও আনুষঙ্গিক প্রয়োগকারী প্রক্রিয়ার অভাবও লক্ষণীয়।

বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল প্র্যাকটিস বিভাগের ডিরেক্টর জেনিফার সারা বলেন, এখনই সময় স্যানিটেশন শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে সবাইকে এগিয়ে এসে কাজ করার।

স্যানিটেশন শ্রমিকরা যেসব সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা বোঝার জন্যই এই রিপোর্টটি প্রকাশ করা হলো যা এই সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। রিপোর্টে আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে কিভাবে কি করলে বর্তমান চিত্রের পরিবর্তনের পাশাপাশি কার্যকরী উপায়ে তা সমাধান করা যেতে পারে।

বিশ্ব ব্যাংকের ‘আরবান স্যানিটেশন প্রোগ্রাম’-এর আওতায় আমরা স্যানিটেশন শ্রমিকদের উন্নয়নে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

এছাড়া ওয়াটারএইড, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে মিলে সচেতনতা বৃদ্ধি ও এমন গুরুতর সমস্যা সমাধানে কাজ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে।

সৌজন্যে :: যুগান্তর
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ নভেম্বর ২০১৯/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.