Sylhet View 24 PRINT

সিলেটসহ সারা দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় ১০ পণ্যের ঝাঁজে অস্বস্তি বাজারে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-২৪ ২১:০১:৪৮

সিলেটভিউ ডেস্ক :: দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। গত এক মাসের ব্যবধানে অন্তত ১০ রকমের নিত্য পণ্যের মূল্য অব্যাহতভাবে বেড়েছে। এই ১০ পণ্য হলো—চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, দারুচিনি, এলাচ, শুকনো মরিচ ও আদা। এর মধ্যে কেবল চালের মূল্যই বেড়েছে কেজিতে ৭ টাকা। আটার মূল্য বেড়েছে ১০ টাকা। ডালের মূল্য বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। আর সয়াবিন তেলের মূল্য বেড়েছে ২০ টাকারও বেশি। গত বছরের এই সময়ে ২০ টাকায় যে পেঁয়াজ পাওয়া যেতো, এখন সেই পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকায়। কিছুদিন আগে এই পেঁয়াজ কিনতে ২৫০ টাকা খরচ করতে হয়েছে। রসুনের মূল্য বেড়েছে ২০ টাকা। শুকনো মরিচের মূল্য কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দারুচিনির মূল্য বেড়েছে ২০ টাকা। আর গত এক মাসের ব্যবধানে এক কেজি এলাচের মূল্য বেড়েছে ১ হাজার ৪শ টাকা। একইভাবে চিনির মূল্য বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। এক মাস আগে যে চিনির মূল্য ছিল ৫৫ টাকা। বর্তমানে সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা দরে। এছাড়া মাছ ও মাংসের বাজারেও অস্থিরতা চলছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকামে জিনিসপত্রের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে খুচরা বাজারেও বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী আহম্মদ আলী বলেন, ‘মোকামে চালের মূল্য বেড়ে গেছে। যে কারণে এখানেও বাড়াতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘মিনিকেট চালের মৌসুমের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আগামী এপ্রিলের দিকে নতুন ধান উঠবে। এর আগ পর্যন্ত এই মূল্য আর কমবে না।

চালের মূল্য বেড়েছে কেজিতে ৭ টাকা

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক মাসে চালের মূল্য বেড়েছে কেজিতে ৭ টাকার বেশি। এক মাস আগে অর্থাৎ গত ডিসেম্বর মাসের ২৪ তারিখে সরু চালের মূল্য ছিল কেজিতে ৪৫ টাকা। এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকায়। একইভাবে এক মাস আগে সাধারণ মানের মিনিকেট ও নাজির চালের মূল্য ছিল ৪৫ টাকা। এখন সেই চালই বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকায়।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে সাধারণ মানের মিনিকেট ও নাজির চালের মূল্য বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর সরু চালের মূল্য বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের মূল্য কমতে আরও তিন মাস লেগে যাবে। ব্যবসায়ীরা বর্তমানে মিনিকেটের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি করছেন ২ হাজার ৩৫০ টাকা। এক মাস আগে এই চাল বিক্রি হয় ২ হাজার ১৫০ টাকায়। পাইকারি বাজারে মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৪৮ টাকা থেকে ৫৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এই চাল খুচরা  বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা থেকে ৫৪ টাকায়।

ডালের মূল্য বেড়েছে ১০ টাকা

গত এক মাসে গরিবের মাংশ হিসেবে বিবেচিত ডালের মূল্য বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। ক্রেতাদের দাবি, মোটা দানার মসুর ডালের কেজিতে প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে। এ ডাল আবার নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি কেনে। এক মাস আগে এই ডাল ৫৫ টাকা কেজিতে পাওয়া গেলেও এখন একই পরিমাণ ডাল কিনিতে হচ্চে ৬৫ টাকা দিয়ে। এদিকে, সরকারে তথ্যও বলছে, গত এক মাসে মোটা দানার ডালের মূল্য বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

আটার মূল্য বেড়েছে ১০ টাকা

এক মাসে চালের চেয়েও আটার মূল্য বেশি বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন,  এক মাস আগে প্যাকেট আটা ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করা যেতো। কিন্তু এখন সেই একই আটা বিক্রি করতে হচ্ছে ৪৫ টাকা। টিসিবি’র তথ্য অনুযায়ী গত এক মাসে প্যাকেট আটার মূল্য বেড়েছে ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

সয়াবিন তেলের মূল্য বেড়েছে লিটারে ২০ টাকা

সয়াবিন তেলের মূল্য বেড়েছে ২০ টাকারও বেশি। গত নভেম্বর মাস থেকে কয়েক ধাপে বেড়েছে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য, লিটারে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। বোতলের তেলও লিটারে ২০ টাকা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এক মাস আগে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের মূল্য ছিল ৫০০ টাকা। এখন সেই বোতল বিক্রি হচ্ছে ৫২০ টাকা। এছাড়া, এক মাস আগে যে পাম তেলের মূল্য ছিল ৭৯ টাকা। এখন একই পরিমাণ পাম তেলের মূল্য ৯০ টাকা।

এক বছরে পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ৩৪৪ শতাংশ

পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য এখনও ভোগাচ্ছে দেশবাসীকে। রাজধানীর বাজারগুলোতে ১০০ টাকার নিচে মিলছে না দেশি নতুন পেঁয়াজের কেজি। আমদানি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। টিসিবির হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ৩৪৪ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ২২২ শতাংশ ।

রসুনের মূল্য বেড়েছে ২০ টাকা

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের পাশাপাশি গত এক মাসে রসুনের মূল্যও বেড়েছে।  (টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক মাস আগে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা। এখন সেই রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি। আমদানি করা রসুনের মূল্য এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৮৩ শতাংশ। বর্তমানে আমদানি করা রসুন কেজি ১৩০-১৫০ টাকা এবং দেশি রসুন ১৪০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

আরও বেড়েছে যেসব পণ্যের মূল্য

শুকনো মরিচের মূল্য কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। গত ২৪ ডিসেম্বর প্রতি কেজি শুকনো মরিচের মূল্য ছিল ২০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা। এখন সেই শুকনো মরিচের মূল্য ২২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। একইভাবে দারুচিনির মূল্য বেড়েছে ২০ টাকা। ৪০০ টাকা কেজি দারুচিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকা। আর  গত এক মাসের ব্যবধানে এক কেজি এলাচের মূল্য বেড়েছে ১ হাজার ৪শ টাকা। টিসিবি’র হিসেবে গত এক মাসে এলাচের মূল্য  ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬শ টাকা কেজি। এখন সেই এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকা দরে। যদিও এক সপ্তাহ আগে এলাচের মূল্য আরও বেড়ে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৫০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এ পণ্যটির মূল্য বেড়েছে ২২ শতাংশ।
অস্বস্তিতে সবজির বাজার

শীতের সবজি বাজারে ভরপুর। কিন্তু  মূল্য বেশ চড়া। বাজারে শসা, বেগুন, পেঁপে, গাজর, শিম, করলা, দেশি পাকা টমেটো ৪০-৬০ টাকা,  মুলা ২০-২৫ টাকা, নতুন গোল আলু ২৫-৩০ টাকা, শালগম ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শীতের অন্যতম সবজি ফুলকপি ও বাধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা প্রতি পিস।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন,‘ নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়লে জীবনমানে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। অনেক সময় মানুষকে সঞ্চয়ে ভেঙে জীবন চালাতে হয়।’

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ২০১৯ সালে ঢাকার মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ শতাংশ। আগের বছরেও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির হার একই ছিল। অর্থাৎ গত দুই বছরে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ১২ শতাংশের ওপরে।

সৌজন্যে :: বাংলা ট্রিবিউন
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৪ জানুয়ারি ২০২০/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.