Sylhet View 24 PRINT

‘মুভমেন্ট পাস’ হেইডা আবার কী স্যার?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৪-১৪ ১৭:৩৬:৫১

সিলেটভিউ ডেস্ক ::  মাইক্রোবাসচালক দিলবার শেখ। সাভার থেকে রোগী নিয়ে এসেছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সকালে হাসপাতালে রোগী রেখে আবার সাভারে ফিরে যাওয়ার পথে গাবতলীতে বিআরটিএ-এর চেকপোস্টে পুলিশ তাকে আটকে দেয়।

চেকপোস্টে গিয়ে মাইক্রোবাসচালক দিলবারকে বিআরটিএ-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুভমেন্ট পাসের কথা জিজ্ঞেস করলে উত্তরে দিলবার জানায়, ‘মুভমেন্ট পাস’ হেইডা আবার কি স্যার? আমি রোগী নিয়ে হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে চইলা আসলাম। রাস্তায় চললে পাস লাগে আগে তো জানতাম না। আমার গাড়ির কাগজপত্র এবং আমার ড্রাইভিংয়ের সব কাগজপত্র আছে। কিন্তু মুভমেন্ট পাস নাই। আর কোথাও যাব না স্যার। আমাকে ছাইড়্যা দেন, বাসায় চলে যামু। আমারে জরিমানা করিয়েন না স্যার।

বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর গাবতলীতে চলা বিআরটিএ-এর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে এমনই আকুতি-মিনতি করছিলেন মাইক্রোবাসচালক দিলবার শেখ। পরে তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন বিআরটিএ আদালত-৮ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফকরুল ইসলাম।

দিলবার শেখের মত অনেকেই জানেন না মুভমেন্ট পাস সম্পর্কে। এই পাস কোথা থেকে নিতে হয়, কিভাবে নিতে হয়, কারা নিতে পারবেন এসব ব্যাপারেও কোনো ধারণা নেই অনেকের।

সিএনজিচালক আফজাল হোসেন বলেন, সকালে একজন ফোন করে সিএনজি নিয়ে তার বাসায় যেতে বলল। যাওয়ার পরে একজন রোগী সিএনজিতে উঠে বসলেন। সঙ্গে ছিলেন তার আরও দু’জন আত্মীয়। তারা বললেন- ঢাকা মেডিকেল কলেজে যেতে। রোগী রেখে মোড়ে মোড়ে ফেরার পথে চেকপোস্টে পুলিশ আটকে শুধু একটি কথায় জিজ্ঞেস করেছে- মুভমেন্টস পাস আছে কি-না।

তিনি বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। এই পাস কীভাবে নিতে হবে সেটাও জানি না। আমাদেরকেও কি মুভমেন্ট পাস দেবে? আর যদি দেয়ই তাহলে কিভাবে পাবো, তাও তো কেউ বলে দিচ্ছে না।’

নিয়মিত মিরপুর-১২ নম্বর ক্যান্টনমেন্টে দুধ সরবরাহ করেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার মো. শরিফুল ইসলাম। আজও ৩০০ কেজি দুধ দিয়ে ফেরার পথে গাবতলীতে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতে মুভমেন্ট পাস ও কাগজপত্র না দেখাতে পারায় দুই হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয় তাকে। তিনিও মুভমেন্ট পাস সম্পর্কে জানতেন না।

মো. শাওন আহমেদ একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। আসাদগেট সিগন্যাল মোড়ে পুলিশ তাকে আটকে দেয়। ওই বহুজাতিক কোম্পানির ডিলারদের চলাচলের পাস থাকলেও তার জন্য নেই। তাই তিনিও বিপদে পড়েছেন। আসাদগেট সিগন্যাল মোড়ে দায়িত্বরত সার্জেন্ট মো. আশিক বলেন, প্রত্যেককেই পাস দেখাতে হচ্ছে। প্রয়োজনের বাইরে কাউকে চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না।

এছাড়াও রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, সায়েন্সল্যাব, বাংলামোটর, পল্টন, গুলিস্তান, ফার্মগেট, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকার মোড়গুলোতে পুলিশের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। প্রিন্ট কপি বা মোবাইলে মুভেমন্ট পাস দেখিয়ে অনেকেই চলাচল করছেন। সড়কে কিছু ব্যক্তিগত যান, মোটরসাইকেল, রিকশা ও পণ্য পরিবহনের পিকআপ ও ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো বাহনের দেখা মেলেনি। পহেলা বৈশাখের ছুটির দিন হিসেবেও মানুষের চলাচল কম। তবে বেশির ভাগ মানুষই মুভমেন্ট পাস সম্পর্কে এখনও অবগত নয়।

সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারিসহ সবধরনের অফিস, গণপরিবহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ থাকবে। মাঠপর্যায়ে বিষয়টি নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ প্রশাসন। কেউ যেন অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাফেরা করতে না পারে সেজন্য রাজধানীজুড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের থানা ও ট্রাফিক বিভাগের সম্মিলিত টহলও জোরদার করা হয়েছে।

বিআরটিএ-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফকরুল ইসলাম বলেন, লকডাউনে সরকারি নিয়ম যারা মানছেন না, যারা বিনা কারণে বাইরে বের হয়েছেন এবং বাইরে বের হয়েও মুভমেন্ট পাস ও সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে। খুব অল্পসংখ্যক মানুষের কাছ থেকে মুভমেন্ট পাস পেয়েছি, যা তুলনায় অনেক কম। মূল উদ্দেশ্য জরিমানা নয়, আমাদের মূল উদ্দেশ্য সরকারের আদেশ মেনে সবাই যেন বাইরে বের হয়।

এদিকে পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২৬ ঘণ্টায় এ পর্যন্ত মোট দুই কোটি ৭৮ লাখ নাগরিক পুলিশের মুভমেন্ট পাস নেয়ার জন্য ওয়েবসাইটে ঢুকেছে। এতো সংখ্যক হিটের কারণে ওয়েবসাইটটিতে আবেদনের ধীরগতি দেখা দিয়েছে।

বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর ১টা পর্যন্ত ওয়েবসাইটে দুই কোটি ৭৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪৯৫টি হিট হয়েছে। সে হিসাবে- প্রতি মিনিটে হিট হয়েছে ১৪ হাজার ৫৫৭টি। তবে তাদের সবাই পাসের জন্য আবেদন করেননি।

গত ২৬ ঘণ্টায় দুই লাখ ২২ হাজার ২২৯ জন ব্যক্তি মুভমেন্ট পাসের জন্য আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৭৯ জনকে মুভমেন্ট পাস ইস্যু করা হয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ জাগো নিউজ/ শাদিআচৌ-১৯

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.