Sylhet View 24 PRINT

‘জাবি ছাত্রলীগকে টাকা দেয়ার অভিযোগটি শোভন-রাব্বানীর বানানো গল্প’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-১৪ ১৮:৩৮:১৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: উন্নয়ন প্রকল্প থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা দেয়ার অভিযোগটি শোভন-রাব্বানীর বানোয়াট গল্প বলে দাবি করেছেন জাবি ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

এ বিষয়ে তিনি শোভন-রাব্বানীকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। আর ঘটনা তদন্ত করে দেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও আচার্যকে অনুরোধ করবেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ থেকে বাঁচতে ও নিজেদের অন্যায় ঢাকতে ছাত্রলীগ মিথ্যা গল্প সাজিয়েছে। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আহ্বান জানাচ্ছি।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ভিসি তার বাসভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে ও গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী অভিযোগ করেন, জাবি ভিসি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন এবং তার স্বামী ও ছেলে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে ‘কমিশন-বাণিজ্যে’ জড়িয়েছেন।

গোলাম রাব্বানীর সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে ভিসি ফারজানা ইসলাম দাবি করেছেন, বিভিন্ন সময় শোভন-রাব্বানী জাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নানা দাবি-আবদার করেছেন। তাদের সেসব অনৈতিক দাবি পূরণ করিনি আমরা। তাই হতাশ হয়েই এসব মিথ্যা গল্প প্রচার করছেন তারা।

ভিসি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে-স্বামী কখনই তাদের ফোন করেনি। বরং তারাই ফোন করে দেখা করতে এসেছিল। তারা টাকার জন্য বিভিন্ন সময় প্রতিনিধি পাঠিয়ে আমাদের কর্মকর্তাদেরও ডিস্টার্ব করেছে। এখন এসব কথা বলে তারা আমার পরিবারের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এসব বিষয় জানিয়েছেন বলেও জানান ভিসি ফারজানা।

ছাত্রলীগ কেন এমন মিথ্যা গল্প বানিয়ে তাকে ফাঁসাতে চাইবে —এমন প্রশ্নের জবাবে ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘আমি দুর্ভাগ্যক্রমে শেষ তীর ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পটভূমিতে যেন ছাত্রলীগের পচন না ধরে, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী তদন্ত শুরু করেছিলেন। ছাত্রলীগ তাদের এসব কার্যকলাপ থেকে দৃষ্টি এড়াতে, নিজেদের বাঁচাতে এসব গল্প বানিয়েছে। তাই ক্যাম্পাসের আন্দোলনের সঙ্গে বিষয়টি জড়িয়ে দিয়েছে।’

গত ১৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে ‘জাবির উন্নয়ন প্রকল্পে শোভন-রাব্বানীর থাবা : ভিসির কাছে চাঁদা দাবি’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী তা আলোড়ন তোলে।

সে খবরে প্রকাশ, গত ৮ আগস্ট রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দের ৪-৬ পারসেন্ট চাঁদা দাবি করেন।

উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার পেয়েছে- এমন কোম্পানির কাছ থেকে ভিসিকে টাকার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন শোভন ও রাব্বানী। কিন্তু ভিসি তাতে রাজি না হওয়ায় তার সঙ্গে দুই নেতা রুঢ় আচরণ করেন। বুধবার সন্ধ্যায় ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম তার বাসভবনে যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

শাখা ছাত্রলীগ ও জাবির একাধিক শিক্ষকসূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহার আগে ৮ আগস্ট রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভিসির বাসভবনে এসে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সেদিন ভিসি ফারজানা ইসলামের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ দুই নেতা রুঢ় আচরণ করেন বলে জানা গেছে।

ঘটনার বিবৃতি দিয়ে এ বিষয়ে ভিসি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘সেদিন তারা (শোভন ও রাব্বানী) আমাকে বলে, এত বড় প্রকল্প, আপনি আমাদের সহযোগিতা করেন, আমরাও আপনাকে সহযোগিতা করব। আপনি কোম্পানিগুলোকে বলে দেন তারা যেন আমাদের কিছু (পার্সেন্ট) টাকা দেয়। আমাদের টাকা দিলে আমরা স্থানীয় (জাবি) ছাত্রলীগকে তা থেকে কিছু দিয়ে দেব।
কিন্তু আমি তাদের কথায় রাজি হইনি এবং মুখের ওপরে বলে দিয়েছি- আমি কোনো টাকা-পয়সার মধ্যে নেই। তখন তারা আমাকে বলল- আপা (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের সব বিশ্ববিদ্যালয় দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন।

সে জন্য আপনার কাছে এসেছি। তখনও তাদের কথায় সাড়া না দেয়ায় তারা আমার সঙ্গে বেশ উচ্চস্বরে কথা বলা শুরু করে। এর কিছু সময় পর তারা চলে যায়।’

তারা কত পার্সেন্ট দাবি করেছিল- এমন প্রশ্নে ভিসি বলেন, ‘দু-এক পার্সেন্ট না, তারা চার কিংবা ছয় পার্সেন্টের কথা বলেছিল।’

এ বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভিসি ফারজানা।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেন, ওরা (শোভন-রাব্বানী) তোমাকেও কষ্ট দিল।’

এদিকে ভিসি শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেয়ার যে অভিযোগ গোলাম রাব্বানী তুলেছেন তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন শাখার সভাপতি জুয়েল রানা।

তিনি বলেন, ‘রাব্বানী ভাই আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই এসব কথা বলেছেন। তিনি যেখান থেকে তথ্য পেয়েছেন, সেটি ভুল তথ্য ছিল। এটি ভাইয়ের তথ্যগত ভুল। টাকা পাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

প্রসঙ্গত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত উন্নয়নকাজের জন্য এ বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৫টি আবাসিক হল (তিনটি ছাত্র ও দুটি ছাত্রীনিবাস) নির্মাণের জন্য ৩৬৭ কোটি টাকার টেন্ডার চূড়ান্ত হয়েছে।

সৌজন্যে : যুগান্তর
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.