আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শিরোপাতেই চোখ বাংলাদেশের

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-০২ ০০:৪৩:২৬

শুধু বাংলাদেশ নয়, দুনিয়া কাঁপানো বিশ্বকাপ ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশ কখনো খেলবে কি না তার নিশ্চয়তা নেই। বিশ্বকাপ খেলাটা স্বপ্নই বলা যায়। মানের কারণে বড় টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতাও সম্ভব নয়। তাই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপই এ অঞ্চলের বিশ্বকাপে পরিণত হয়েছে। সাফ জেতাটাই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর কাছে বড় অর্জন হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়। যে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ঘিরে অন্য দেশগুলোকে নিয়ে উন্মাদনায় মাতে। তাদের সামনেই এখন সাফের বিশ্বকাপ জেতার চ্যালেঞ্জ। সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া মানেই সার্কের শ্রেষ্ঠ দলে পরিণত হওয়া। বিশ্বের দুর্বল দলগুলোর কাছে এটাও কম প্রাপ্তি নয়।

সেই দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে ৪ সেপ্টেম্বর। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ১২তম আসর অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী দিনে নেপাল ও পাকিস্তান মুখোমুখি হবে। সন্ধ্যায় লড়বে স্বাগতিক বাংলাদেশ ও ভুটান। এর আগে ঢাকায় ২০০৩ ও ২০০৯ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়। এটি হবে তৃতীয় আসর। অন্য গ্রুপে আছে সাফের সফল দল ৭ বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা। ভিসা জটিলতায় পাকিস্তানের আসা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হলেও টুর্নামেন্টে সাতটি দেশের অংশ নেওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল। সাফ থেকে সরে যাওয়ায় এক বারের চ্যাম্পিয়ন শক্তিশালী আফগানিস্তান টুর্নামেন্টে নেই।

ঘরের মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ বাংলাদেশের কাছে চ্যালেঞ্জের। প্রতিটি আসরেই গুরুত্ব ছিল। এবারের লড়াইটা জামাল ভূইয়াদের জন্য পুরোপুরি আলাদা। গেল তিন আসরে হতাশার রেজাল্টে মান ও জনপ্রিয়তার চরম ধস্ নেমেছে বাংলাদেশের ফুটবলে। শিরোপা নয়, টানা তিন আসরে সেমিফাইনালই খেলতে পারেননি মামুনুলরা। গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নিয়েছে। সাফের ভরাডুবিতে দর্শকরাও ঘরোয়া আসর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পেশাদার লিগে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতেও গ্যালারি থাকছে প্রায় ফাঁকা। ফিফা র‌্যাঙ্কিয়ের বাংলাদেশের অবস্থান দুশো ছুঁই ছুঁই করছে। এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা যে বাংলাদেশের ফুটবল ঘুরে দাঁড়াবে এই আশাও কেউ করছেন না।

যাক সাফের আগে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে জামাল, সুফিলরা। এশিয়ান গেমস ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছে। কাতারকে হারিয়ে শেষ ষোলোতে থাকা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য কৃতিত্বের। অনূর্ধ্ব-২৩ দলে অনেক দিন পর বাংলাদেশের খেলায় ছন্দ ও গতি খুঁজে পাওয়া গেছে। শুধু কি তাই দর্শক যেখানে সোনার হরিণ পরিণত হয়েছিল। সেখানে বসুন্ধরা কিংসের ঘরের মাঠ নীলফামারী শেখ কামাল স্টেডিয়ামে স্মরণকালের সর্বাধিক দর্শকের সমাগম ঘটে।

সাফের আগে ছন্দে ফেরা বা গ্যালারি ভরপুর হওয়া সবই ফুটবলারদের শক্তির টনিক হিসেবে কাজ করবে। কথা হচ্ছে এই টনিক কাজে আসবে কি? আগে যাই হোক এবার প্রস্তুতিতে বাফুফে কোনো ঘাটতি রাখেনি। বলা যায় অন্য ছয় দেশের তুলনায় জামালরা এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। দেশ ছাড়াও বিদেশে কন্ডিশনিং ক্যাম্পের পাশাপাশি একাধিক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। ফুটবলাররাই বলছেন এমন অনুশীলনে তারা সন্তুষ্ট। তারপরও কি ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারবে?

সামর্থ্য থাকার পর সাফ ইতিহাসে বাংলাদেশই একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০০৩ সালে ঘরের মাঠে ফাইনালে মালদ্বীপকে হারিয়ে বিজয় উৎসবে মেতেছিল লাল-সবুজরা। ১২ বারের মধ্যে ভারত ৭ বার সেখানে বাংলাদেশ একবার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা বড় ব্যর্থতা। তারপর আবার টানা তিন আসরে সেমিফাইনাল খেলতে পারেনি। এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কি হতে পারে। বড় কোনো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবে এ আশা কেউ করেন না। তাইতো দক্ষিণ এশিয়ার কাছে সাফই বিশ্বকাপ। এখানে ভরাডুবি ঘটায় ফুটবলে অন্ধকার নেমে এসেছে।

নারী দলের একের পর এক চমক। পুরুষ বয়সভিত্তিক দলের সাফল্য। এসবে কোনো কিছুতেই ফুটবল জাগাবে না। কেননা পুরুষ জাতীয় দলইতো দেশের প্রাণ। যদি বাংলাদেশ এবার ঢাকায় সাফে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে তাহলে ফুটবল পাবে নতুন প্রাণ। এই সাফল্য ধরে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে ফুটবল। যদি ব্যর্থ হয় ফুটবল ঘিরে যতটুকু আশার আলো জ্বলেছে। তাতো নিভেই যাবেই ফুটবল ঘিরে আগ্রহটা আর থাকবেই না। ফুটবলের ভবিষ্যৎ সব কিছুই নির্ভর করছে ঢাকার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ঘিরেই। ১৫ সেপ্টেম্বর ফাইনালে খেললে ফুটবলে আশা থাকবে। যদি ফাইনালে না উঠে তাহলে অন্ধকারেই থেকে যাবে বাংলাদেশের ফুটবল।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন