আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

সিলেটের জয়িতা-৪: সমাজ উন্নয়নে অসাধারণ অবদান ইন্দ্রানীর

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০১-০৩ ০০:৩৬:১৬

মো. এনামুল কবীর :: ’৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ’৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন, টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী আন্দোলন, সিংহবাড়ি সম্পত্তি রক্ষার আন্দোলন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলের নামকরণের আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে আন্দোলন, শিশু ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন, মৌলবাদ-জঙ্গিবাবদবিরোধী আন্দোলনসহ সিলেটের প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের কাতারেই তাঁকে দেখা যায়। তিনি ইন্দ্রানী সেন শম্পা। তৃণমুল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি সিলেটের সমন্বয়কারি হিসাবে অসহায় নারীদের পাল্টে দিয়ে স্বাবলম্বী হতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। সমাজ উন্নয়নে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

এই একনিষ্ঠতার পুরস্কার হিসাবে এ বছর সরকার সিলেট জেলার জয়িতা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন তাকে। জয়িতা স্বীকৃতি পেয়েছেন ‘সমাজ উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রাখা নারী’ ক্যাটাগরিতে।

ইন্দ্রানীর বাবা জিতেন সেন একজন সাংবাদিক হলেও পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। আর তাই ছাত্রজীবনেই তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। নিজে রোজগার করেই পেরিয়েছেন উচ্চ শিক্ষার প্রতিটি ধাপ। বি.এ, মাস্টার্স ও এলএলবি পাশ করেছেন নিজে চাকুরি করে। পাশাপাশি দুই ভাই-বোনের লেখা পড়ার খরচও যুগিয়েছেন নিজে পরিশ্রম করে।

ইন্দ্রানী তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটির একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসাবে উপজাতি নারী, বিশেষ করে চা শ্রমিক, পাত্র এবং ওঁরাও নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন। তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নিজের সংগঠনের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব তা সমাধান করছেন। সরকার, প্রশাসন এবং সচেতন মানুষের সামনে তা তুলেও ধরছেন।
 
সম্প্রতি সিলেটভিউ২৪ডটকম’র এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে যাদের নিয়ে তিনি কাজ করছেন, সেই তৃণমূল নারীদের সমস্যাগুলো সমাধানের সরকারি উদ্যোগ প্রসঙ্গে ইন্দ্রানী সেন শম্পা বলেন, ‘আসলে সরকার এ পর্যায়ের নারীদের সমস্যা সমাধানে যে প্রকল্পগুলো নিয়ে কাজ করছেন, সে ব্যপারে প্রচারণার যথেষ্ট উদ্যোগ কিন্তু নেই। গ্রামগঞ্জ দূরে থাক, শহরের অনেক নারীও তা জানে না।’

স্পষ্টবাদী এই জয়িতা এরপরই বললেন, ‘গ্রামগঞ্জে খোঁজখবর নিলে দেখবেন আমার চেয়ে আরও বড় বড় জয়িতা পড়ে আছেন। সরকারি কর্মকর্তারা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। প্রচারের অভাবে, সরকারের এমন একটা উদ্যোগ সম্পর্কে মানুষ জানছেই না। তাই বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন তারা।’

উপজাতি নারীদের প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে গিয়ে ইন্দ্রানী বলেন, ‘চা শ্রমিক, পাত্র এবং ওঁরাও সম্প্রদায়ের নারীরা এখনও নানা ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার। এসব জনগোষ্ঠির মধ্যে এখনও বাল্যবিবাহ অত্যন্ত প্রকট। জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও তারা তেমন একটা সচেতন নয়। পানি এবং স্যানিটেশন সমস্যার কারণে তারা এই সমেয়েও মারাত্মক স্বাস্থ ঝুঁকিতে। অন্যান্যদের ক্ষেত্রে তবু এনজিওগুলো মোটামুটি অবদান রাখার সুযোগ পায়, কিন্তু কোম্পানি আইনের জটিলতায় চা শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা খুবই কঠিন।’

আর মূল¯্রােতধারার নারী উন্নয়নে নানা কুসংস্কার-ফতোয়াবাজিকেই দায়ী করেন তিনি। বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মেয়েরা ফুটবল-ক্রিকেট-ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি খেলায় বহুদুর এগিয়ে গেছে। অথচ সিলেটের অবস্থা দেখুন, আমরা কত পিছিয়ে! সার্বিকভাবে সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে নারীর সমস্যাগুলো আগে সমাধান করতে হবে।’

তার মতে, বাংলাদেশে এখনও সচেতন অবচেতনভাবে নারীকে মানুষ নয়, নারী হিসাবেই দেখা হয়। একটি কন্যা শিশু বড়ই হচ্ছে নারী হিসাবে। সে যে আগে একটা মানুষ, তারপর নারী, এই শিক্ষাটা দেওয়া হচ্ছে না। আর তাই তারা পিছনেই থেকে যাচ্ছে। এ মানসিকতা দ্রুত পরিবর্তন জরুরী। জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, সবাই মিলে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারেন। মোটামুটি সমন্বিত প্রচারণার মাধ্যমে এ ব্যাপারে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি সম্ভব।
 
বাবার মতো ইন্দ্রানীও বাম রাজনীতির সাথে জড়িত। বর্তমানে বালাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেট জেলা শাখার সম্পাদকমন্ডলির সদস্য ও পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য। ইন্দ্রানী আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৩ জানুয়ারি ২০১৮/এমইকে/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন