আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটের জয়িতা-শেষ: সেই আংগুরার ঘরে এখন পাঁচ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০১-০৭ ০০:০১:৩৮

মো. এনামুল কবীর :: নিজে মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও মানবজীবনে এর গুরুত্ব ভালোই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আর তাই সন্তানদের লেখাপড়াকে দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। অভাব অনটনকে পাশ কাটিয়ে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি তাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পেরেছিলেন। তারা আজ তারা কেউ ডাক্তার, কেউ ব্যাংক কর্মকর্তা, কেউ বিসিএস প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

কানাইঘাট উপজেলার দর্পণনগর (পশ্চিম) গ্রামের মরহুম আজাদ উদ্দিনের স্ত্রী আংগুরা বেগম একজন সফল মা। প্রতিকূলতার মধ্যে লড়াই করেও নিজের নয় সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত হতে মূল্যবান অবদান রেখেছেন তিনি। আর তাই বাংলাদেশ সরকার এবার (২০১৭) সিলেট জেলা থেকে তাকে সফল জননী হিসাবে সম্মাননা জানিয়েছেন। এ ক্যাটাগরিতে ‘জয়িতা’ হিসাবে পুরস্কৃত হয়েছেন আংগুরা বেগম।

তার স্বামী আজাদ উদ্দিন এলাকায় একজন সমাজসেবক হিসাবে বিখ্যাত ছিলেন। কন্টাক্টরি পেশায় থাকলেও ৫ ছেলে ও ৪ মেয়ে মেয়ের বিশাল সংসারে অভাব-অনটন লেগেই ছিল। সন্তানদের লোখাপড়ায়ও তার প্রভাব পড়ছে দেখে সক্রিয় হয়েছিলেন তার স্ত্রী আংগুরা বেগম। নিজেদের বসত বাড়িতেই স্বামীকে নিয়ে একটি দোকান খুলে বসেন।

জমে উঠে সেই দোকান। সংসারে বৃদ্ধি পায় আয়। সেই আয়ের টাকায় চলতে থাকে বাচ্চাদের লেখাপড়া। সঙ্গে সংসারের অন্যান্য খরচও। এভাবেই এগুতে থাকে তাদের জীবন। এগুতে থাকে ৯ সন্তানের লেখাপড়াও।

এক সময় আংগুরা বেগমের বড় ছেলে বিলাল উদ্দিন কোরআনে হাফেজ হলেন। মেজো ছেলে মো. কামাল উদ্দিন ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষে বারডেম থেকে ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে সিলেট পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে কর্মকর্ত। তৃতীয় ছেলে মো. বাহার উদ্দিন স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কর্মকর্তা, চতুর্থ ছেলে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের কর্মকর্তা আর পঞ্চম ছেলে মো. রুহুল আমিন ৩৬তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত। আর কি চাই আংগুরা বেগমের!

তার ৪ মেয়ে উচ্চশিক্ষিত না হলেও লেখাপড়া করেছেন তারাও। তাদের কেউ অবশ্য চাকরি-বাকরি করছেন না। তবে স্বামী সন্তান নিয়ে আদর্শ গৃহিণী হিসেবে সুখে শান্তিতেই আছেন।

সত্তরোর্ধ্ব আংগুরা বেগম সফল জননী হিসাবে এবার সিলেট জেলার জয়িতা নির্বাচিত হওয়ার পর তার অনুভূমি জানার চেষ্টা করলেও অসুস্থতা ও গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করার কারণে সম্ভব হয়নি। তবে তার ছেলে ডাক্তার কামাল উদ্দিন মায়ের হয়ে কথা বলেন সিলেটভিউ২৪ডটকম’র এ প্রতিবেদকের সাথে।

শুরুতেই তিনি নারীদের এগিয়ে নিতে সরকারের ‘জয়িতা’ পুরস্কারের ব্যাপক প্রশংসা করেন। এ কার্যক্রম দেশের অনগ্রসর নারীদের এগিয়ে নিতে বিশেষ অবদান রাখবে বলেই তার মত।

এরপর নিজের মা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছোটবেলাটা খুব স্ট্রাগলিং ছিল। অভাব অনটন তো ছিলই। তবু মা ও বাবা লেখাপড়ার গুরুত্ব ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আমরা যাতে পড়াশোনা করে এগিয়ে যেতে পারি সে ব্যাপারে তারা নিরন্তর চেষ্টা করতেন। তাদের সেই চেষ্টার ফলেই আমরা আজ প্রতিষ্ঠিত।’

সংগ্রামরত এমন পরিবারের সদস্যদের প্রতি তার আহবান, ধৈর্য ধরুন। সন্তানদের যথাসাধ্য সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলুন। এর ইতিবাচক ফলাফল একদিন পাবেনই।

সরকার তার মাকে সফল জননী হিসাবে পুরস্কৃত করায় নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ডাক্তার কামাল বলেন, ‘মা তো খুশি হয়েছেনই। আমরাও খুশি। আমার মাকে এ সম্মাননা জানানোর কারণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৫ জানুয়ারি ২০১৮/এমইকে/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন