আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটের জয়িতা-০৩: বিভীষিকা মুছে প্রতিষ্ঠিত লনী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০১-০২ ০০:০৮:৫৬

মো. এনামুল কবীর :: অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে হামিদা খান লনী যখন একটি ভালো চাকরির স্বপ্নে বিভোর, ব্যাংক কর্মকর্তা পিতা তখন ব্যস্ত মেয়ের বিয়ে দিতে। অনেক চেষ্টায় কৃষি ব্যাংকের এক কর্মকর্তার সাথে তার বিয়ে হয়। কিন্তু সুখপাখিটার নাগাল আর পেলেন না তিনি।

কারণ, তার স্বামী ছিলেন ‘যৌতুক লোভী’। বিয়ের পরপরই তার উপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। বাংলার আর দশটা মেয়ের মতো তিনিও ধৈর্য ধরে পড়ে থাকেন স্বামীর ঘরে। এরমধ্যেই কোল আলো করে জন্ম নেয় একটি মেয়ে। কিন্তু স্বামীর নির্যাতনের মাত্রা তো কমে-ই-নি, উল্টো বাড়তে থাকে।

বিয়ের মাত্র দেড় বছরের মাথায় স্বামী তাকে পাঠিয়ে দেন বাবার বাড়ি। অবশ্য কিছুদিন পর সবকিছু মিটমাট হলে আবার শুরু হয় তাদের সংসার। কিন্তু বেশিদিন টিকলোনা। ভেঙ্গে গেল। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার মতো মানসিক যন্ত্রনার মধ্যেই জন্ম নেয় তার দ্বিতীয় সন্তান, এবার ছেলে।

মূলত এরপরই শুরু হামিদা খান লনীর ঘুরে দাঁড়িয়ে সাফল্য অর্জনের পথচলা। সিলেট সদর উপজেলার ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নের নিবারণ মনিপুরী পাড়ার মুসলিম খানের মেয়ে লনী দুটি সন্তানের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করেন। কঠিন এই মিশনে সফল হতে তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।

২০০৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘তাহমিম আইডিয়াল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’। শিশু থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭০ জন। তিনি প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৬ জন শিক্ষকের পাশাপাশি একজন আয়ারও কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে।

সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে হামিদা বেগম লনী জানান তার জীবনের আরও কিছু গল্প। আলাপচারিতার তিনি যা বললেন, ‘তা হচ্ছে নারীই নারীর প্রধান শত্রু ।’ উচ্চশিক্ষিত এই জয়িতা প্রশ্ন রাখলেন, ‘নারী হয়ে আরেক নারীর সংসার কিভাবে ধ্বংস করে ওরা?’

সিলেট জেলা থেকে এবার তিনি ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী’ ক্যাটাগরিতে জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন।

নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেই তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুই সন্তানের লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেন। তার ফলাফলও পেয়েছেন। তারা প্রতিটি পরীক্ষায় অসাধারণ মেধার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে। মেয়েটি ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে। এখন বৃত্তি নিয়েই পড়ছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছেলে এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস নিয়ে পাস করেছে। এইচএসসিতে তার আরও ভালো ফলাফলের ব্যাপারে লনী খুবই আশাবাদী।

বিভীষিকাময় অতীত পেরিয়ে এসে হামিদা বেগম লনীর উপলব্ধি, ‘এমন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে প্রতিটি নারীকে স্বাবলম্বী হতে হবে। লেখাপড়া জানার পাশাপাশি হাতের কাজ বা হাঁসমুরগী পালন, এমনকি সব্জি চাষের মাধ্যমেও নারী স্বাবলম্বী হতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বের প্রতি ৩ জনের একজন নারীই নানাভাবে নির্যাতিত।’

এ জয়িতা সিলেট সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এছাড়াও তিনি আরও নানা সেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট। তিনি শাহপরাণ থানার কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা, জেলা স্কাউটের সহকারি কমিশনার।

তিনি এখন বিভাগীয় পর্যায় পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ‘জয়িতা’ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এ লক্ষ্য সফলে সিলেটবাসীর দোয়া চেয়েছেন হামিদা বেগম লনী।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২ জানুয়ারি ২০১৮/এমইকে/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন