Sylhet View 24 PRINT

নিখোঁজ ইলিয়াস ইস্যু : ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে মির্জা আব্বাসের সুর বদল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৪-১৮ ১১:৩৬:০০

সিলেট ভিউ ডেস্ক : ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে নিজের বক্তব্য থেকে সরে এলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে ভার্চুয়াল এক সভায় বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার গুম করে নাই। এবং ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনও এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয় মারাত্মক রকমের।’ একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, এই ঘটনার  পেছনে দলেরই অভ্যন্তরীণ ‘লুটপাটকারী, বদমাইশগুলো আছে’।

এসময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে তাদের ‘আইডেন্টিফাই’ করার প্রস্তাব করেন মির্জা আব্বাস।  তার এই বক্তব্যের পরই বিএনপিতে সাড়া পড়ে যায়। আলোচনা উঠে, হঠাৎ করে মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের নেপথ্যে কী? বক্তব্য কি তার পরিকল্পিত?

এ বিষয়ে জানতে শনিবার (১৭ এপ্রিল) মির্জা আব্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি দাবি করেন, ‘গণমাধ্যমে তার বক্তব্য উল্টো করে প্রকাশ করা হয়েছে।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের নবম বছর উপলক্ষে শনিবার অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন মির্জা আব্বাস। ১১ মিনিটের বক্তব্যের একেবারে শেষ দিকে এসে মির্জা আব্বাস দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তবে আমি আজকে বলতে চাই, এখানে সেক্রেটারি জেনারেল আছেন, কথাটা আমি বলতে বলতে ভুলে গেছিলাম। ইলিয়াস গুমের পেছনে, আমি রিপিট করছি, ইলিয়াস গুমের পেছনে আমার দলের লুটপাটকারী, বদমাইশগুলো আছে, তাদের দয়া করে আইডেন্টিফাইড করার ব্যবস্থা করেন, প্লিজ। এদেরকে অনেকেই চেনেন।’

ভার্চুয়াল সভাভার্চুয়াল সভারবক্তব্যে যা বলেছেন মির্জা আব্বাস

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘নব্বই দশকের ছাত্রনেতাদের মধ্যে যাদের আমি খুব বেশি ভালোবাসতাম, ইলিয়াস আলী তাদের একজন। তার গুমের খবরটি আমি সেদিন দেড়টা-পৌনে দুইটায় পাই।  গুমের এ খবর শুনতে পেয়ে যাদের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত, পরিচিত যারা ছিল কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা জানায়, তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে- যে পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো, সেই পুলিশ কর্মকর্তাদেরও আজও পাওয়া যায়নি। যেভাবে ইলিয়াসের ড্রাইভারকে পাওয়া যায়নি। তাহলে এ কাজটা করলো কে?’

বিএনপি নেতা আব্বাস বলেন, ‘যারা আজকে ইলিয়াসকে গুম করেছে, আমি জানি, আওয়ামী লীগ সরকার গুম করে নাই। কিন্তু গুমটা করলো কে? এই সরকারের কাছে আমি জানতে চাই। এই সরকারের কাছে আমি এটা জানতে চাই।’

স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, ‘একজন জলজ্যান্ত রাজনৈতিক নেতা গুম হয়ে গেলো, দেশের ভেতর থেকে। আমাদের একজন নেতা দেশ থেকে পাচার করে নিয়ে গেল, সালাহউদ্দিনকে। আমাদের চৌধুরী আলমকে গুম করে দেওয়া হলো। আমাদের কত ছেলেদের গুম করে দেওয়া হলো। আমি বুঝলাম এই সরকার করে নাই। কিন্তু করলো কারা? যারা করলো তাদের কী বিচার হতে পারে না। আমি বলতে চাই, যারা করেছে, তারা এদেশের স্বাধীনতা চায় নাই। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকতে দেবে না এ দেশটাকে।’

প্রত্যেক থানার সামনে মেশিনগান স্থাপনের প্রসঙ্গে আব্বাস বলেন, ‘এলএমজি লাগানো হবে, বালুর বস্তা দিয়ে ব্যাংকার করা হবে, এটা কীসের আলামত? কাকে মারার জন্য এলএমজি লাগবে? বলে প্রশ্ন করেন আব্বাস।

মির্জা আব্বাসের মন্তব্য, ‘এখন যে অত্যাচার হচ্ছে, সেই ইলিয়াসের ঘটনার সূত্র ধরেই। আজকে ইলিয়াস, আমি জানি না-- আল্লাহ তাকে কোথায়-কীভাবে রেখেছেন। ইলিয়াসের পরিবারের মতোই আমিও খুব খুশি হবো,সহি-সালামতে তাকে দেখে যেতে পারতাম। ইলিয়াস আমার অত্যন্ত প্রিয় ছাত্রনেতাদের একজন। দেশপ্রেমিক, স্বাধীনচেতা এবং অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ। সত্য প্রকাশে ছেলেটা অনড় ছিল।’

বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘তবে আমি আজকে বলতে চাই,এখানে সেক্রেটারি জেনারেল আছেন, কথাটা আমি বলতে বলতে ভুলে গেছিলাম। ইলিয়াস গুমের পেছনে,  আমি রিপিট করছি, ইলিয়াস গুমের পেছনে আমার দলের লুটপাটকারী, বদমাইশগুলো আছে, তাদের দয়া করে আইডেন্টিফাইড করার ব্যবস্থা করেন, প্লিজ। এদেরকে অনেকেই চেনেন।’

আব্বাস আরও বলেন, ‘ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনও এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয় মারাত্মক রকমের। ইলিয়াস খুব গালিগালাজ করেছিল তাকে। সেই যে পেছন থেকে দংশন করা যে সাপগুলো, আমার দলে এখনো রয়ে গেছে। যদি এদের দল থেকে বিতাড়িত না করেন, তাহলে কোনও পরিস্থিতিতেই দল সামনে আগাতে পারবেন না।’ পরে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে মির্জা আব্বাস বক্তব্য শেষ করেন।

আব্বাসের বক্তব্য কী পরিকল্পিত, বিএনপিতে যা ভাবনা

ইলিয়াস আলীকে গুমের পেছনে দলের লুটপাটকারীদের যুক্ত থাকার বিষয়ে মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের পর বিএনপিতে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ভার্চুয়াল সভায় মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের পর সিনিয়র থেকে মধ্যমসারির নেতারাও ফোন করে বক্তব্যের কারণ জানতে চেয়েছেন।

দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মির্জা আব্বাসের বক্তব্য পুরোপুরি পরিকল্পিত। কার ইঙ্গিতে, কী ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন বক্তব্যে তার পরিষ্কার নয়।

বিএনপির দায়িত্বশীল একজন বলেন, ‘যে মুহূর্তে দলের নেতৃত্ব সংগঠনকে গুছিয়ে আনছেন, সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, সেই মুহূর্তে মির্জা আব্বাসের বক্তব্য নিঃসন্দেহে নতুন উদ্বেগ তৈরি করবে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি কাকে ফাঁসিয়েছেন, কাকে চিহ্নিত করার বা সেভ করার চিন্তা করেছেন, সেটা তিনি নিজেই বলতে পারবেন।’ 

মির্জা আব্বাসের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিএনপি নতুন করে সমস্যার মধ্যে উপনীত হয়েছে, এমন আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন একজন দায়িত্বশীল।

শনিবার ওই ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য রেখেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন,‘মির্জা আব্বাস যা বলেছেন স্পষ্ট করেই বলেছেন। এর বাইরে কিছু জিজ্ঞাসার থাকলে তার সঙ্গে কথা বলাটাই শ্রেয়। সভার এক পর্যায়ে আমি ছিলাম না। ফলে সেখানে তিনি কী বলেছেন, জানি না। তবে আমি সংবাদপত্রে খবর পড়ে দেখেছি, তার বক্তব্য আক্রমণাত্মক মনে হয়েছে। যেহেতু উনি পরিষ্কার করেননি, সে বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেই পরিষ্কার হওয়া উচিৎ। আমি ক্লিয়ার না। কার উপর উনি বলেছেন। নামও বলেননি’।

মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ভার্চুয়াল সভার প্রধান অতিথি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘উনি বলেছেন, ‘তার বক্তব্য খণ্ডিতভাবে প্রকাশ হয়েছে। আর আমি বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে আগ্রহী না’

বক্তব্য থেকে সরে এসে যা বললেন মির্জা আব্বাস

দুপুরে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় মির্জা আব্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘না না, কথাটাকে ইয়ে করো না, উল্টাপাল্টা করে দিও না। আমি কথাটা বলছি,যে যদি আওয়ামী লীগ গুম করে নাই বলে, তাহলে আওয়ামী লীগকে বের করতে হবে, কে গুম করছে। এটা আওয়ামী লীগকে বের করতে হবে--কে গুম করছে। ঠিকাছে, আমি বলছি দলের মধ্যে শত্রু রেখে সামনে যুদ্ধ করা যাবে না। দলের পেছনে শত্রু রেখে সামনে যুদ্ধ করা যাবে না। দলে যারা আছে, তাদেরকে বেছে বেছে বের করতে হবে।’

‘দলীয় অফিসে ইলিয়াস আলীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়েছে’ এমন বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করলে  মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এটা শুনছি আমি, দলের অফিসে ইলিয়াস আলীর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল। কিন্তু কার সঙ্গে হয়েছিল আমি জানি না। ওইটা আমি শুনেছিলাম- উনি বলেছেন, যে কার সঙ্গে যেন ঝগড়াঝাঁটি হয়েছিল’।

এদিকে মির্জা আব্বাস আগামীকাল রবিবার (১৮ এপ্রিল) বেলা ৩টায় তার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানান।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন এম ইলিয়াস আলী। বিএনপির অভিযোগ, সরকারই ‘গুম’ করেছে ইলিয়াস আলীকে।

সিলেট ভিউ ২৪ ডটকম/পিটি-১

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.