Sylhet View 24 PRINT

সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাবা-মাকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিল ছেলে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-২৮ ১৯:৪২:৩৪

সিলেটভিউ ডেস্ক :: সম্পত্তি লিখে দিয়েও রক্ষা পায়নি বৃদ্ধ বাবা-মা। মারধর করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মা ছকিনা বেগম (৭০) ও বৃদ্ধ বাবা আবদুল হাফেজ আকনকে (৮০) বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে ছেলে মাহাবুবুল হক খোকন।

মঙ্গলবার রাতে তালতলী উপজেলার ছোটভাইজোড়া গ্রামে এ ঘটনার পর আহত বাবা-মাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেন।

জানা গেছে, উপজেলার ছোটভাইজোড়া গ্রামে আবদুল হাফেজ আকনের ১০০ শতাংশ জমি রয়েছে। ওই জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে দুই ছেলে। গত পাঁচ বছর পূর্বে মা ছকিনা বেগম দৃষ্টিহীন হয়ে যান। এতে স্ত্রীকে নিয়ে বিপাকে পড়েন বৃদ্ধ আবদুল হাফেজ। ছেলেরা তার বাবা-মায়ের দেখভাল ও ভরণ-পোষণ দিচ্ছে না। খেয়ে না খেয়ে দৃষ্টিহীন স্ত্রীকে নিয়ে দিনাতিপাত করেন বৃদ্ধ আবদুল হাফেজ।

সংসারের বোঝা বহন করতে না পেরে বড়ছেলে মো. মাহবুবুল হক খোকনের কাছে জমি বিক্রির প্রস্তাব দেন বৃদ্ধ বাবা। জমি বিক্রির প্রস্তাব পেয়ে বড়ছেলে বাবা-মাকে নিজের ঘরে তুলে নেন। গত এক বছর ধরে বাবা-মাকে দেখভাল করেন খোকন। বাবা-মাকে দেখভাল করার সুবাদে ছেলে বাবাকে জমির দলিল দিতে বলে কিন্তু বাবা এতে রাজি হয়নি।

এতে ক্ষিপ্ত হয় ছেলে খোকন ও তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম। এরপর বাবা-মায়ের প্রতি নেমে আসে নির্যাতন। ছেলে খোকন তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম প্রায়ই বাবা-মাকে মারধর করে এমন অভিযোগ বাবা আবদুল হাফেজ আকনের। ছেলের নির্যাতন সইতে না পেরে ৩৬ শতাংশ জমি বাবা আবদুল হাফেজ ছেলে খোকনকে লিখে দেন।

কিন্তু এতে সন্তুষ্ট হয়নি ছেলে খোকন। পরে বাবার অবশিষ্ট জমি লিখে দিতে বাবাকে চাপ প্রয়োগ করে খোকন। গত দুই মাস আগে ওই জমিও ছেলে লিখে নেন বলে অভিযোগ করেন বাবা আবদুল হাফেজ আকন। ছেলেকে জমি লিখে দিয়েও রক্ষা পায়নি তারা। সমুদয় জমি লিখে নেয়ার পর তাদের ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন।

কথায় কথায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে মারধর করে ছেলে খোকন, ছেলের বউ সুফিয়া ও নাতনি মনি আক্তার। মঙ্গলবার রাতে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ছেলের বউ সুফিয়া বেগম ও নাতনি মনি আক্তার দৃষ্টিহীন ছকিনা বেগম ও আবদুল হাফেজ আকনের ওপর হামলা চালায়। পুত্রবধূ ও নাতনির হামলায় তারা দুইজন গুরুতর জখম হন।

পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা তথ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। পরে তথ্য অফিসার সংগীতা সরকার তাদের তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বৃদ্ধ আবদুল হাফেজ বলেন, মোর সব জায়গাজমি লিখে নিয়ে আমার ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতনি আমাকে ও আমার অন্ধ স্ত্রীকে পিটিয়েছে। আমাদের ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।

এ বিষয়ে ছেলে মাহবুবুল হক খোকনের স্ত্রী সুফিয়া বেগম শ্বশুর-শাশুড়িকে মারধর ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, জমি লিখে নেয়নি। শ্বশুর টাকার বিনিময়ে জমির দলিল দিয়েছেন। তবে আমার শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে আমার মেয়ের ঝামেলা হয়েছে। এ বিষয়ে সালিশ বৈঠকের কথা চলছে।

তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ফাইজুর রহমান বলেন, বৃদ্ধ আবদুল হাফেজের বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তার স্ত্রী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছকিনা বেগমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে।

তালতলী থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে শুনেছি পারিবারিকভাবে এ বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৮ অক্টোবর ২০২০ /যুগান্তর /জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.