Sylhet View 24 PRINT

শাহী ঈদগাহে ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে’ ফের মেলা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১১-২৩ ০০:১৫:৫৬

একদিকে মেলার আনুষ্ঠানিকতা। অন্যদিকে শিশু-কিশোরদের মাঠে না খেলতে পারার আক্ষেপ।

মিসবাহ উদ্দীন আহমদ :: সিলেট সদর উপজেলার পূর্ব শাহী ঈদগাহে অবস্থিত সদর উপজেলা খেলার মাঠ। আশেপাশের শিশু-কিশোরদের খেলার চাহিদা পূরণের তাগিদেই এখানে টিলাকেটে খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এখানে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর থেকেই এটি এ নামে পরিচিতি পাচ্ছে।

নামে খেলার মাঠ হলেও আদতে এটি মেলার মাঠ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের বেশির ভাগ সময় জুড়েই মাঠটি বরাদ্দ থাকে হয় পশুর হাটের নামে; না হয় মেলার নামে। সিলেটে যখন ক্রমশ খেলার মাঠগুলো বিলুপ্তির পথে। ঠিক এমন সময় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ‘আধারে আশার আলো’।

কিন্তু এক শ্রেণী মেলা প্রেমীদের কারণে সেই আলোর নিচে এখন অন্ধকার দেখছেন স্থানীয় ক্রীড়া প্রেমীরা। তাদের প্রশ্ন খেলার নামে যখন মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো- তখন এখানে বার বার কেনো মেলা হয়? কেনো পশুর হাট হয়? তারা মন্তব্য করেন মেলার পরপরই মাঠ খালি দেয়া হয় না। দিনের পর দিন মেলার স্থাপনা ফেলে রাখা হয়। গত ঈদুল আযহার পরও এমনটি ঘটেছে। অবৈধভাবে এখানে বসানো হয়েছে পশুর হাট। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ফায়দালোভীদের ম্যানেজ করে বিতর্কিত ব্যবসায়ী এমএ মঈন খান বাবলু ওরফে ‘মেলা বাবলু’ এখানে আয়োজন করেন মেলা।

বিগত দিনগুলোতে এ মাঠে মেলা আয়োজন বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা ও আশেপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা বলেন, সিলেট নগরী ও শহর তলিতে শিশু-কিশোরদের জন্য খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠ হলো আধারে আশার আলো। কিন্তু এই মাঠটিতে বছরে একাধিকবার মেলা ও কোরবানির পশুর হাট করে ব্যবসা বাণিজ্য করা হয়। এর মাধ্যমে আশপাশের শিশু-কিশোররা বঞ্চিত হচ্ছেন খেলাধূলার সুযোগ থেকে।

স্থানীয়রা দাবি করেন- সিলেটে মেলা আয়োজনের জন্য আরো অনেক স্থান রয়েছে। পশুর হাটের জন্য রয়েছে আরোও অনেক স্থান। এখানে খেলার মাঠে মেলা আয়োজন করে শিশু-কিশোরদের চিত্ত-বিনোদনে আঘাত দেওয়া কি আইন সঙ্গত এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের।

এ বিষয়ে শাহী ঈদগাহ হোসনাবাদ এলাকার বাসিন্দা অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকী বলেছেন, বিভিন্ন সময় মেলা ও পশুর হাটের জন্য সদর উপজেলা খেলার মাঠটি সম্পূর্ণ খেলার অনুপযুক্ত। দীর্ঘদিন মেলা ও হাটের কারণে মাঠের মধ্যে ময়লা থাকে যা ফলে পরিস্কার পরিচ্ছন করা হয় না। এতে করে খেলার মাঠের পাশাপাশি এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এতে করে মাঠটি খেলার অনুপযুক্ত থাকে।

ক্রীড়াপ্রেমিদের দাবি- ‘একেকটা বাণিজ্য মেলার সময় একমাস দুই মাস থাকে মেলা। আর শুরুর আগে একমাস। মেলা শেষে স্থাপনা সরাতে আরোও একমাস সময় লাগে। আর কোরবানীর পশুর হাটের সময় হাট চালুর আগে প্রায় মাসখানেক দখলে থাকে মাঠ। হাটের পর আরোও প্রায় একমাস নোংরা থাকে মাঠটি। এভাবে মেলা আর হাটে চলে যায় প্রায় ৭ মাস।’
তারা আক্ষেপ করে বলেন- ‘এসব মেলা ও গরু-ছাগলের হাট আয়োজনের সাথে আমাদের এলাকার অনেক যুবক-মুরব্বী জড়িত। তারা যদি মেলা আয়োজনে বাঁধা দিতেন। তবে আমরা খেলাধূলা থেকে বঞ্চিত হতাম না। এটি দু:খজনক।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকী আরোও বলেন- শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠকে (নির্মাণাধীন শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম) যদি এখনও মেলামুক্ত করা না হয় তবে স্থানীয় শিশু-কিশোররা বাজে আড্ডায় জড়িয়ে পড়বে। এটি এখনো দেখা যায়। শিশু-কিশোরদের এখন অবসর কাটাচ্ছে বাজে আড্ডায়। তারা মাদকে আগ্রহী হয়ে পড়ছে।

বিগতদিনে মাঠে মেলা আয়োজনের ব্যাপারে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ প্রকাশ্যেই সাংবাদিকদের বলেছিলেন- ‘আগামীতে এই মাঠে আর কোন মেলা আয়োজন করা হবে না।’ কিন্তু এরপর এই মাঠে আরোও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর নজির এখন সিলেটবাসীর সামনেই।বুধবার দুপুরে এই মাঠে আবারোও মেলা আয়োজনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি জানতে চেয়ে চেয়ারম্যান আশফাকের বক্তব্য নিতে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে তার ফোন রিসিভ হয়নি।
মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব জাহাঙ্গির হোসেন প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- বুধবার দুপুরে সিলেট ৪র্থ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০১৭ এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। মেলাটি নাকি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও শাহী ঈদগাহস্থ উপজেলা খেলার মাঠ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে করা হচ্ছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র আয়োজকরা গণমাধ্যমে পাঠাননি। সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা মাঠ কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে খুঁটি স্থাপনের মাধ্যমে মেলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন এসএমসিসিআই এর সভাপতি হাসিন আহমদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল জব্বার জলিল, সহ-সভাপতি হুরায়রা ইফতার হোসেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো. মোশাহিদ আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক তপন মিত্র, সাংবাদিক আব্দুল মালিক জাকা, সাবেক পরিচালক মাওলানা খায়রুল হোসেন, পরিচালক মো. ইলিয়াছুর রহমান, মাহবুবুর রহমান, সদস্য এমএ মঈন খান বাবলু, সচিব জাহাঙ্গির হোসেন, ঈদগাহ পঞ্চায়েত কমিটির পক্ষে আকবর হোসেন সেলিম, নাজমূল ইসলাম এহিয়া, ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান পাপ্পু প্রমুখ।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি সিলেট শাখার কার্যনিবাহী পরিষদের সদস্য ও ক্রীড়া সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম কামাল বলেন- ‘সিলেট নগরী ও শহরতলিতে এমনিতেই খেলার মাঠের সংকট। শিশু-কিশোররা খেলাধূলার জন্য মাঠ পাচ্ছে না। একারণে তারা জড়িয়ে পড়ছে বাজে আড্ডায়। বাড়ছে কিশোর অপরাধ। শাহী ঈদগাহের খেলার মাঠটি সেখানকার শিশু-কিশোরদের জন্য আশার আলো। কিন্তু মাঠটিতে ঘনঘন মেলা আয়োজনে কারণে তাদের খেলাধূলার সুযোগ কমে গেছে। খেলার মাঠে মেলা আয়োজন কোনভাবেই কাম্য নয়।’

প্রসঙ্গত, এর আগেও সিলেট সদর উপজেলা খেলার মাঠ (প্রস্তাবিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে) দখলের পায়তারায় লিপ্ত ছিলো একটি প্রভাবশালী মহল। তখন স্থানীয় বাসিন্দাসহ সিলেটের ক্রীড়াপ্রেমী ও সচেতন মহল আন্দোলন সংগ্রাম করে মাঠটিকে ভূমিখেকো চক্রের হাত থেকে রক্ষা করেন। পরে মাঠে একটি স্থায়ী মঞ্চও নির্মাণ হয়। সেখানে মাসব্যাপী সিলেটের সাংবাদিকদের জন্য একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। সেটিতে সিলেটের স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার কর্মরত সাংবাদিকরা অংশ নেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২৩ নভেম্বর ২০১৭/ এমইউএ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.