Sylhet View 24 PRINT

জাতীয় ঐক্যে ছাড় দিতে বিএনপির সিদ্ধান্তে শরিকদের সায়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-১০ ১১:২৩:১২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: আগের দিন বিএনপির একটি শরিক দল প্রবল আপত্তি জানালেও ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে ছাড় দেয়ার বিষয়ে বিএনপির পরিকল্পনায় সায় দিয়েছে শরিকরা।

‘দেশ, গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে’ ২০ দল এই ছাড় দিতে রাজি হয়েছে বলে বৈঠক শেষে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

রবিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে জোটের বৈঠকে জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

আগের দিন রাজধানীতে এক আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে ছাড় দেয়ার বিষয়ে তার দলের সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে একই দিন বিএনপির শরিক দল এলডিপি এই উদ্যোগে আপত্তি জানায়। বিএনপি যাদের সঙ্গে ঐক্য গড়তে চায় তাদেরকে জনবিচ্ছিন্ন উল্লেখ করে এই চেষ্টা বাদ দিয়ে নিজেদের শক্তিশালী করতে বিএনপিকে পরামর্শ দেন এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমেদ।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টায় বিএনপি। ২০টি দল নিয়ে গড়া মোর্চার পাশাপাশি তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণা দিয়ে কাজ করা যুক্তফ্রন্ট আর গণফোরাম নেতা কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্যের চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি যাকে দলটি ‘জাতীয় ঐক্য’বলছে।

যুক্তফ্রন্টের তিন শরিকের মধ্যে বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এক সময় বিএনপির ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জিতে তাকে রাষ্ট্রপতিও করে বিএনপি। তবে অসম্মানজনকভাবে তার বিদায় হয়। আর ওই সরকারের আমলেই বিএনপি ভেঙে তিনি গঠন করেন বিকল্প ধারা।

আরেক শরিক জেএসডির আ স ম আবদুর রব ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের আলোচিত নেতা ছিলেন। পরে ছাত্রলীগ ভেঙে গঠন করা জাসদে যোগ দেন তিনি। পাকিস্তান আমলে আন্দোলনে ভূমিকা থাকলেও ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের আমলে ‘গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা’হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলেও পরে আর জিততে পারেননি।

আরেক শরিক নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ‘বহু ঘাটের জল খেয়ে’ শেষে আওয়ামী লীগে যোগ দেন ৯০ এর দশকে। দুইবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন বগুড়া-২ আসনে। কিন্তু বিএনপির প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো ভোট পাননি। এর আগে অন্য একটি দলের হয়ে ভোট করে জামানত হারান।

যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেয়া কামাল হোসেনও ভোটের ময়দানে বরাবর পরাজিত একজন নেতা। ৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও ৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আর ৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে হেরেছেন বড় ব্যবধানে। আর এরপর আওয়ামী লীগ ছেড়ে গঠন করেন গণফোরাম। আর এই দলের হয়ে ৯৬ সালের নির্বাচনে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর আসন থেকে নগণ্য সংখ্যক ভোট পেয়ে জামানত হারান।

বিএনপি কী ছাড় দেয় সেটা ভবিষ্যতের বিষয়। তবে যুক্তফ্রন্ট তাদের কাছে তিনশ আসনের মধ্যে ১৫০টি চেয়ে বসে আছে। আবার ক্ষমতায় যেতে পারলে দুই বছর দেশ তারা চালাবেন, এমন শর্ত দেয়ার অপেক্ষায় তারা।

আর কামাল হোসেন বিএনপিকে দেড় যুগের মিত্র জামায়াতকে পরিত্যাগের শর্ত দিয়েছেন।

যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরামের সঙ্গে ‘জাতীয় ঐক্যের’ চেষ্টা নিয়ে বৈঠক শেষে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘২০ দল সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে জাতীয় ঐক্যের যে কথা বলেছেন তাতেও সমর্থন জানিয়েছে ২০ দল।’

বৈঠকে খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা এবং তার মুক্তি দাবি করা হয়। তাছাড়া খালেদা পুত্র তারেক রহমানসহ সব রাজনৈতিক কর্মীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ বাতিলের দাবি জানানো হয়।

বৈঠকে যেসব আলোচনা

বৈঠক শেষে বিএনপির একটি শরিক দলের মহাসচিব বলেন, জাতীয় ঐক্যের আলোচনায় যুক্তফ্রন্টের পক্ষ দেড়শ আসন দাবি করার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে বিএনপি কী ভাবছে, সেটাও জানতে চান একজন নেতা।

জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দাবি করার সময় অনেকে অনেক কিছু চাইতে পারে। কিন্তু আলোচনার টেবিলে বসলে এর সমাধান হবে। প্রয়োজনে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।

পরে শরিক দলের নেতারাও এতে সমর্থন দেন বলে জানান ওই নেতা।

২০ দলীয় জোটের আরেক শরিক দলের এক সভাপতি বলেন, ‘জোটের আলোচনার মূল বিষয় ছিল বৃহত্তর ঐক্য। যেকোনো মূল্যে জাতীয় ঐক্য গঠনে ২০ দলীয় জোট সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া জোটের ঐক্য ধরে রাখার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

যদিও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জোটের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়নি। তবে সোমবারের মানববন্ধনসহ অন্যান্য কর্মসূচিতে জোটের শরিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন মাহমুদ চৌধুরী।

২০ দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, এলডিপির রেদোয়ান আহমদ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মো. ওয়াক্কাস, নূর হোসেন কাসেমী, লেবার পার্টির একাংশের মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, জাগপার তাসনিয়া প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুর রকিব, পিপলস লীগের সভাপতি গরিবে নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ইসলামিক পার্টির সাঈদুল হাসান ইকবাল।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১০ সেপ্টম্বর ২০১৮/ডেস্ক/আআ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.