আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

রশিদ খানের কাছেই হারলো বাংলাদেশ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-২১ ০১:৩২:৩৫

ইদ্রিছ আলী, আরব আমিরাত থেকে :: এশিয়া কাপে ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজয় বরণ করলো মাশরাফিরা। রশিদের অলরাউন্ড ণৈপুণ্যই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে।

আফগানিস্তানের দেয়া ২৫৬ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

সর্বশেষ দলীয় ১০০ রানে ৭ উইকেট হারায় তারা। রহমত শাহ’র বলে ব্যক্তিগত ৪ রান করা মেহেদি হাসান মিরাজ বিদায় নিলেন। হাসমতউল্লাহ শহিদীকে তিনি ক্যাচ দেন। এর ফলে বাংলাদেশ শিবিরে স্বীকৃত সব ব্যাটসম্যানই আউট হলো।

আর রশিদ খানের ঘূর্ণিতে একের পর এক উইকেট হারাচ্ছে দলটি। সর্বশেষ ৫৪ বলে ২৭ ‍রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বোল্ড করেন আফগানদের স্পিন বিস্ময় রশিদ। এরই সঙ্গে ২৫তম ওভারে দলীয় ৯০ রানে ৬ উইকেট হারায় টাইগাররা।

সর্বশেষ আশাজাগানিয়া ব্যাটিং করা সাকিব আল হাসানও ফিরে গেলেন। ২৪তম ওভারে দলীয় ৭৯ রানের মাথায় রশিদ খানের বলে এলবি হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৫৫ বলে ৩২ রান আসে সাকিবের ব্যাট থেকে।

এর আগে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করা মোহাম্মদ মিঠুন (২) আউট হলে চতুর্থ উইকেটের পতন হয় টাইগারদের। মুমিনুল হকের বিদায়ের পর দ্রুতই গুলবাদিন নবী বলে বোল্ড হন তিনি।

১৩তম ওভারে দলীয় ৩৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় টাইগাররা। তিন বছর পর জাতীয় দলে ফিরে ৯ রান করে মুমিনুল হক গুলবাদিন নবীর শিকার হন। উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ শাহজাদের কাছে ক্যাচ দেন তিনি।

এ ম্যাচে তামিম ইকবালের পরিবর্তে অভিষেক হওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত’র পারফরম্যান্স মোটেই সুখকর হলো না। দলীয় চতুর্থ ওভারে মুজিব উর রহমানের বলে তুলে মারতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৭ রানে বিদায় নেন তিনি। এর পর দ্রুতই বিদায় নেন আরেক ওপেনার লিটন দাশ। আফতাব আলমের বলে এলবি হয়ে ব্যক্তিগত ৬ রানে মাঠ ছাড়েন তিনি।

এর আগে এশিয়া কাপে ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করা আফগানিস্তান নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫৫ রান করে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেন হাসমাতুল্লাহ শাহিদী। তবে অষ্টম উইকেট জুটিতে গুলবাদিন নবী ও রশিদ খানের ৯৫ রানের পার্টনারশিপ দলের ভালো সংগ্রহের কারণ হয়। সাকিব আল হাসান ৪টি উইকেট দখল করেন।

শেষ দিকে ৩২ বলে ৮টি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত ঝড়ো ৫৭ রান তোলেন রশিদ খান। তার সঙ্গে ৯৫ রানের জুটি বেধে দারুণ ব্যাটিং করা গুলবাদিন নবী হার না মানা ৩৮ বলে ৫টি চারে ৪২ রান করেন।

এর আগে বল হাতে উইকেটে জাদু দেখান সাকিব আল হাসান। আফগানিস্তানের সেরা তারকা মোহাম্মদ নবীকে এলবির ফাঁদে ফেলে মাঠ ছাড়া করান তিনি। তার নজর কাড়া বোলিংয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে প্রতিপক্ষ।

আফগানিস্তান ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করা হাসমাতুল্লাহ শাহিদীকে ফেরান রুবেল হোসেন। দলীয় ৩৮ ও নিজের পঞ্চম ওভারে এসে উইকেটের পেছনে থাকা লিটন দাশের ক্যাচ বানিয়ে তাকে প্যাভিলিয়নে পাঠান এ ম্যাচে প্রথম উইকেট পাওয়া এই ডানহাতি। ৯২ বলে ৩টি চারে ৫৮ রান করেছেন হাসমাতুল্লা।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বল হাতে জ্বলে ওঠেন সাকিব আল হাসান। প্রতিপক্ষের পাঁচ উইকেটের শেষ তিনটিই তিনি তুলে নেন। সর্বশেষ ৩৪তম ওভারে ১৮ রান করা সামিউল্লাহ শেনওয়ারিকে বোল্ড করে মাঠ ছাড়া করেন তিনি।

দারুণ এক ঘূর্ণিতে আফগানিস্তান অধিনায়ক আসগর আফগানকে ফেরান সাকিব আল হাসান। ৮ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে সরাসরি বোল্ড করেন তিনি। মোহাম্মদ শাহজাদ ও আসগরকে বিদায় করে বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান।

ভালো খেলতে থাকা আফগানিস্তান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদকে বিদায় করেন সাকিব আল হাসান। দলীয় ২০তম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে এসে তৃতীয় বলেই তাকে তুলে নেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার। তবে বাউন্ডারি অঞ্চলে অসাধারণ ক্যাচ নিয়ে আলো কেড়ে নেন আবু হায়দার রনি। ৪৭ বলে ৪টি চারে ৩৭ করেন শাহজাদ।

ফিল্ডিংয়ে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করে টাইগাররা। নিজের ওয়ানডে অভিষেকের প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নেয়ার পর তৃতীয় ওভারে রহমত শাহকে সরাসরি বোল্ড করে জোড়া উইকেটের আনন্দ উদযাপন করেন পেসার আবু হায়দার রনি।

এশিয়া কাপে গ্রপ পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নেমে ওপেনার ইহসানুল্লাহ জানাতকে মোহাম্মদ মিঠুনের ক্যাচ বানিয়ে মাঠ ছাড়া করেন এই বাঁহাতি। পরে দলীয় ষষ্ঠ ও নিজের তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে রহমত শাহ’র স্ট্যাম্প ভেঙে দেন তিনি।

এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। টাইগারদের একাদশে আজ নেই মুশফিক আর মোস্তাফিজ। আজকের ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হলো আবু হায়দার রনি ও নাজমুল হোসেন শান্ত।

এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় আবুধাবিতে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ-আফগানিস্তান।

এক ম্যাচ হাতে রেখেই দুই দলই সুপার ফোরে স্থান নিশ্চিত করেছে। এবার এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে একে অন্যের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। দুই দলই গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সুপার ফোরে পা রেখেছে। তাই বলে এই ম্যাচের গুরুত্ব মোটেই কমে যাচ্ছে না। দুই দলই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে চাইবে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৫ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়ে তিন জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ওয়ানডেতে আফগানদের বিপক্ষে ১৪১ রানে বিজয়ী হয়েছিল টাইগাররা। ২০১৬ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ম্যাচটি বাংলাদেশকে নিশ্চিতভাবে অনুপ্রেরণা জোগাবে।

বাংলাদেশ দলে ফিরেছেন ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। প্রায় তিন বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরলেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্কখে মাঠে নেমেছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিয়ানায়ক), আবু হায়দার রনি, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), রুবেল হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন।

আফগানিস্তান একাদশ: মোহাম্মদ শাহজাদ (উইকেটরক্ষক), ইহসানুল্লাহ জানাত, রহমত শাহ, আসগার আফগান (অধিনায়ক), হাসমাতুল্লাহ শাহিদী, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, মোহাম্মদ নবী, গুলবদিন নায়িব, রশিদ খান, আফতাব আলম, মুজিব উর রহমান।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন