Sylhet View 24 PRINT

খালেদা জিয়ার কারামুক্তি নিয়ে সংশয়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৩-১৩ ১০:৫৯:৫০

সিলেটভিউ ডেস্ক :: জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাই কোর্ট থেকে চার মাসের জামিন পেয়েছেন।

কিন্তু নাশকতার আরেক মামলায় কুমিল্লার একটি আদালত তাকে গ্রেপ্তারের আবেদন গ্রহণ করায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তি নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায়ের পর থেকে গত ৩২ দিন ধরে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

নিম্ন আদালত থেকে ওই মামলার নথি হাই কোর্টে আসার পর তা দেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার দুপুরে তার জামিন মঞ্জুর করে।

সেই সঙ্গে তার আপিল শুনানির জন্য ওই সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপারবুক তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে কুমিল্লার ৫ নম্বর আমলী আদালতের দায়িতপ্রাপ্ত বিচারক মো. মুস্তাইন বিল্লাহ এদিন চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোল বোমায় যাত্রী পুড়িয়ে মারার মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন গ্রহণ করে ২৮ মার্চ তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়।

ওই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে এর আগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, তাদের নেত্রীকে ‘সাজানো মামলায়’ সাজা দেওয়ার পর ক্ষমতাসীনরা এখন নানা কৌশলে কারাগারে আটকে রাখার চেষ্টা করছে।

ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিচার বিভাগ যে স্বাধীনভাবে কাজ করছে, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়ার বিষয়টিই তার প্রমাণ।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, হাই কোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধ তারা মঙ্গলবারই আপিলে যাবেন। সেক্ষেত্রে আপিল বিভাগের সবুজ সংকেত পাওয়ার আগে খালেদা জিয়ার জামিন কার্যকর হবে না।

আর এতিমখানা মামলায় জামিনের পাশাপাশি মুক্তির জন্য তাকে কুমিল্লার মামলাতেও জামিন পেতে হবে। সেজন্য ২৮ মার্চ তাকে কুমিল্লার আদালতে হাজির করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তার আইনজীবীদের।

রাষ্ট্রপক্ষ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল শুনানি শুরুর আদেশ চাইলেও হাই কোর্ট জামিন মঞ্জুর করেছে চারটি যুক্তিতে।  

১. নিম্ন আদালত পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছে, এই সাজায় হাই কোর্টে জামিনের রেওয়াজ আছে। সে বিবেচনায় তিনি জামিন পেতে পারেন।

২. বিচারিক আদালতের নথি এসেছে, কিন্তু আপিল শুনানির জন্য এখনও প্রস্তুত হয়নি। ফলে আসামি জামিনের সুবিধা পেতে পারেন।

৩. বিচারিক আদালতে মামলা চলাকালে খালেদা জিয়া জামিনে ছিলেন এবং এর অপব্যবহার করেননি। আদালতে নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন।

৪. বয়স এবং বয়সজনিত শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় নিয়ে তাকে জামিন দেওয়া যায়।

এসব যুক্তিকে খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়ে হাই কোর্ট বলেছে, এই সময়ের মধ্যে আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরি করতে হবে। পেপর বুক প্রস্তুত হয়ে গেলে যে কোনো পক্ষ শুনানির জন্য আপিল উপস্থাপন করতে পারবে।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জামিন লাভে সোমবার হাই কোর্ট এলাকায় মিছিল করে বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জামিন লাভে সোমবার হাই কোর্ট এলাকায় মিছিল করে বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠান।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট নিম্ন আদালত থেকে মামলার নথি তলব করে।

আর ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট জানায়, নিম্ন আদালত থেকে নথি পাওয়ার পর জামিন বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।

সে অনুযায়ী খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনে বিষয়টি রোববার আদেশের জন্য কার্যতালিকায় রাখা হয়। কিন্তু তখন পর্যন্ত নথি না পৌঁছানোয় আদেশ সোমবার পর্যন্ত পিছিয়ে যায়।

সোমবার মধ্যাহ্ন বিরতির পর আদালত বসার আগেই বেঞ্চ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সতর্ক করে দেন, যাতে কোনো হট্টগোল না হয়। 

বেলা আড়াইটায় আদালত বসার পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আসামিপক্ষের আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের কাছে জানতে চান, তার কিছু বলার আছে কিনা।

তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, “জামিন আবেদনের শুনানি তো আগেই শেষ হয়েছে। আমরা আদেশের জন্য অপেক্ষা করছি। যদি রাষ্ট্রপক্ষ কিছু বলে তাহলে আমরা জবাব দেব।”

বিচারক এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চান, তাদের পক্ষ থেকে কিছু বলার আছে কিনা।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “এ মামলাটি স্পর্শকাতর। বিচারিক আদালত খালেদা জিয়ার বয়স ও সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করে তাকে ৫ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে। যেহেতু নিম্ন আদালতের নথি এসেছে, সেহেতু আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেওয়া হোক।”

সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের মামলার নজির তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “তিনি সাড়ে তিন বছর কারাগারে ছিলেন। আর উনি (খালেদা জিয়া) মাত্র দুই মাস হয় কারাগারে আছেন। অতএব জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।”

এ সময় জ্যেষ্ঠ বিচারক জানতে চান, তখন এরশাদের বয়স কত ছিল। মাহবুবে আলম বলেন, তখন এরশাদের বয়স ছিল ৬০ কিংবা ৬৫ বছর।

বিচারক এ সময় বলেন, “তিনি (এরশাদ) তো সে সময় শারীরিকভাবে ফিট ছিলেন। জেল থেকে এসে বিয়েও করেছেন। পরে আল্লাহর রহমতে পুত্র সন্তানের জনক হয়েছেন।”

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এ সময় বলেন, “সাজার মেয়াদ কম এ বিবেচনায় জামিন দেওয়া উচিত হবে না। এটা জামিনের গ্রাউন্ড হতে পারে না। তার শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেটও তারা দেয়নি।”

এ সময় বিচারক বলেন, “এ শুনানিতো আপনি আগেও করছেন। নতুন কী আছে সেটা বলুন।”

খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। এই অসুস্থার কারণে তিনি হাঁটাচলাও করতে পারেন না।

বিচারক তখন বলেন, “মিস্টার মো. আলী, আপনারা উনার যে অসুস্থতার কথা বলেছেন, এগুলোর সবকটিই দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা। অর্থাৎ তিনি দীর্ঘদিন ধরেই এসব রোগে ভুগছেন। তিনি তো অভ্যস্ত।”

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী দুর্নীতির মামলায় সাত বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত এক ব্যাক্তিকে হাই কোর্টের একক বেঞ্চে জামিন মঞ্জুরের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন।পরে আদালত চারটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেয়।

এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন ছাড়াও খালেদায় আইনজীবীদের মধ্যে খন্দকার মাহবুব হোসেন, রফিকুল ইসলাম মিঞা, মওদুদ আহমদ, মাহবুব উদ্দীন খোকন, কায়সার কামাল, রাগিব রউফ চৌধুরী, সগীর হোসেন লিয়ন, এ কে এম এহসানুর রহমান এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ছাড়াও সরকারি আইন কর্মকর্তাদের মধ্যে মোতাহার হোসেন সাজু, বিশ্বজিৎ দেবনাথ, এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক উপস্থিত ছিলেন। 
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জামিন লাভে সোমবার হাই কোর্ট এলাকায় বিজয় চিহ্ণ প্রদর্শন করে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জামিন লাভে সোমবার হাই কোর্ট এলাকায় বিজয় চিহ্ণ প্রদর্শন করে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।

চার মাসের জামিন আদেশের পরপরই আদালত কক্ষের সামনে করতালি আর স্লোগানে উদযাপন শুরু করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল আওয়াল মিন্টুওসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও সেই উচ্ছ্বাসে দেখা যায়।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “ষোলো কোটি মানুষের প্রত্যাশা ছিল খালেদা জিয়া আজ মুক্তি পাবেন। সে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। হাই কোর্ট উনাকে জামিন দিয়েছেন। আমরা সবাই আনন্দিত! তিনি এক মাস কষ্ট করেছেন। এখন আর তার মুক্তি পেতে আইনি কোনো বাধা নেই।”

এই বিএনপি নেতা বলেন, “বিচারিক আদালতের নথি এসেছে। হাজার হাজার পাতার নথি। ফলে সহজে পেপার বুক তৈরি করা যাবে না। সময়ের ব্যপার। যখন প্রস্তুত হবে তখন যে কোনো পক্ষ তা শুনানির জন্য আদালতে উপস্থাপন করতে পারবে।”

জামিনে মুক্তির প্রক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে খালেদার অন্যতম আইনজীবী মওদুদ বলেন, জামিন আদেশে সই হওয়ার পর তা হাই কোর্টের আদান-প্রদান শাখা হয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে যাবে। সেখানে জামিননামা দাখিল করতে হবে। মুখ্য বিচারকি হাকিম জামিননামা গ্রহণ করে একটি মুক্তিনামা কারাগারে পাঠাবে। ওই মুক্তিনামা পাওয়ার পরই কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে।

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদনের জন্য আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকালে আমরা চেম্বার আদালতে আবেদন করব।”

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদনের আগে ও পরে তারা কারা কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি অবহিত করবেন।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, “যেসব গ্রাউণ্ডে জামিন দেওয়া হয়েছে তা উপযুক্ত না বলেই আমরা জামিন স্থগিতের আবেদন করব। এ জামিন আদেশে আমরা সংক্ষুব্ধ।”

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩মার্চ২০১৮/ডেস্ক/আআ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.