Sylhet View 24 PRINT

ওরা ১৫ জন

ঈদের আনন্দ মাটি করে করোনায় মৃতের দাফনে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-২৭ ২০:৫৯:৩৫

সিলেটভিউ ডেস্ক :: করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে বৃদ্ধা মাকে নির্জন স্থানে ফেলে চলে যাচ্ছে সন্তানেরা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া কোনো ব্যক্তির গোসল, দাফনে মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়ে অনেক এলাকার গোরস্তানেও দাফন করতে দেওয়া হচ্ছে না লাশ। পাড়া-মহল্লায় সর্বত্র একঘরে হয়ে যাচ্ছেন করোনারোগীদের সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর করোনা আক্রান্তদের অবস্থা তো আরও খারাপ, ঠাঁই নেই কোথাও।

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক ভাইরাসের দাপটে কোথায় গেল মানবতা, কোথায় গেল মনুষ্যত্ববোধ- ভাবছেন অনেকেই। এতো সব হতাশা, আতঙ্কের মাঝেও আমরা মাঝে মাঝেই আলোর ঝিলিকের মতো মানবতা আর মনুষ্যত্বের পতাকাবাহী কিছু যোদ্ধার দেখা পাই। যাদের দেখে আমরা আবার জেগে উঠি, বেঁচে উঠি।

নারায়নগঞ্জের কাউন্সিলর মাকুদুল আলম খোন্দকার খোরশেদ, বরিশালের শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট বিভূতিভূষণ হালদার, হাজার হাজার ডাক্তার, নার্স, সেনাসদস্য, পুলিশ, র‌্যাবসহ আরও অনেকের অনেক রকম ভূমিকার কথায় আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারছি। বুঝতে পারছি, দেশের আনাচে-কানাচে এ রকম আরও অসংখ্য মানবতাবাদী নিজেদের মতো কাজ করে যাচ্ছেন, যাদের সবার কথা মিডিয়ায় আসছেও না। মিডিয়া কাভারেজের জন্য তাদেরও অনেকেই আগ্রহীও না।

তেমনই একজন শফিকুল ইসলাম জুয়েল। যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। বর্তমানে আছেন যুবলীগের সাথে। করোনায় মৃতদের গোসল, দাফন নিয়ে নানা সমস্যার কথা যখন মিডিয়ায় আসতে শুরু করে, বিষয়টি বিচলিত করে তোলে তাকে। নিজে উদ্যোগ নিয়ে ১৫ সদস্যের একটি দল গঠন করেন তিনি। এর মধ্যে ৫ জন নারীও আছেন। আছেন মৃতের জানাজা পড়ানোর যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এ ১৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের দেওয়া হয় উন্নতমানের সুরক্ষা সামগ্রীও। শুধু মুসলিম নন, অন্য ধর্মের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে সেই মরদেহের সৎকারের জন্যও প্রস্তুত আছেন তারা। বর্তমানে যশোর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে করোনায় মৃত কাউকে গোসল, দাফনের প্রয়োজনে তাদের ডাকা হলে সাথে সাথে সেই ডাকে সাড়া দিতে তারা প্রস্তুত আছেন।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ১৫ জনের এ কমিটি করা হলেও যশোরে করোনায় আক্রান্ত কেউ মারা না যাওয়ায় তাদের তেমন প্রয়োজন হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের ওপর প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট আসে ঈদের দিন রাতে।

ঢাকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান যশোরের ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান কলি। তিনি যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান, সে বিষয়টি তার পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়। তবে বিষয়টি যশোরের জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগ জানতো না। মৃতের পরিবার থেকে জুয়েলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেন। জেলা প্রশাসন থেকে জুয়েলের টিমকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়। ঈদের দিন রাত ১১টায় জুয়েলের টিম যশোর কারবালা কবরস্থানে আনিসুর রহমান কলির মরদেহ দাফন করে।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শফিকুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘আমরা ১৫ সদস্যের টিম যখন প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম, তখন সবাই যথেষ্ট মোটিভেটেড ছিলাম। কিন্তু বাস্তবে যখন একটি পরিবার থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফনের অনুরোধ আসলো, আমাদের অনেকেরই হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিল। বাস্তবে কাজ করতে গিয়ে অনেক হিসেবই এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। তারপরও আমরা মনোবল ঠিক রেখেছিলাম এবং সুষ্ঠুভাবে দাফন কার্য সম্পাদন করতে পেরেছি। প্রথম কাজ বলে হয়তো এরকম হয়েছে। তবে আমাদের মনোবল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা চাই না করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাক। তারপরও যদি কেউ মারা যান, তার পরিবার থেকে বলা মাত্রই আমরা ১৫ জনের দল তাৎক্ষণিক ছুটে  যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি’।

সৌজন্যে : বিডি প্রতিদিন

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৭ মে ২০২০/ডেস্ক/মিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.