আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

কুমিল্লা-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান মুক্তিযোদ্ধা আলী আহম্মেদ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-১৮ ১৮:২৯:১০

হৃদয় দেবনাথ:: ১৯৭১ সাল।চারিদিকে বাঁজছে যুদ্ধের ডামাডোল তখন মাত্র সতেরো বছরের টগবগে এক সুদর্শন তরুণ তিনি। গৌরীপুর এফ এম কলেজ উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষের একজন তুখুড় মেধাবী ছাত্র হিসেবে অধ্যয়নরত। প্রচন্ড মেধাবী এবং বিনয়ী হওয়ার সুবাধে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিলেন সেই ছোটবেলা থেকেই। তিনি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক আমলা এডভোকেট আলী আহমেদ।

এডভোকেট আলী আহমেদ কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার প্রত্যন্ত এক গ্রাম নিলখী গ্রামের এক মধ্যে বিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। সাবেক এই আমলা জানান, আশির দশকে আমার এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতার কারণে শিক্ষার হার ছিল নিতান্তই কম। আশেপাশে উল্লেখযোগ্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলোনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা সেই সাথে কোমলমতি অসহায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগকে সঙ্গী করে দীর্ঘ মাইলের পর মাইল রাস্তা জমিনের উপর দিয়ে পায়ে হেটে বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশুনা করতে হতো। আর এই বিষয়টা ছোটবেলায়ই বেশ নাড়া দিয়েছিলো তাকে। সেই ভাবনা থেকে হোমনা-তিতাস অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে এডভোকেট আলী আহমেদের অবদান নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়। তিনি সচিব থাকাকালীন সময়েই নিজ পিতার জমিতে
নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন নিলখী উচ্চ বিদ্যালয়।

ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টি ফলাফলের দিক থেকেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। আর এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি অত্র অঞ্চলের প্রথম প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। শুধু স্কুল নয় হোমনা-তিতাস উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মসজিদ-মন্দির নির্মাণ সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে তার অংশ গ্রহণ ও সহযোগিতা চোখে পড়ার মতো। সততা আর নিষ্ঠার কারণে কারি কারি টাকা তিনি জমাতে পারেননি, কিন্তু সততা আর আদর্শকে লালন করে সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে পেরেছেন, সেই সাথে এলাকার মানুষকে সহযোগিতার পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন উন্নয়মূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকতে পারছেন আর এতেই বেশ তৃপ্ত বলে জানান তিনি।

১৯৬৮ ইং সনে হোমনা থানা ছাএলীগ এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক এর দায়িত্বে ছিলেন আলী আহমেদ।২০১০ সালে কুমিল্লা উওর জেলা কৃষক লীগের সাধারন সম্পাদক পদেও সফলতার সাথেই পালন করেছেন তিনি।২০০৮ এর জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে এইচ টি ইমামের সাথে অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন এই বীর মুক্তিযুদ্ধা।

এছাড়াও ৬৯ এর গন অভ্যুথানে সক্রিয় ভুমিকা পালন করার পাশাপাশি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর ডাকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। বর্তমানে হোমনা উপজেলা আওয়ামীলীগেরও একজন সিনিয়র সদস্য তিনি।

তিনি ব্যাক্তিগত জীবনে দুই ছেলে আর দুই মেয়ের গর্বিত পিতা।দুই ছেলেই ব্যাংকার আর এক মেয়ে স্বামীর সাথে ঢাকায় বসবাস করছেন। সবার ছোট মেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য এই মুহূর্তে আমেরিকায় আছেন। তরুণ বয়স থেকেই লক্ষ স্থির করে মনে অনেক স্বপ্ন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ছিল তার। আর সেই লক্ষে সফলও হয়েছেন তিনি। চাকরি জীবনে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অত্যান্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন সাবেক এই আমলা। পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে চাকরিতে থেকেই সক্রিয় ছিলেন। আর এ জন্যই একজন নির্লোভ অসাম্প্রদায়িক সাদা মনের মানুষ হিসেবে কুমিল্লা-২ হোমনা-তিতাস নির্বাচনী এলাকার সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত তিনি। হোমনা-তিতাস নিয়ে কুমিল্লা-২ সংসদীয় আসন গঠিত।আর এ আসন থেকেই এবার আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এই আমলা।

তিনি জানান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে আমি চাকরিতে থাকাকালীন সময় থেকে দলের জন্য কাজ করছি।দলের মনোনীত প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে অতীত থেকেই গণসংযোগ করে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত এই আসনে দলের বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দলীয় প্রায় সব কর্মকাণ্ডেই অতীত থেকে আমার অংশগ্রহণ রয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক একের পর এক হয়রানি ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি যা অত্র অঞ্চলে সকলের জানা। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব দিক বিবেচনা করে আমাকেই দল থেকে নমিনেশন দেবেন।

অতীত স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাবেক এই আমলা জানান,১৯৭১ সাল তখন আমি গৌরীপুর এফ এম কলেজের সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হিসেবে অধ্যনরত। জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে শত্রু মুক্ত করতে মাত্র সতেরো বছর বয়সেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি।

পাকসেনাদের পরাজিত করে ছিনিয়ে আনলেন বাংলার লাল-সবুজের স্বাধীন পতাকা।আমরা পেলাম একটি স্বাধীন ভূখণ্ড যার নাম বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীনের পর তিনি আবারো মনোযোগ দিলেন পড়াশুনায়। পড়াশুনা শেষ করে জীবন-জীবিকার তাগিদে চাকরির পেছনে ছুটলেন। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি।বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাথে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে সেই সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি-জামাত জোট সরকারের রোষানলে পরে মিথ্যে মামলায় চাকরি হারান তিনি।দীর্ঘ পাঁচ বছর চাকরি হারিয়ে উকালতি করে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে দিনানিপাত করেছেন যুদ্ধাহত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে মহামান্য আদালতে কেইস জিতে পুনরায় চাকরি ফিরে পান তিনি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে সফলতার সাথে কাজ করে অবসরে যান তিনি।এখন বাকিটা জীবন উন্নয়ন বঞ্চিত হোমনা-তিতাস এলাকার জনগণের সেবায় নিজেকে সপে দেওয়ার মনস্থির করেছেন।

কুমিল্লা-২ হোমনা-তিতাস আসন থেকে এবার আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি জানান,যদি দলীয় প্রধান আওয়ামীলীগ থেকে তাকে মনোনীত করেন তবে একসময়ের বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত এই আসনটি আওয়ামীলীগের ঘাঁটিতে পরিণত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কুমিল্লা উত্তর কৃষকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযুদ্ধা আলী আহমেদ। বিএনপি-জামায়াত সরকারের শাসন আমলে চোখের সামনে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের উপর একের পর এক মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে অপদস্থ করতে দেখে তা সহ্য করতে পারেননি তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় নিজ উদ্যোগে শুধু মাত্র রাজনৈতিক মিথ্যে মামলার শিকার আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য ঢাকায় ইন্সানিয়াত নামে একটি আইন সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন তিনি। আর এই আইন সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মীকে তৎকালীন বিএনপি-জামাত সরকারের হয়রানিমূলক মিথ্যে মামলার শিকার আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের বিনা ফিতে আইনি সহায়তা দিয়েছেন। এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে এডভোকেট আলী আহমেদ সাহেবের অবদান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

একান্ত আলাপে এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, যখন দেখি আমার প্রাণের দল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দল আওয়ামীলীগের কোন নেতা-কর্মী জামায়াত-বিএনপির মতো চিহ্নিত রাষ্ট্রদ্রোহীদের সাথে স্বার্থের জন্য হাত মেলান, তখন একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে তা সহ্য করতে পারিনা। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। যারা এই বাংলাদেশের স্বাধীনতাই চায়নি,যারা এ স্বাধীন দেশের মানচিত্র মেনে নিতে পারেনি সেই রাজাকার আলবদরদের সাথে জোট করে তাদেরকে মন্ত্রীর আসনে বসিয়ে তাদের গাড়িতেই ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের পবিত্র জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন বিএনপি সরকার!আমরা কি এজন্যই জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করেছিলাম?
 
শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী,আজ উন্নত বিশ্বেও বাংলাদেশ একটি রোল মডেল বলেও জানান প্রচারবিমুখ যুদ্ধাহত এ মুক্তিযুদ্ধা!তিনি বলেন আজ বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান দেখে গর্ব হয়,মনে হয় যে স্বপ্ন নিয়ে জীবন বাজি রেখে দেশকে পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করতে মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম তা আজ স্বার্থক হয়েছে! বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধারাবাহিকভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন, এই দেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে! শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে আগামীতে আমরা বিশ্ব দরবারে একটি উন্নত দেশ হিসেবে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো বলেও আমার বিশ্বাস।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ অক্টোবর ২০১৮/এইচডি/ আআ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন