Sylhet View 24 PRINT

শেখ হাসিনা কি মনের মতো ছাত্রলীগ পাবেন?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-২৫ ০০:৫৬:৫৭

শেখ আদনান ফাহাদ ::  কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফেসবুকে হুমকি দিলেন, যারা জীবনে কোনোদিন ছাত্রলীগের পদে ছিলেন না, তারা ছাত্রলীগ নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না!

সেই ছাত্রলীগ নেতার হুমকিতে কি মানুষের ছাত্রলীগ-ভাবনা থেমে যাবে? মনে হয় না। কারণ ছাত্রলীগ শুধু এর নেতা-কর্মীদের বিষয় নয়। ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে সৃষ্ট একটি ছাত্র সংগঠন যেটি পরে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে অন্যতম শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

বঙ্গবন্ধু যেমন শুধু আওয়ামী লীগের কমিটির লোকজনের নয়, ছাত্রলীগও শুধু কোনো সিন্ডিকেটের পকেটে থাকা ডলারের নোট নয়। ছাত্রলীগ নিয়ে যে কেউ কথা বলতে পারে, পরামর্শও দিতে পারে। 

বহুদিন পর ছাত্রলীগের কমিটি করার বিষয়টি সরাসরি দেখছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বহুদিন পর সবখানে একটা স্বস্তির আলোচনা। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের জন্য নতুন যে নেতৃত্ব দিবেন সেটা সবাই মেনে নেবেন, এটা স্বাভাবিক।

কিন্তু এতে সকলের জল্পনা, কল্পনার অবসান হয়ে যাচ্ছে না। বিশেষ করে যারা এতদিন ছাত্রলীগ করে এসেছেন, এখনো বয়স আছে, তারা চাইবেন ছাত্রলীগের বড় নেতা হওয়ার।

কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী শিবির নাকি ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেছে। শিবির ইস্যু আসলে আমার সেই ছাত্রলীগ নেতার কথা মনে পড়ে যিনি ফেসবুকে হুমকি দিয়ে ছাত্রলীগ নিয়ে মাথা না ঘামানোর জন্য বলেছিলেন।

শিবির ছাত্রলীগে প্রবেশ করেছে কীভাবে? সেখানে নিশ্চয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের দায় শতভাগ। আমাদের কোনো দায় নেই। তবে আফসোস আছে। আবার আশাও আছে। সে আশা জাগিয়ে রেখেছেন স্বয়ং শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা কি অবশেষে তাঁর মনের মত ছাত্রলীগ নেতৃত্ব পাবেন? আশা ও দোয়া করি তিনি যেন পান। বহুদিন ধরে যারা ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য চর্চা করছিলেন, তারা কি খানিকটা দমে গেছেন?

আমরা যারা বাইরের তাদের কাছে তো তাই মনে হচ্ছে। শেখ হাসিনা মনে হয় তাদেরকে আর বিশ্বাস করতে পারছেন না। রাজনীতি বলুন আর সংসার বলুন, বিশ্বাস সবচেয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এই যেমন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে মানুষ সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে শেখ হাসিনাকে। ভালোওবাসে তাঁকে। এ আমার অন্ধ বিশ্বাস নয়, বিভিন্ন জরিপেও সেটা প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি দল এবং সরকার থেকেও বেশি জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত রাজনীতিবিদের নাম শেখ হাসিনা।

অনেকে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মধ্যে পার্থক্য হলেন শেখ হাসিনা। অর্থাৎ শেখ হাসিনার জন্যই আওয়ামী লীগ অন্য দলগুলো থেকে আলাদা, বিশেষ এবং অধিক জনপ্রিয়।

আরেকটু পরিষ্কার করি। বঙ্গবন্ধুর সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধ-সম্পন্ন ভোগ-বিলাসহীন কর্ম ও উৎপাদনমুখী জীবন-যাপনের আদর্শ দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে আছে কি না, সেটি নিয়ে যথেষ্ট তর্ক আছে। কিন্তু শেখ হাসিনা নির্লোভ ও সংকীর্ণ-স্বার্থহীন রাজনীতি করে প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি।

অথচ শেখ হাসিনা সারাজীবন থাকবেন না। এখানেই নিহিত আছে আদর্শবান নেতৃত্ব খুঁজে নেয়ার তাৎপর্য। আজকের ছাত্রলীগ, আগামী দিনের আওয়ামী লীগ নেতা। এমন নেতৃত্বই খুঁজছেন শেখ হাসিনা যারা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়,  দল এবং রাষ্ট্রের স্বার্থ আগে দেখবে। 

গত ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা হয়নি। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া শেষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্ভাব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যাপারে অনুসন্ধান করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।

ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক চূড়ান্ত করার পরও প্রধানমন্ত্রী অপেক্ষা করছেন। মূলত: তিনি দুটি বিষয় দেখতে চেয়েছেন। প্রথমত: সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না, অভিযোগগুলো অদৌ সত্য কি না। দ্বিতীয়ত: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা কার ব্যাপারে কত উৎসাহী?

খুবই ভালো সব উদ্যোগ। আমরাও চাই ছাত্রলীগের নেতৃত্বে যারা আসবে তারা শুধু মুখের স্লোগানে নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তব জীবনে মেনে চলবে।

কিন্তু বিষয়টা কি এত সহজ? বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে পড়াশুনা করা যায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মত হওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে কি সম্ভব? তাঁর মত জনদরদী, স্বাপ্নিক, নির্লোভ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং মানবতাবাদী রাজনীতিবিদ পুরো বিশ্বেই খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই বলি, অধুনা ছাত্রলীগের নেতা হওয়া হয়ত খুব বেশি কঠিন নয়, কিন্তু সত্যিকারের বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হওয়া আসলেই কঠিন। সেই কঠিন নেতৃত্বই খুঁজতে নেমেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।  

কেমন ছাত্রলীগ নেতা চাই আমরা? শুধু পড়াশুনায় ভালো হলেও হবে না, রাজপথের লড়াই-সংগ্রামের অভিজ্ঞতা ও শারীরিক, মানসিক সামর্থ্য থাকতে হবে। রাজনীতি করলে আত্মত্যাগের স্বভাব থাকতে হবে। নিজে ভালো না খেয়ে, ভালো না পরে, কর্মীদের, দেশের মানুষকে ভালো খাওয়ানো-পরানোর অভ্যাস থাকতে হবে। বড় পদ পেয়ে শুধু নিজের, নিজের পরিবারের সদস্যদের ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা যারা করে তাদেরকেও ছাত্রলীগে মানায় না।

তাহলে ছাত্রলীগের নেতারা কি না খেয়ে থাকবেন? এমন প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া স্বাভাবিক। ছাত্রলীগের একটি ছেলে সাংগঠনিক কাজ থেকে বিদায় নেয়ার পরে যদি চাকরি করতে চায়, করবে। ব্যবসা করতে চায় করবে। কিন্তু সেগুলো অবশ্যই নিজের যোগ্যতায় হওয়া লাগবে।

তবে ছাত্রলীগ করে বলে বিসিএসের ভাইভা থেকে একাধিকবার বাদ পড়ার অনেক ঘটনাও আমরা জানি। এক্ষেত্রে কর্মসংস্থান প্রক্রিয়া স্বচ্ছ আর বৈচিত্র্যপূর্ণ হতে হবে। মজার বিষয় হল, আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্রলীগের অনেকে ছেলে-মেয়ে সমস্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকরি পায়নি।

অথচ বিএনপি-জামায়াতের পরিবারের অনেক ছেলে-মেয়ে গত ১০ বছরে চাকরি পেয়ে ভালো অবস্থানে চলে গেছে। এই বাস্তবতা অবশ্য শিক্ষিত ও সুশীল নিন্দুকরা স্বীকার করতে চায় না। তবে সাধারণ মানুষের মাঝে এর জন্য শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে, এটা বলা যায় নির্দ্বিধায়।  

ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ যারা হবেন তারা শুধু আর্থিকভাবে সৎ থাকলেই হবে না, এদেরকে সাংস্কৃতিকভাবেও সৎ থাকতে হবে। সবধর্মের মানুষকে সমান ভালোবাসতে হবে, সাম্প্রদায়িকতার লেশমাত্র থাকা চলবে না। আবার প্রগতিশীল হওয়ার নামে নিজের সম্প্রদায়কে, নিজের ধর্মকে অবমাননা করাও চলবে না। এখানেই অতি প্রগতিশীল আর ছাত্রলীগের মধ্যে পার্থক্য।

বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনে এমন বহু নজির সৃষ্টি করেছেন। নিজের ধর্মকে তিনি ভালোবাসতেন, বিশ্বাস করতেন আবার অন্য ধর্মের মানুষের শান্তি ও কল্যাণের জন্য নিজের শরীরের রক্ত ঝরিয়েছেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ইস্যুতে বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি কথা এক্ষেত্রে সকলের জন্য অবশ্য পালনীয় হতে পারে।

তিনি নিজের জীবনীগ্রন্থে লিখেছেন, “আওয়ামী লীগ ও  তার কর্মীরা যে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতাকে ঘৃণা করে। আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক নেতা ও কর্মী আছে যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে; এবং তারা জানে সমাজতন্ত্রের পথেই একমাত্র জনগণের মুক্তির পথ। ধনতন্ত্রবাদের মাধ্যমে জনগণকে শোষণ করা চলে। যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা কোনোদিন কোনো রকমের সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না। তাদের কাছে মুসলমান, হিন্দু, বাঙালি, অবাঙালি সকলেই সমান। শোষক শ্রেণীকে তারা পছন্দ করে না” (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ২০১৬, পৃষ্ঠা-২৫৯)।

১৯৭৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাকে ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী উৎসবের উপর একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। ‘তোমরা আমরা চরম ডাকের জন্য প্রস্তুত থাক’ শীর্ষক সে প্রতিবেদন থেকে আমরা ছাত্রলীগের প্রতি বঙ্গবন্ধুর শেষ দিকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে পারি। তাঁর বক্তব্যটি ইত্তেফাক পত্রিকার আলোকে নিচে তুলে দেয়া হল। উল্লেখ্য প্রতিবেদনটি সাধু ভাষায় লিখিত হলেও আমি এখানে চলিত ভাষায় লিখে দিলাম। ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “তোমরা আমার একটা কথা সব সময় মনে রেখ। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির সঙ্গে আপোষ হয় না। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের মাধ্যমেই দেশকে গড়ে তুলতে হবে। গড়ে তুলতে হবে শোষণহীন সমাজ আর বণ্টন করতে হবে এদেশের সম্পদ যাতে দুঃখী মানুষ সুখে থাকতে পারে। যদি স্বাধীনতা না থাকে, তবে তোমরা কিছুই করতে পারবে না। বিদেশী চক্র তৎপর হয়ে আছে, চরম আঘাত করতে পারে তোমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত থেক।’

দেশের সম্পদ নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, জাতীয়করণের পর সব সম্পদের মালিক সাড়ে সাত কোটি জনগণ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সেদিন ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,  দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। সরকার দুর্নীতি একা বন্ধ করতে পারবে না।

ছাত্রলীগ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে চায় শুনে খুব খুশি হয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘যারা সংগ্রাম করতে চাও তাদের উচিত হবে আয়নায় চেহারাটি দেখে নেয়া। তা না হলে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। দেশকে গড়ে তুলতে হলে নুতন প্রতিজ্ঞায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজে লাগতে হবে।’

১৯৭৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ইত্তেফাক পত্রিকার ‘ছাত্রদের প্রতি বঙ্গবন্ধু-চরিত্রবান হও’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘জ্ঞানার্জন ও শিক্ষাঙ্গনে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রেখে চরিত্রবান নাগরিক হওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রসমাজের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্পর্কে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে বঙ্গবন্ধু ছাত্রসমাজকে বলেন যে, এই গুণ ছাড়া জাতি বড় হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু বলেন, সমাজ হইতে দুর্নীতি উচ্ছেদের কাজে ছাত্র-সমাজকে অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হইবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ছাত্র সমাজ নিজেদের দুর্নীতির ঊর্ধ্বে রেখে এই মহান দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবে’।

স্বাধীন বাংলাদেশ জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের কাজকে বঙ্গবন্ধু ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা,  গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র এই চার মূলনীতির আলোকে সংবিধান প্রণয়ন করে বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

অন্যদেরকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ হিসেবে বাকশাল কায়েমের চেষ্টা করেছিলেন। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজনীতিবিদ, সামরিক, বেসামরিক আমলাদের যোগসাজশে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের অন্যতম সুবিধাভোগী। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর সব চেষ্টা করেছিলেন। জাতীয় চার নেতা হত্যা, খালেদ মোশাররফ হত্যা, কর্নেল তাহের হত্যাসহ সেনাবাহিনীর শত শত মুক্তিযুদ্ধ-পন্থী অফিসার ও সদস্যকে হত্যা করেন জিয়াউর রহমান।

পরের ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল আদর্শিকভাবে গণস্বার্থবিরোধী শক্তি। দীর্ঘ অমানিশার পরে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। কিন্তু দেশ পুনর্গঠনের আগেই ২০০১ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের শিকার হয় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামাত জোট। এর পরের ইতিহাস সবার জানা।

গত ৯ বছরে বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে গেছে। এই অগ্রযাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তাঁকে যোগ্য সাহচর্য দিয়েছেন এদেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ। কিন্তু শেখ হাসিনার মত করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ বা ছাত্রলীগের সবাই কি দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারছেন?  

বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেবে, এটাই তো রাজনীতির বিবেচনায় স্বাভাবিক। কিন্তু সমাজে যখন দেখা যায়, কোনো আওয়ামী লীগ নেতা, যুবলীগ নেতা এবং এমনকি ছাত্রলীগ নেতা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছে, তখন কি আপনাদের মনে একটু বিস্ময় ও দুঃখ জন্ম নেয় না?

আজ যখন দেখা যায়, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং এমনকি ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকের, ব্যবসায়ী এবং আমলাদের একাংশের দেশে-বিদেশে বৈধ-অবৈধ বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি তখন মনে প্রশ্ন জাগে, এমন ভোগবাদী সমাজ কি বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন? কিছু মানুষ খুব ভালো থাকবে, কিছু মানুষ মোটামুটি থাকবে আর বেশিরভাগ মানুষ অরাজকতার মধ্যে বসবাস করবে, এমন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু দেখলে কষ্ট পেতেন খুব। 

সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধার বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার কন্যা শেখ হাসিনাও বাবার মতো মানবতাবাদী রাজনীতি করে বাংলাদেশকে ধরে রেখেছেন। কিন্তু একা শেখ হাসিনা আর কত পারবেন?

শুধু শেখ হাসিনাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চর্চা করে যাবেন আর বাকিদের অনেকে সম্পদের পর্বত রচনা করবেন সেটি হতে পারে না। এদেশের কৃষক, শ্রমিক, কর্মজীবী মানুষেরা শেখ হাসিনাকে যোগ্য সাহচর্য দিয়ে যাচ্ছেন। আমলা ও রাজনীতিবিদদেরও কৃষক, শ্রমিকের মত সাচ্ছা হৃদয় নিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে।

শুধু ব্যানার পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে আর নিজেদের নাম প্রচার করে মানুষকে বোকা বানানো যাবে না। কর্ম দিয়েই সবাইকে প্রমাণ করতে হবে, জয় বাংলার স্লোগানধারী সবাই বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সৈনিক।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
-ঢাকাটাইমসের সৌজন্যে

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.